ঢাবির গণত্রাণ কর্মসূচি সমাপ্ত, রেকর্ড পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ

ঢাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১৯ পিএম

টিএসসিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গণত্রাণ কর্মসূচীর সঙ্গে যুক্ত সমন্বয়করা। ছবি: ঢাবি প্রতিনিধি

টিএসসিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গণত্রাণ কর্মসূচীর সঙ্গে যুক্ত সমন্বয়করা। ছবি: ঢাবি প্রতিনিধি

বানভাসি মানুষদের পাশে দাঁড়াতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণত্রাণ কর্মসূচির ১৪ দিনে নগদ ও ব্যাংকিং মাধ্যমে ১১ কোটি ১০ লাখ ১৩ হাজার ৫৬৯ টাকা অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে। সংগ্রহীত এই অর্থের ১ কোটি ৭৫ লাখ ১২ হাজার ৭৯৪ টাকা বিভিন্ন খাতে ব্যয় হিসেবে দেখানো হয়েছে। এছাড়া বর্তমানে ফান্ডে রয়েছে ৯ কোটি ৩৫ লাখ ৭৭৫ টাকা। ফান্ডের এই অর্থ দিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবেন বলে জানিয়েছেন তারা। তবে কিভাবে এই পুনর্বাসন হবে তা নিয়ে এখনো পরিকল্পনা চলছে বলে জানিয়েছেন তারা।

গতকাল বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন তারা।

সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও গণত্রাণ কর্মসূচীর সঙ্গে যুক্ত রেজওয়ান আহমেদ রিফাত বলেন, গত ২২ আগস্ট থেকে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নগদ অর্থ, মোবাইল ব্যাংকিং এবং ব্যাংকিং মাধ্যমে ১১ কোটি ১০ লাখ ১৩ হাজার ৫৬৯ টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া যেই অর্থ ফান্ডে রয়েছে, এই টাকা আমাদের সমন্বয়ক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের দ্বারা পরিচালিত জনতা এবং সোনালি ব্যাংকের একাউন্টে জমা রাখা হয়েছে। জমাকৃত এই অর্থ আমরা আগামীতে বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসনে ব্যবহার করার পরিকল্পনা করছি।

পুনর্বাসনে পরিকল্পনা প্রসঙ্গে আরেক আব্দুল কাদের বলেন, সরকারের ত্রাণ মন্ত্রণালয় কিংবা সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করার ইচ্ছে রয়েছে। তবে সকলের পরামর্শ নিয়ে আমরা পুনর্বাসনের কাজটি করতে চাই। সেক্ষেত্রে সকলের মতামত ও পরামর্শ আশা করছি।

গত ২২ আগস্ট থেকে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ১৯১টি ট্রাক বন্যা কবলিত অঞ্চলে পাঠানো হয়। এছাড়া বেসরকারি এবং বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারের মাধ্যমে দুর্গম অঞ্চলগুলোতেও ওই সময়ে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানো হয়। গত ২৮ আগস্ট থেকে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো শুরু হয় গণরান্না কর্মসূচি। যার ফলে যুক্ত হয় চাল-ডালের পাঠানোর কার্যক্রম। পুরো এই কার্যক্রমে প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার থেকে ১২শ এর অধিক স্বেচ্ছাসেবী অংশ নিয়েছিলেন, বলে ওই সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

সংগ্রহীত অর্থ থেকে ১ কোটি ৭৫ লাখ ১২ হাজার ৭৯৪ টাকা বিভিন্ন খাতে ব্যয় দেখানো হয়েছে। যেখানে, ২৫ লাখ ৭২ হাজার ৮০০ টাকার চিনি; ১৬ লাখ ৮৭ হাজার ৪০০ টাকার চিড়া; ১ লাখ ৭৬ হাজার টাকার পানি; ৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকার কয়েল; ১ হাজার ৬২০ টাকার কাটার; ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার ডাল; ২৪ লাখ ৭২০ টাকার ড্রাই কেক; ১ লাখ ১ হাজার ২৩০ টাকার ফিটকিরি এবং অন্যান্য; ৭ লাখ ৫৮ হাজার ৪২০ টাকার গণ রান্না প্রথম ব্যাচ; ৯ লাখ ৪০ হাজার ৬৫৫ টাকার সাবান, শ্যাম্পু, শিশুর খাদ্য এবং অন্যান্য, ৮০ হাজার ৮৬০ টাকার ব্যাগ; ২ লাখ ৮৩ হাজার ৪৮০ টাকার বস্তা, ক্যারারেট এবং মোমবাতি; ৮ লাখ ৯৬ হাজার টাকার নগদ সহায়তা; ১ লাখ ৩০ হাজার ৫০০ টাকার চাল; ১২ লাখ ১৩ হাজার ৩০ টাকার খাবার; ১০ লাখ ৪৯ হাজার ৯২৮ টাকার গুড়; ১৪ লাখ ১১ হাজার ৫০৪ টাকার মুড়ি; ৮৭ হাজার টাকার তেল; ৫০ হাজার ৬০২ টাকার পেঁয়াজ; ৩ লাখ ৩৮ হাজার ৮০০ টাকার প্যাকেট বিস্কুট।

এছাড়া ২ লাখ ৪৪ হাজার ২৫৫ টাকার পলি; ৩ লাখ ৪ হাজার ৭৮৪ টাকার বস্তা, দড়ি এবং স্টেশনারি; ৯ হাজার ৭৫১ টাকার সুতলি ও স্টেশনারি; ৩৯ লাখ ২৯ হাজার ৩১০ টাকার খেজুর; ৪৪ হাজার টাকার শ্রমিক ও স্টেশনারি; ৬৪ হাজার ৭৭০ টাকার স্টেশনারি; ৭৭ হাজার ৬০০ টাকার পরিবহন এবং শ্রম এবং ৩৯ হাজার ৬২০ টাকার হাতুড়ি; হ্যান্ড মাইক, আইডি কার্ড, ১ লাখ ১২ হাজার টাকার টর্চ এবং লাইটার; ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার মেডিকেল ক্যাম্প।

উল্লেখ্য, গত ২১ আগস্ট রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে বন্যাকবলিত জেলায় রেসকিউ অপারেশন এবং ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচি চালু এবং পাবলিক ফান্ড রেইজিং উদ্যোগ শুরুর কথা জানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার। এরপর থেকেই শুরু হয় নগদ অর্থ ও ত্রাণ সংগ্রহ। শুরুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি কেন্দ্রিক ওই ত্রাণ সংগ্রহের কর্মসূচি অব্যাহত থাকলে, পরবর্তীতে জায়গা সংকুলনের কারণে সেখান থেকে তার সরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে স্থানান্তর করা হয়। সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) বন্ধ হয় নগদ অর্থ সংগ্রহ, যদিও ব্যাংকিং মাধ্যমে এখনো অর্থ সংগ্রহের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh