উচ্চশিক্ষার জন্য ফ্রান্স যেতে যা প্রয়োজন

মীর ইফতেখার উদ্দিন ফাহাদ

প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৪৩ এএম

কলেজ ডি ফ্রান্স। ছবি: সংগৃহীত

কলেজ ডি ফ্রান্স। ছবি: সংগৃহীত

কয়েক দশক ধরে বিশ্বের প্রথম সারির বিদ্যাপীঠ রয়েছে ইউরোপের দেশগুলোতে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ৯৯ শতাংশ শিক্ষার হার নিয়ে সগর্বে নিজের অবস্থান জানান দিচ্ছে ইউরোপের অন্যতম শৈল্পিক দেশ ফ্রান্স। বিশ্বের নানা প্রান্তের শিক্ষার্থীদের মতো বাংলাদেশের মেধাবীদেরও স্বাগত জানাচ্ছে দেশটি। ফ্রান্সের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদন পদ্ধতি, অধ্যয়ন খরচ, বৃত্তিসহ উচ্চশিক্ষার সুবিধাগুলো হলো-

সেরা বিষয়

পরিবেশ, ব্যবস্থাপনা, ব্যবসায় প্রশাসন, প্রকৌশল, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থায়ন, কৃষিবিদ্যা, জীববিদ্যা, কলা, সংস্কৃতি, নকশা ও ফ্যাশন।

আবেদনের উপায়

স্নাতকে ভর্তির জন্য রয়েছে ভিন্ন ধারার আবেদনের পদ্ধতি। একটি হচ্ছে পারকোর্সআপ। এটি মূলত একটি ফরাসি প্ল্যাটফর্ম, যার মাধ্যমে স্নাতকের প্রথম বছরে শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন করা হয়। এখানে শিক্ষার্থীদের বাছাই করা হয় ‘ফিলিয়ার সিলেক্টিভ’ পদ্ধতিতে, যেখানে মূলত নির্দিষ্ট কোর্সে পড়ার জন্য বাছাই করা হয়। এর আবেদনের সময়কাল ডিসেম্বরের দিকে শুরু হয়ে পরের বছরের জুলাই পর্যন্ত থাকে।

ডিমান্ড ডি অ্যাডমিশন প্রিল্যাবল (ডিএপি) পদ্ধতিটি শুধু বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য। স্নাতকের প্রথম বর্ষে ভর্তির জন্য প্রত্যেককে অবশ্যই এই ডিএপি পাস করতে হয়। আবেদন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে কোনো কোনো প্রগ্রামের জন্য শিক্ষার্থীকে এখানে মান যাচাইয়ের পরীক্ষা দিতে হয়। এতে অংশগ্রহণ করতে ফরাসি দূতাবাসের সাংস্কৃতিক কর্ম বিভাগের কাছে একটি অনুরোধ ফাইল করতে হয়। এ ছাড়া ক্যাম্পাস ফ্রান্সের (https://www.bangladesh.campusfrance.org/en) মাধ্যমে অনলাইনে আবেদন করা যায়। 

সাধারণত আবেদন জমা দেওয়ার চার থেকে আট সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়। প্রাথমিকভাবে উত্তীর্ণ হলে এ সময় আবেদনকারী প্রার্থীকে একটি অফার লেটার দেওয়া হয়। কিছু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় নথি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রার্থীদের ফলাফলের কথা জানিয়ে দেয়। এই পদ্ধতিকে বলা হয় ‘রোলিং ভর্তি’। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলো বেশ কয়েক মাস অপেক্ষা করে সব প্রার্থীর ফলাফল একসঙ্গে জানায়।

ভর্তি আবেদনের জন্য কাগজপত্র

সম্পূর্ণ আবেদনপত্র, ক্যাম্পাস ফ্রান্স থেকে একটি অনুমোদন, পাসপোর্টের কপি, আইডি ফটো বা ড্রাইভার লাইসেন্স, পাসপোর্ট সাইজের ছবি, একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট ও প্রশংসাপত্র, মেডিক্যাল ক্লিয়ারেন্স, ফরাসি ও ইংরেজি ভাষার দক্ষতা সনদ, ফ্রান্সে প্রার্থীর থাকার জন্য পর্যাপ্ত আর্থিক সংস্থানের প্রমাণ (প্রতি মাসে সর্বনিম্ন ৬১৫ ইউরো বা ৭৮ হাজার ৪৪৩ টাকা), টিউশন ও বাসস্থান ফি প্রদানের প্রমাণ, স্পন্সর করা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে একটি স্বীকারোক্তি পত্র ও বৃত্তি থাকলে বা কোনো ফরাসি শিক্ষামূলক প্রগ্রামের সঙ্গে সংযুক্ত থাকার কারণে অর্থছাড় পেলে তার প্রমাণ।

মাস্টার্স ও পিএইচডির জন্য আলাদাভাবে প্রয়োজন রেফারেন্স লেটার, স্টেটমেন্ট অব পারপাস, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদ, সিভি ও কভার লেটার।

ভাষা দক্ষতার প্রমাণ

ভাষা দক্ষতার সনদ (ফরাসি কোর্স হলে ফরাসি ভাষার সনদ, অন্যথায় টোয়েফল বা আইইএলটিএসের নথিপত্র)।

