অবন্তিকা দত্ত
প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:০৫ পিএম
নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ। ছবি: সংগৃহীত
জীবনের চলতি পথে কত মানুষের সংস্পর্শে আসি। পরিবারের ছত্রছায়া থেকে বের হয়ে যেদিন থেকে সমাজে নিজেদের স্বাধীন পদচারণ শুরু হয়, সেদিন থেকেই একজন ‘সামাজিক মানুষ’ হয়ে ওঠার জন্য নানা পন্থা অনুসরণ করতে হয়।
তবে পারস্পরিক এই যোগাযোগের জন্য নিজের অনুভূতি প্রকাশের যে ভাষা ব্যবহার করি, সেটাই আমাদের অবস্থানকে সমাজে নির্দিষ্ট করে দেওয়ার প্রধান নিয়ামক। শুধু কথা বলার ভঙ্গি বা ব্যবহার দিয়েই মানুষের মনে নিজের একটি শক্তিশালী জায়গা করে নিতে পারেন, তবে সেটা ধনাত্মক হবে না ঋণাত্মক- সেটা কিন্তু আপনার ওপরেই।
কিন্তু আজকাল এই প্রতিযোগিতার যুগে, শহুরে যান্ত্রিক বাস্তবতায়, মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কগুলো যেন শুধু স্বার্থ হাসিল আর প্রয়োজনীয়তার কাঠিন্যতে পরিবেষ্টিত হয়ে গেছে। নিজের অহমিকা আর স্ট্যাটাস রক্ষা করতে গিয়ে পারস্পরিক সৌহার্দই বোধহয় ভুলতে বসেছি। ‘ইগো’ দিয়ে আমাদের পুরো শরীর-মন যেন আবৃত। আন্তরিকভাবে মন খুলে কথা বলা, বিনয় প্রকাশ করে নতভাবে কথা বলা, যে কোনো মানুষকে আর্থিক অবস্থা বা পেশা, জাত, ধর্ম, বর্ণ দিয়ে বিচার না করে নির্বিশেষে শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করাকে যেন সমাজে এখন মানুষের দুর্বলতা ভাবা হয়। যে যত অহংকার দেখিয়ে, ইগো দেখিয়ে নিজের দাম বাড়িয়ে অন্যের সঙ্গে কথা বলতে পারবে, মানুষ তার প্রতিই তত ভয়-মিশ্রিত সম্মান প্রদর্শন করবে। অথচ আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, বাস্তবতা ঠিক তার উল্টোই। এ রকম মানুষকে বাহ্যিকভাবে সকলে যতই ভীতি ও সম্মান দেখাক, মনে মনে কেউই তাদের শ্রদ্ধা করে না।
প্রকৃতপক্ষে মানুষ দিনশেষে এটুকুই মনে রাখে যে তার সঙ্গে আপনি কেমন ব্যবহার করেছিলেন। বহু মূল্য উপহারের চেয়েও আন্তরিক মধুর ব্যবহার বেশি আকর্ষণীয় যে কোনো মানুষের কাছে। বর্তমানে সমাজ অনেক বেশি যান্ত্রিক এবং প্রতিযোগিতায় পূর্ণ। সবাই শুধু সাফল্যের পেছনে ছুটে চলছে। অথচ কারও একটু ফুরসত নেই ক্ষণিকের বিশ্রাম নিয়ে নিজের পরিবার এবং কাছের মানুষগুলোর প্রতি দৃষ্টি দেওয়ার। সবাই শুধু ভয়ে থাকে যে এই হয়তো আমার সবকিছুর দখল নিয়ে নেবে কেউ, এত কষ্টে অর্জিত সাফল্য হাতছাড়া হয়ে যাবে। প্রতিনিয়ত মানুষের প্রতি জমে থাকা অবিশ্বাস, ঘৃণা, আক্রোশ আজ যেন মানুষের সঙ্গে আন্তরিকভাবে কথা বলার ক্ষেত্রেই বিশাল এক বাধা-নিষেধ আরোপ করে রেখেছে। অথচ যখন ব্যস্ততা ফুরিয়ে যায়, যখন জীবনের সায়াহ্নে এসে হৃদয়ের সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসগুলোর সন্ধানে আমরা হাতড়াতে থাকি, তখন দেখি যে এই ‘ইগো’ সবচেয়ে অমূল্য জিনিসগুলোই আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে।
জীবন এত চাকচিক্যে পূর্ণ, অথচ ভালোবাসা, স্নেহ, আশীর্বাদ- এগুলোই আমাদের জীবনে অনুপস্থিত। সেজন্য সবারই উচিত যান্ত্রিক জীবন থেকে খানিক বিশ্রাম নিয়ে নিজের মনের ডাকে সাড়া দেওয়া। আপনজনদের সঙ্গে মধুর সময় কাটানো, সকল অহমিকা ঝেড়ে ফেলে মনের সব উষ্ণতা দিয়ে সকলকে কাছে টেনে নেওয়া। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে হিংসার বিষ না ঢুকিয়ে সবাইকে ভালোবাসতে শেখানো, সবাইকে নিয়ে বাঁচতে শেখানো।