শাহেরীন আরাফাত
প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:১৩ পিএম
গৌতম আদানি। ছবি: সংগৃহীত
২৯ আগস্ট ‘হুরুন ইন্ডিয়া রিচ লিস্ট ২০২৪’ প্রকাশিত হয়। এতে দেখা গেছে, গৌতম আদানির মোট সম্পদ এখন ১১ লাখ ৬০ হাজার কোটি রুপি। হুরুনের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন মুকেশ আম্বানি। তার সম্পদের পরিমাণ ১০ লাখ ১৪ হাজার কোটি রুপি। গত এক বছরে আদানি পরিবারের সম্পদ বেড়েছে ৯৫ শতাংশ।
২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিনিয়োগ বিষয়ক গবেষণা সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ এক প্রতিবেদনে আদানি গ্রুপের প্রতারণার চিত্র তুলে ধরে। চাঞ্চল্যকর ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় এক দশক ধরে শেয়ার কারসাজি এবং আর্থিক লেনদেনে প্রতারণা চালিয়ে আসছে আদানি গ্রুপ। কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দর বহু গুণ বাড়িয়ে এ গ্রুপ বিশাল সম্পদ গড়েছে। গত কয়েক বছরে আদানি গ্রুপের কোম্পানির শেয়ার ৫০০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে।
পুঁজিবাজারে আদানি গ্রুপের ‘শর্ট সেলিং’-এর অভিযোগ করা হয় হিন্ডেনবার্গের প্রতিবেদনে। ‘শর্ট সেলিং’ হলো একটি কৌশল, যেখানে একজন বিনিয়োগকারী কোনো কোম্পানির দর কমতে পারে এমন ধারণা থেকে শেয়ার বিক্রি করে দেয়, যাতে পরে কম দামে কিনে নেওয়া যায়। আদানি গ্রুপের অধীনে সাতটি কোম্পানি রয়েছে, যেগুলো পণ্য ব্যবসা, বিমানবন্দর, বিদ্যুৎ, বন্দর ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাতে ব্যবসা করছে। অনেক ভারতীয় ব্যাংক এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বীমা সংস্থা এ গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত কোম্পানিগুলোতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে বা ঋণ দিয়েছে। হিন্ডেনবার্গের ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পর হু-হু করে তার বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের দরপতন শুরু হয়। এশিয়ার শীর্ষ ধনীর মুকুট হারান গৌতম আদানি।
প্রতিবেদন প্রকাশের পর শেয়ারবাজারে বড় ধরনের পতনের মুখে পড়ে আদানি গ্রুপ। আদানির শেয়ারদর অর্ধেকে নেমে যায়। আদানি গ্রুপের বাজার মূলধন ১৫০ বিলিয়ন ডলারের বেশি হ্রাস পায়। তা সত্ত্বেও ওই বছর আদানি পরিবারের অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে ৫ লাখ ৬৫ হাজার ৫০৩ কোটি রুপি। তবে চলতি বছরের মে মাস নাগাদ ঘুরে দাঁড়ায় তারা। গত জুলাই মাসের হিসাব অনুযায়ী, আগের বছরের তুলনায় তাদের সম্পদ ৯৫ শতাংশ বেড়ে ১১ কোটি ৬১ হাজার ৮০০ কোটি রুপি হয়েছে। গুজরাটি এ পরিবার ২০২০ সালে হুরুনের তালিকায় চতুর্থ স্থানে ছিল। এরপর শীর্ষ স্থানে পৌঁছতে পৌঁছতে পরিবারটির সম্পদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে আট গুণ। আদানি পরিবারের পর তালিকার শীর্ষে থাকা মুকেশ আম্বানি পরিবারের সম্পদের পরিমাণ ১০ লাখ ১৪ হাজার ৭০০ কোটি রুপি। এক বছরে আম্বানিদের সম্পদ বেড়েছে ২৫ শতাংশ।
হিন্ডেনবার্গের জানুয়ারি ২০২৩-এর প্রতিবেদনে দুর্নীতির তথ্য প্রকাশের ১৮ মাস পর ফের এক প্রতিবেদনে গত ১০ আগস্ট আদানির আরেক প্রতারণার তথ্য তুলে ধরে। ওই প্রতিবেদনে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ হুইসেলব্লোয়ার তথ্যের ভিত্তিতে দেখিয়েছে, বারমুডাভিত্তিক গ্লোবাল অপর্চুনিটিজ ফান্ড, যা আদানি গ্রুপের সঙ্গে সংযুক্ত, সেখানে ভারতের পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়ার (সেবি) চেয়ারম্যান মাধবী ও তার স্বামী ২০১৫ সালে বিনিয়োগ করেছেন।
আদানি গত পাঁচ বছরে ভারতের শীর্ষ ১০ ধনীর মধ্যে সর্বোচ্চ সম্পদ বৃদ্ধির রেকর্ড করেছেন। এ সময় তিনি আয় করেছেন ১০ লাখ ২১ হাজার ৬০০ কোটি রুপি। গত এক বছরে আদানি গ্রুপের সব কোম্পানির শেয়ারে উল্লেখযোগ্য মুনাফার প্রভাব পড়েছে সম্পদের মূল্যে। আদানি পোর্টসের শেয়ারদর বেড়েছে ৯৮ শতাংশ। বন্দরের কার্যক্রম হালনাগাদ করার পাশাপাশি নতুন বন্দর ও কনটেইনার টার্মিনালের অধিগ্রহণ এ খাতের গ্রুপটির প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়িয়েছে। এ ছাড়া জ্বালানিভিত্তিক কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর গড়ে ৭৬ শতাংশ বেড়েছে।
হুরুন ইন্ডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান গবেষক আনাস রহমান জুনায়েদ জানান, ভারত গত বছর প্রতি পাঁচ দিনে একজন নতুন বিলিয়নেয়ার তৈরি করেছে। এশিয়ার মধ্যে সম্পদ তৈরির ইঞ্জিন হয়ে উঠছে ভারত। গত বছর চীনে বিলিয়নেয়ারের সংখ্যা ২৫ শতাংশ কমেছে, ভারতে বেড়েছে ২৯ শতাংশ। ভারতে বর্তমানে ৩৩৪ জন বিলিয়নেয়ার রয়েছেন, যা গত বছরের তুলনায় ৭৫ জন বেশি। হুরুনের তালিকায় আরও অনেকের মধ্যে রয়েছেন ৫৮ বছর বয়সী বলিউড তারকা শাহরুখ খান। তার সম্পত্তির পরিমাণ ৭ হাজার ৩০০ কোটি রুপি। আইপিএলের কলকাতা নাইট রাইডার্স ও রেড চিলিজ সংস্থার মালিক তিনি।