সুন্দর সম্পর্কের অন্তরালে

সুন্দর সম্পর্কের অন্তরালে এক নীরব ঘাতক হচ্ছে অ্যাবিউসিভ রিলেশনশিপ। যা মানুষ অনুভব করতে পারে; কিন্তু বলতে পারে না। কেবল তীব্র এক যন্ত্রণা নিজে বয়ে বেড়ায়। 

প্রেমময় সব সম্পর্ক সুন্দর আর পরিপূর্ণ হয় না। অনেক সময়ই বাহিক্যভাবে সুন্দর সম্পর্কের অন্তরালে থাকে অস্বাস্থ্যকর সম্পর্ক। আর এই অস্বাস্থ্যকর সম্পর্ক যেকোনো মানুষকে দিনে দিনে চরম পরিণতির দিকে নিয়ে যায়। যার নাম হলো অ্যাবিউসিভ রিলেশনশিপ। 

এক্ষেত্রে দেখা যায় একজন অন্যজনকে অনবরত অভিযোগ করতে থাকে। অন্যজন সেসব অত্যাচার সয়ে যেতে থাকে ক্রমাগত। কারণ অভিযোগকারী একইসাথে অ্যাবিউজও করে আবার স্বাভাবিক প্রেম প্রকাশ করে নানাভাবে। সে নিজেই বুঝতে পারে না এটা তার অসুস্থতার চূড়ান্ত রূপ। যেমন কুৎসিত আচরণ গালাগালি সব করে। কিছু সময় পর এমন আচরণের জন্য কান্নাকাটি করে ক্ষমা চেয়ে এমন পরিবেশ সৃষ্টি হয় যে, সেখানে ভালোবাসা ছাড়া আর কোনো যুক্তি থাকে না। 

নিজের ভালোবাসার প্রমাণ দিতে অতিব্যস্ত এ ব্যক্তিটি আবার দুইদিন পর একই ব্যাপার ঘটায়। ভুলে যায় তার বিগত দিনের আচরণ। 

এমন সম্পর্কের বেলায় ভিকটিম বুঝতে পারে না কি করবে সে। চরম দ্বিধা দ্বন্দ্ব, সংশয়, আতঙ্কে ও দুশ্চিন্তায় ভোগে। কারণ তার সঙ্গীর ব্যাপারে সে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারে না, সে তাকে ভালোবাসে কি বাসে না! যদি ভালোই বাসে, তাহলে কেন গায়ে হাত তোলে? কেন কুৎসিত গালি দেয়? ডোমিনেট করে, ঈর্ষা করে? আবার একটু পরেই কেন মাফ চায়? কাঁদে, কষ্ট পায়? আদর করে? এসব প্রশ্নের উত্তর পায় না। একই বিষয় বারবার ঘটার ফলে এটি একসময় দুইজনের অভ্যাসে পরিণত হয়। 

অ্যাবিউসিভ রিলেশনের ভিকটিম হিসেবে সাধারণত মেয়েরাই সংখ্যায় বেশি। এক্ষেত্রে পুরুষসঙ্গীটি মেয়েটির ক্যারিয়ার, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, চলাফেরা, পোশাক, খাবারের অভ্যাস, চিন্তা-চেতনা সবকিছুর ওপর খবরদারি করার চেষ্টা করে। কথা না শুনলে গায়ে হাত তোলে, অপমান করে, সারাক্ষণ ছোট করে, অন্য মেয়ের সাথে তুলনা করে, সন্দেহ করে, মেয়েটিকে দেখিয়ে অন্য মেয়েদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করে ইত্যাদি। এসবে মেয়েটি কাঁদে, ঝগড়া করে, রাগ হয়, অভিমান করে; কিন্তু কোনোভাবেই সে সেই সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসতে পারে না। কারণ লোকটি কিছু সময় পরই আবার তার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে থাকে, ভালোবাসার নানা রকম প্রকাশ করে। 

নানা দুর্ব্যবহারের পরপরই সঙ্গীকে খুশি করতে ইচ্ছামতো টাকা-পয়সা খরচ করে গিফট আনে, বেড়াতে নিয়ে যায়, খাওয়ায়। তাকে ছাড়া কোথাও গেলে ক্রমাগত ফোন করতে থাকেন বা টেক্সট পাঠাতেই থাকেন? এ অস্বাভাবিক পরিবেশে থেকে সঙ্গী তাকে ছেড়ে চলে যাবার কথা বললেই, সুইসাইডের হুমকি দেয়। 

অ্যাবিউসিভ রিলেশনশিপ দুইজনের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য চরম ক্ষতিকর। এটা জীবনের জন্যও হুমকি। প্রকৃতপক্ষে অ্যাবিউসিভ রিলেশনশিপে ভালোবাসা ও প্রেমের কিছুই থাকে না। এটা মানসিক অসুস্থতা। তাই এর জন্য চিকিৎসা প্রয়োজন। মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেয়া উচিত। 

আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, পারিবারিক শিক্ষা, পরিবেশ, চিন্তা-চেতনা, রুচি ইত্যাদি অ্যাবিউসিভ রিলেশনের কারণ হতে পারে। অনেক পুরুষের ধারণা নারীকে দমিয়ে রাখতে হবে। চিকিৎসা করেও এমন মানসিকতার পরিবর্তন কতটা হবে তা নিয়ে সংশয় থাকে। 

যারা অ্যাবিউসিভ রিলেশনের ভেতরে আছেন, তাদের উচিত ঠিক সময়ে ভালোবাসার নামে এ অসুস্থতা থেকে মুক্তি নেয়া। কেননা এর পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে। প্রতিদিন ভালোবাসার মিথ্যা মোহের মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে থাকাটা যে নরকসম প্রাণহীন জীবন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //