আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৩১ পিএম
সিরিয়ার নারী বিষয়ক মন্ত্রী আয়শা আল-ডিবস। ছবি: সংগৃহীত
সিরিয়ার নারীদের নিয়ে দেশটির অন্তর্বর্তী সরকারের নারীবিষয়ক মন্ত্রী আয়শা আল-ডিবসের একটি মন্তব্য ঘিরে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। দেশটির অনেক নারী তার মন্তব্যকে নিজেদের স্বাধীনতার ওপরে আঘাতের ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন।
আয়শার মন্তব্য নিয়ে গতকাল রবিবার (২৯ ডিসেম্বর) থেকে বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা তার মন্তব্য নিয়ে ক্ষোভ জানান।
বিদ্রোহীদের ঝটিকা অভিযানের মুখে ৮ ডিসেম্বর সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সরকারের পতন হয়। এরপর দেশটিতে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকারের মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়া একমাত্র নারী আয়শা।
সিরিয়ায় নারীবাদী সংগঠনগুলোকে কাজ করার সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে আয়শার কাছে জানতে চায় তুরস্কের সম্প্রচারমাধ্যম টিআরটি।
জবাবে আয়শা বলেন, তাঁরা যে ধরনের মডেল গড়তে যাচ্ছেন, তার সঙ্গে যদি এই ধরনের সংগঠনের কর্মকাণ্ড যায়, তাহলে তাদের স্বাগত জানানো হবে।
আয়শা বলেন, ‘যারা আমার চিন্তার সঙ্গে একমত হবে না, তাদের জন্য আমি পথ উন্মুক্ত করে দিতে যাচ্ছি না।’
মডেলটি পর্যালোচনা করতে সিরিয়ার নারীদের একই টেবিলে বসার আমন্ত্রণ জানান আয়শা। তাঁর মতে, নারীদের ভূমিকা ও অধিকারের প্রতি সমর্থন দিতে সিরিয়ার এই মডেলটি গ্রহণ করা উচিত।
আয়শা বলেন, কেন একটি চাপিয়ে দেওয়া মডেল গ্রহণ করা হবে? তাঁরা এমন একটি মডেল বাস্তবায়ন করতে চান, যা সিরীয় সমাজের জন্য মানানসই, সিরীয় নারীরা যেটি বাস্তবায়ন করবেন।
সিরিয়ার সব ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নারীদের উদ্দেশে আয়শা বলেন, ‘আমরা সবাই সমান।’
যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা আছে—এমন নারীদের সরকারি চাকরিতে আবেদন করার আহ্বান জানান আয়শা। তবে তিনি নারীদের সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত প্রকৃতির অগ্রাধিকারের বাইরে না যেতে বলেন। পরিবারে নারীদের শিক্ষাগত ভূমিকার দিকটি জানতে আহ্বান জানান তিনি।
আয়শার এমন মন্তব্য অনেকের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তাঁদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
বাতরা আবো আলজাদায়েল নামের একজন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আপনি আপনার নিজের চিন্তাভাবনার কথা আপনার ঘরে বলতে পারেন। কিন্তু আমাদের ঘরের মধ্যে রাখতে চাওয়ার মাধ্যমে আপনি আপনার চিন্তা চাপিয়ে দেবেন না।’
বাতরা আবো আরও লিখেন, নতুন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দমন–পীড়ন নয়। চলাফেরারা ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতার ওপর দমন–পীড়ন নয়।
আয়শার বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেন অভিনেত্রী আলিয়া সাইদ। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, ‘আমরা বাস্তুচ্যুত হয়েছি, আমাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে, যাতে শেষে এসে আপনি আমাদের বলতে পারেন যে কী করা যাবে আর কী যাবে না?’
বারবার আশ্বস্ত করার পরও কিছু সিরীয় নাগরিক আশঙ্কা করছেন, দেশটির নতুন সরকার ধর্মীয় শাসনের দিকে অগ্রসর হতে পারে। তেমনটা হলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় আরও কোণঠাসা হয়ে পড়বে। নারীরা জনসমক্ষে আসতে পারবেন না।
উদ্ভূত পরিস্থিতি নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদ আল-শিবানি বলেছেন, সিরিয়ার সরকার নারীদের পাশে থাকবে। তাঁদের অধিকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন দিয়ে যাবে।