লোকমান হাওলাদার
প্রকাশ: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৩০ এএম | আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৩ এএম
প্রতীকী ছবি
মা-বাবার চাওয়া থাকে সন্তান যেন ভালো থাকে। তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন সন্তানকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। তবে বড় হওয়ার পর অনেক সন্তান মা-বাবার প্রতি তাদের দায়িত্ব পালন করেন না। সন্তান তার মা-বাবার ভরণ-পোষণ না দিলে সহজেই যেন আইনের আশ্রয় নিয়ে সমাধান পান এবং বিবাহবিচ্ছেদ, দাম্পত্য সম্পর্ক পুনরুদ্ধার, দেনমোহর, অভিভাবকত্ব- এই পাঁচটি বিষয়ে মামলা পরিচালনার উদ্দেশ্যেই স্থাপন করা হয় পারিবারিক আদালত। কারণ প্রথাগত দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালতে বিচার প্রার্থী পারিবারিক বিরোধের প্রতিকার কাঙ্ক্ষিত সময়ে না পাওয়ায় একটি মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ ১৯৮৫-এর অধীন পারিবারিক আদালত প্রতিষ্ঠিত হয়।
নারী ও শিশুর অধিকার প্রতিষ্ঠায় পারিবারিক আদালতের গুরুত্ব অপরিসীম। রাষ্ট্রপতির এক অধ্যাদেশ বলে ১৯৮৫ সালে পারিবারিক আদালত প্রতিষ্ঠিত হয়। পারিবারিক বিষয়াদি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য একটি স্থানীয় ও পৃথক বিচারব্যবস্থার প্রয়োজন থেকেই এই পারিবারিক আদালত প্রতিষ্ঠা। এই অধ্যাদেশ প্রণয়ন, ঘোষণা ও প্রবর্তনের মাধ্যমে নারী সমাজের দাবি কিছুটা হলেও বাস্তবায়িত ও কার্যকর হয়েছে।
পারিবারিক কিছু জটিল সমস্যা এমন আকার ধারণ করে যে, এর সমাধান আদালতের আশ্রয় ছাড়া সম্ভব নয়। দেশের প্রচলিত জটিল এবং ব্যয়বহুল, সময়সাপেক্ষ বিচারব্যবস্থায় এসব সমস্যার সমাধান পাওয়া প্রায় অসম্ভব। সেখানে নারীর জন্য আলাদা কোনো বিচারব্যবস্থা ছিল না। তাই এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে সমস্যাগুলো নিরসনের লক্ষ্যে অল্প সময় ও খরচে এবং সংশ্লিষ্ট পদ্ধতিতে নারীর পারিবারিক বিষয়াদি নিষ্পত্তির জন্য একটি স্থায়ী ও পৃথক বিচারব্যবস্থা প্রবর্তন করাই এই অধ্যাদেশের মূল উদ্দেশ্য। এখানে স্বামী-স্ত্রী, মুসলিম-অমুসলিম সব ধর্মের পারিবারিক বিরোধ নিষ্পত্তির ও দাম্পত্য অধিকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ আছে।
সম্প্রতি সামরিক সরকারের আমলের অধ্যাদেশটি সামান্য পরিবর্তন করে, এর স্থলে পারিবারিক আদালত আইন, ২০২২-এর খসড়া অনুমোদন করেছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রস্তাবিত আইনে এ ধরনের মামলায় আপিল আদালতে সরকার শুধু জেলা বিচারকদের আদালতকেই নয়, বরং জেলা আদালতের সমমানের অন্য জেলা বিচারকদের আদালতকেও বিবেচনা করতে পারবে।
আইনটি রাঙামাটি, পার্বত্য বান্দরবান ও পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলা ছাড়া সমগ্র বাংলাদেশে প্রযোজ্য হবে মর্মে উল্লেখ করা হয়। কারণ তিন পার্বত্য জেলায় এখনো পারিবারিক আদালত সৃষ্টি হয়নি। ফলে সেখানে যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মামলা করে দেওয়ানি কার্যবিধি অনুসরণ করা হয়। স্পেশাল ল-এর সুযোগ-সুবিধা থেকে তিন পার্বত্যবাসী এখনো বঞ্চিত। তবে তিন পার্বত্য জেলায় পৃথক পারিবারিক আদালত স্থাপন করা অত্যন্ত জরুরি। সংশ্লিষ্ট সবাই বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে অনুধাবন করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে এগিয়ে আসবেন।
প্রস্তাবিত খসড়া আইনের ৯ ধারায় মামলার যেকোনো পর্যায়ে আরজি জবাব সংশোধনের বিধান রাখা হয়েছে। এতে এই আইনে আরো ভালো সফলতা আসবে। এ ছাড়া পারিবারিক আদালতে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাও রয়েছে। মামলা চলাকালীন যেকোনো অন্তর্বর্তীকালীন আদেশও দিতে পারেন পারিবারিক আদালত। পারিবারিক আদালতের এখতিয়ার- ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের বিধানাবলি সাপেক্ষে পারিবারিক আদালতের পাঁচটি লিখিত বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত বা ওই বিষয়গুলো হতে উদ্ভূত মামলা গ্রহণ, বিচার এবং নিষ্পত্তি করার ও অন্যান্য এখতিয়ার থাকবে। বিষয়গুলো হচ্ছে বিবাহবিচ্ছেদ, দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধার, দেনমোহর, খোরপোশ, শিশুসন্তানের অভিভাবকত্ব, তত্ত্বাবধান ও খোরপোশ। এই বিষয়গুলোর সঙ্গে সম্পর্কিত দাম্পত্য অধিকার ও সম্পর্ক থেকে উদ্ভূত কোনো মামলা অন্য কোনো আদালতে বিচারের আওতাভুক্ত হবে।
পূর্বে অভিভাবক ও প্রতিপাল্য আইনের (গার্ডিয়ান অ্যান্ড ওয়ার্ডস অ্যাক্ট) বিষয়গুলো জেলা জজ নিষ্পত্তি করতেন। বর্তমানে এই বিষয় পারিবারিক আদালতের এখতিয়ারে রয়েছে। প্রস্তাবিত খসড়া আইন বাস্তবায়ন হলে নারী ও শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।