বরিশাল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:০১ পিএম
বিএম কলেজ শিক্ষার্থীদের সংবাদ সম্মেলন।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিএম কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাতভর দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা সংবাদ সম্মেলন করেছেন বিএম কলেজ শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা ঘটনার সূত্রপাত কী নিয়ে তা তুলে ধরেন সাংবাদিকদের সামনে। পাশাপাশি সাত দফা দাবি পেশ করেন বিএম কলেজ শিক্ষার্থীরা।
আজ বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বিএম কলেজে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা জানান, ‘জানানো হয়, একটি ঘটনার প্রেক্ষিতে একজন গরিব বাসচালককে জিম্মি করে ৬০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। এমনকি তার কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। বাকি ২০ হাজার টাকা আদায়কালে দুইজনকে বটতলা এলাকাবাসী আটক করে। পরে এলাকাবাসীর অনুরোধে তাদের দুইজনকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ঘটনাক্রমে জানা যায়, আটক দুজন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
তারা বলেন, ঘটনাটি বিবেচনা না করে দুইজন চাঁদাবাজের পক্ষ নিয়ে রাত ১২টায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাসযোগে একদল শিক্ষার্থী এসে বটতলায় সাধারণ শিক্ষার্থী এবং পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালায়।
তখন সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানমাল রক্ষার্থে জনসাধারণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কেস স্টাডি না করেই নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয়ের চাঁদাবাজ শিক্ষার্থী দুজনের পক্ষে দেশীয় অস্ত্র এবং ট্রাকভর্তি ইট-পাথর নিয়ে বিএম কলেজে হামলা চালায়।
এই হামলায় বিএম কলেজের শিক্ষার্থী এবং সহযোগিতায় এগিয়ে আসা অন্যান্য কলেজের শিক্ষার্থীরা গুরুতর আহত হন। এসময় সন্ত্রাসীরা বিএম কলেজের পরিবহণ পুলের সব বাস, ড্রাইভারদের রুম, মুসলিম হল, হিন্দু হল এবং মহাত্মা অশ্বীনি কুমার ছাত্রাবাসসহ বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে ভাঙচুর করে।
বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা বলেন, রাত ১টায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কীভাবে বাস নিয়ে অন্য একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রওনা হওয়ার অনুমতি দেয়, তা আমাদের বোধগম্য নয়। আমরা এর জবাব চাই। সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বরিশাল তথা দক্ষিণবঙ্গের জ্ঞানের বাতিঘর শতবর্ষী বিএম কলেজের বনমালী গাঙ্গুলি ছাত্রী হোস্টেলে হামলা করেছে, যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার নয়।
এসময় আশপাশে বিএম কলেজের শিক্ষকদের বাসায়, সাধারণ মানুষদের বাসাবাড়ি এবং দোকানপাটে হামলা, ভাঙচুর এবং লুটপাট করা হয়। এতে করে আতঙ্ক বিরাজ করে কলেজ এলাকায় থাকা সর্বসাধারণের মাঝেও। সংঘর্ষে আহত শিক্ষার্থীরা শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজে স্বাস্থ্যসেবা নিতে গেলে সেখানেও তারা সড়কে বাধা দেন। সংঘর্ষের সময় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ হামলাকারীকে আটক করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তাদের সবাইকে আমরা নিজেরা স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে প্রশাসনিকভাবে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী হাতে হস্তান্তর করি।
সংবাদ সম্মেলনে বিএম কলেজ শিক্ষার্থীরা ৭ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হল-
১. বাস নিয়ে আসা হামলাকারী, বটতলায় চাঁদাবাজি, এর পেছনে মদদদাতা এবং উসকানি প্রদান করা সবার সুষ্ঠু বিচার করা।
২. মধ্যরাতে বিএম কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর অতর্কিত হামলার ফলে যেসব শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন তাদের সম্পূর্ণ চিকিৎসার ব্যয়ভার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে গ্রহণ করা।
৩. বিএম কলেজসহ সকল সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং কোনো সাধারণ শিক্ষার্থীকে কোনোরূপ হয়রানি না করা।
৪. বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বরিশাল শহরে কোনো ধরনের অরাজকতা যাতে সৃষ্টি করতে না পারে সেই বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৫. কলেজ, সব হোস্টেল এবং সাধারণ মানুষের বাসাবাড়ি, দোকানপাট ভাঙচুর এবং লুটপাটের ঘটনার সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণ দেয়া।
৬. হামলায় জড়িত সব সন্ত্রাসীকে অতিদ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা।
৭. ভবিষ্যতে আর কোনো সাধারণ শিক্ষার্থীর ওপর হামলা হলে এর দায়ভার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়কেই নিতে হবে।