দরকারি নথিপত্র

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিবাচক ফলাফলের জন্য প্রথম কাজ হচ্ছে স্টুডেন্ট ভিসার আবেদন। এ সময় যে কাগজপত্র দরকার, তা হলো ভিসা আবেদন, পাসপোর্ট কপি, সাদা পটভূমিতে তোলা ২ বাই ২ ইঞ্চি সাইজের ছবি, পূর্ববর্তী সব একাডেমিক সার্টিফিকেট, রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও মার্কশিট, ফরাসি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ভর্তির অফার লেটার। এখানে অধ্যয়নের প্রোগ্রাম, অধ্যয়নের শুরু ও শেষ তারিখ উল্লেখপূর্বক বিশদ বিবরণ থাকবে। ফ্রান্সে থাকার জন্য পর্যাপ্ত আর্থিক সংস্থানের প্রমাণ। ব্যাংক স্টেটমেন্ট, গ্যারান্টরের চিঠি, বৃত্তি বা অনুদান থেকে অর্থায়নের স্বীকৃতির একটি প্রশংসাপত্র, চিকিৎসা বিমার প্রমাণ (সর্বনিম্ন ৩০ হাজার ইউরো), বাসস্থানের প্রমাণ- এটি হতে পারে স্টুডেন্ট হাউজিং কনফার্মেশন, বোর্ড ও লজিংয়ের সার্টিফিকেট অথবা বন্ধু বা আত্মীয়দের সঙ্গে থাকলে তার একটি প্রত্যয়নপত্র। ভাষা দক্ষতার সনদ (ফরাসি কোর্স হলে ফরাসি ভাষার সনদ, অন্যথায় টোয়েফল বা আইইএলটিএসের নথিপত্র)। এখানে পাসপোর্ট ও ছবি ছাড়া প্রতিটি নথির সঙ্গে মূল কপি দিতে হবে। 

সম্ভাব্য খরচ

লাইসেন্স (স্নাতক) স্তরে বার্ষিক ১৭৫ ইউরো, যা বাংলাদেশি টাকায় ২২ হাজার ৩২১ টাকা (১ ইউরো = ১২৭ দশমিক ৫৫ টাকা ধরে)। মাস্টার লেভেলে বার্ষিক ২৫০ ইউরো (৩১ হাজার ৮৮৮ টাকা)। ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলে বার্ষিক ৬১৮ ইউরো (৭৮ হাজার ৮২৫ টাকা)। ডক্টরাল পর্যায়ে বার্ষিক ৩৯১ ইউরো (৪৯ হাজার ৮৭২ টাকা)।

ফরাসি উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা মন্ত্রণালয়ের অধীন কোর্সগুলোতে সরকার শিক্ষার্থীদের অধ্যয়নের মোট খরচের দুই-তৃতীয়াংশ ব্যয়ভার বহন করে। এখানে রেজিস্ট্রেশন ফি আলাদা দিতে হয়। লাইসেন্স (স্নাতক) স্তরে বছর শেষে দুই হাজার ৮৫০ ইউরো (তিন লাখ ৬৩ হাজার ৫১৩ টাকা)। মাস্টার পর্যায়ে বছর শেষে তিন হাজার ৮৭৯ ইউরো (চার লাখ ৯৪ হাজার ৪৬০ টাকা)। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বিশেষ করে বেসরকারি ব্যবসায়িক স্কুলে টিউশন ফি প্রতিবছর ছয় হাজার থেকে ১৮ হাজার ইউরো। এর পরিমাণ প্রায় সাত লাখ ৬৫ হাজার ২৯০ থেকে ২২ লাখ ৯৫ হাজার ৮৬৯ টাকার সমান। বেশির ভাগ ফরাসি প্রতিষ্ঠানে অগ্রিম শুধু প্রথম বছরের ফি দিতে হয়। টেলিগ্রাফিক ট্রান্সফার (টিটি) বা ডিরেক্ট ডেবিটের (ডিডি) মাধ্যমে এই ফি দেওয়া যেতে পারে। টিউশন ফি পাওয়ার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্তি রসিদ দেওয়া হবে। এ রসিদ সংযুক্ত করতে হবে স্টুডেন্ট ভিসার আবেদন জমা দেওয়ার সময়।

বৃত্তির সুবিধা

প্রতি বছর ফ্রান্স সরকার বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশের শিক্ষার্থীদের বিপুলসংখ্যক বৃত্তি দিয়ে থাকে। তা ছাড়া ফরাসি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রায় সব কোর্সে টিউশন ফির জন্য বৃত্তি বা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে অর্থ ছাড় দিয়ে থাকে। অবশ্য সব বৃত্তি প্রধানত মাস্টার্স ও পিএইচডির জন্য দেওয়া হয়। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য সাধারণ বৃত্তিগুলো হলো ইরাসমুস মুন্ডাস স্কলারশিপ, আইফেল এক্সিলেন্স স্কলারশিপ, ইউনিভার্সিটি ডি লিয়ন মাস্টার্স স্কলারশিপ ও ইউনিভার্সিটি প্যারিস-স্যাক্লে ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার্স স্কলারশিপ।

খণ্ডকালীন চাকরি

ডিগ্রি অর্জনের পর অল্প সময়ের মধ্যে ফ্রান্সে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ পাওয়া যায়। এর জন্য স্নাতক সম্পন্ন করা প্রার্থীদের অবশ্যই ফ্রান্সে নিবন্ধিত কোনো কোম্পানিতে চাকরি নিতে হবে। অতঃপর সেই চাকরিতে বহাল থাকতে হবে প্রায় সাড়ে তিন বছর। এখানে মনে রাখা জরুরি, স্থায়ী বসবাসের সুবিধা অর্জনের জন্য অবশ্যই প্রতি মাসে আয়কর দিতে হবে। এই সাড়ে তিন বছর সময় গণনা করা হয় আয়কর দেওয়ার ভিত্তিতে। ফ্রান্সে স্থায়ী হওয়ার যোগ্যতা অর্জনের মাধ্যমে ইইউয়ের ২৬টি দেশে অবাধে চলাফেরা করা যায়।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh