টাকা ছাপিয়ে কোনো ব্যাংককে তারল্য সহায়তা দেওয়া হবে না: গভর্নর

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৪৮ পিএম

ড. আহসান এইচ মনসুর। ছবি: সংগৃহীত

ড. আহসান এইচ মনসুর। ছবি: সংগৃহীত

নতুন করে টাকা ছাপিয়ে আর কোনো ব্যাংককে তারল্য সহায়তা দেওয়া হবে না জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, আর্থিক সঙ্কট কাটাতে তিনটি শক্তিশালী টাস্কফোর্স গঠন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত এসব টাস্কফোর্স আগামী এক দুই মাসের মধ্যে কাজ শুরু করতে পারবে বলে আশা করছেন তিনি। 

আজ বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) গভর্নর বলেন, আগামী এক বছরের মধ্যে ব্যাংকিং খাতে একটা স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। তবে, তার ধারণা আর্থিক খাত পুনর্গঠন হতে দুই-তিন বছরের মতো সময় লেগে যাবে।

নানামুখী এসব চ্যালেঞ্জ মাথায় নিয়ে ১৪ আগস্ট কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ পদে বসেন অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর। দায়িত্ব নেওয়ার পর বুধবার প্রথমবারের মতো দেশের সবকটি ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন তিনি।

ব্যাংকার্স সভা নামে পরিচিত এই বৈঠকে নতুন গভর্নর ব্যাংক এমডিদের কী কী দিক নির্দেশনা দিলেন- সাংবাদিকদের তা জানান অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) নেতারা।

এবিবির চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, নতুন গভর্নর দায়িত্ব নেওয়ার পর যেসব সংস্কারমূলক কার্যক্রম নিয়েছেন, এগুলো চালিয়ে রাখার পাশাপাশি আরও গতিশীল করতে তিনটি টাস্কফোর্স গঠন করা হবে। এগুলো হলো- খেলাপি ঋণ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক, বাংলাদেশ ব্যাংক স্ট্রেংথেনিং কার্যক্রম ও লিগ্যাল কার্যক্রম।

সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে অতীতে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কিছু ব্যাংককে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হতো; ব্যাংক বুঝে আইন প্রয়োগ হতো। আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা  হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে নতুন গভর্নর সকল ব্যাংকে একই আইন প্রয়োগ করবেন। যাতে কোনো ব্যাংক বেশি সুবিধা না পায়। আবার কোনো ব্যাংক অবহেলিত না থাকে।

তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ মাত্রাতিরিক্তভাবে বেড়েছে। খেলাপি ঋণ কমাতে আলোচনা হয় বৈঠকে। গভর্নর বলেছেন, খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে আইনি কাঠামোর পাশাপাশি, জনবল ও দক্ষতার দিকে মনোযোগ দেওয়া হবে।

বৈঠকে ডলারের বিনিময় মূল্য ১২০ টাকার মধ্যে রাখার নির্দেশনা দেন গভর্নর। কার্ব মার্কেটেও ১২০ টাকার মধ্যে রাখতে হবে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো গভর্নরের নির্দেশনায় সম্মতি দিয়েছে বলে জানান এবিবির চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন।

টাস্কফোর্স গঠন ছাড়াও, দুর্বল ব্যাংকগুলোর তারল্য সঙ্কট কীভাবে কাটানো যেতে পারে সেটি বাতলে দেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।

সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আট ব্যাংক থেকে নানা উপায়ে টাকা বের করে লুট করা হয়েছে। বেশি সুদের আশায় জেনেশুনেই এসব ব্যাংকে টাকা রেখেছেন আমানতকারীরা। তবে আমানতকারীদের স্বার্থ দেখবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। লাইন ধরে সবাই যেন এসব ব্যাংকে না যান।

সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর বলেন, নতুন করে টাকা ছাপিয়ে আর কোনো ব্যাংককে তারল্য সহায়তা দেওয়া হবে না। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্যারান্টির বিপরীতে আন্তঃব্যাংক ধারের মাধ্যমে এসব ব্যাংক টাকা পাবে। সেখান থেকে অল্প অল্প করে গ্রাহকদের ফেরত দেবে। এছাড়া গ্রাহকদের দেশে থাকা সম্পদ বিক্রি ও পাচার করা অর্থ ফেরত এনে টাকা ফেরত দেওয়া হবে। পাচার অর্থ উদ্ধারে আন্তর্জাতিক সংস্থার সহায়তা নেওয়া হচ্ছে।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, দেশ থেকে আট ব্যাংকের মাধ্যমে প্রচুর টাকা পাচার হয়েছে। এতে এসব ব্যাংকগুলোয় তারল্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। তারল্য পুরো সাপোর্ট দিতে হলে দুই লাখ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক আপাতত টাকা ছাপিয়ে দেবে না। কেননা টাকা ছাপালে বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বেড়ে মূল্যস্ফীতি বহুগুণে বেড়ে যাবে।

গভর্নর বলেন, আমানতকারীদের অনুরোধ করবো, একসঙ্গে টাকা উত্তোলনের জন্য লাইন ধরবেন না। পারিবারিক প্রয়োজন মেটাতে যেটুকু প্রয়োজন উত্তোলন করুন। আমাদের কিছুটা সময় দেন। আমরা আশা করি ব্যাংকগুলো ঘুরে দাঁড়াবে। একটা বিষয় পরিষ্কার করতে চাই যে, এই আট ব্যাংকের কারণে পুরো ব্যাংকখাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। শিগগিরই এ খাত ঘুরে দাঁড়াবে।

দ্রুততম সময়ে খেলাপিদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে সেখান থেকে ব্যাংকের ক্ষতিপূরণ সমন্বয় করা হবে বলেও জানান গভর্নর। তিনি বলেন, নতুন বোর্ডই দেখবে খেলাপিতে কারা জড়িত। এখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক হস্তক্ষেপ করবে না।

এস আলমের ৩৩শ’ কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতির তথ্য না পাওয়ায় সপ্তমবারের মতো বাংলাদেশ ব্যাংককে দুদক চিঠি দিয়েছে। এই বিষয়টি গভর্নরের দৃষ্টিগোচর করা হলে তিনি বলেন, এস আলমকে দুদক নয়, বাংলাদেশ ব্যাংকই ধরবে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh