শাশুড়ি হিসেবে করণীয়

স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের অবনতি কিংবা পারিবারিক কোনো দ্বন্দ্বে অনেক ক্ষেত্রেই বউ-শাশুড়ির সম্পর্ককে দায়ী করা হয়। ছেলের বউ কী করে, কোথায় যায়, কোথায় বেশি পয়সা খরচ করে, তার বন্ধুরা কেমন ইত্যাদি বিষয়ে শাশুড়ির জানার আগ্রহ প্রচণ্ড, যা কিনা বউয়ের মনে বিরক্তির উদ্রেক করে। বউ বাড়িতে না থাকলে অনেক শাশুড়ি তো ছেলের বউয়ের অনুপস্থিতিতে তার জিনিসপত্রও ঘাটাঘাটি করেন! এমন আচরণে পারস্পরিক শ্রদ্ধা কখনো বাড়ে না। 

বৌ শাশুড়ি সম্পর্ককে সুন্দর করার দায়িত্ব একা বৌমার হাতে না ছেড়ে দিয়ে শাশুড়ি হিসেবে নিজের কিছু দায়িত্ব নিন। নিজের ভেতরে ইতিবাচক সুন্দর গুণের চর্চা করুন। পরের মেয়ের হাতেই সাজানো সংসার নিশ্চিন্তে ছেড়ে আপনি নির্ভার হন। আর সেটা না করে যদি আশা করেন, আপনার বৌমা স্টারজলসা সিরিয়ালের নায়িকা হয়ে আপনার সবরকম চাহিদা তুড়িতে মিটিয়ে যাবে, তবে ভুল। আপনার চাওয়ার সঙ্গে যার কাছে চাইছেন তার সামর্থ্যরে ব্যাপারটাও ভাবতে হবে। একটা আলাদা পরিবার আলাদা জীবনযাপন পদ্ধতি থেকে সে চট করে আপনার কায়দায় চলতে পারবে না। শাশুড়ি হিসেবে আপনার দায়িত্ব হলো তাকে বোঝার চেষ্টা করুন, তাকে সময় দিন। 

শাশুড়িরা মনে করেন, এতদিন সংসার তার একক নিয়মে চলেছে। এখন উড়ে এসে জুড়ে বসা এই পরের বাড়ির মেয়ের ওপর সংসারের সব ছেড়ে দিতে মন চায় না। তাই অনেক সময় অসুখ নিয়েও রান্নাঘরের দখল ছাড়েন না শাশুড়িরা। এ রকম মানসিক সমস্যায় কম-বেশি সব শাশুড়ি ভোগেন! সহজে নিজের কর্তৃত্ব, নিজের সংসারের ভার পরের মেয়েকে দিতে ইচ্ছে করে না! অথচ একটা লম্বা সময় অতিবাহিত হবার পর নিজের বিশ্রাম, একটু শ্বাস নেওয়ার প্রয়োজন হয়। অনেকেই নিজের মেয়ে এবং ছেলের বৌ আলাদা করে দেখেন। অথচ যদি একটু মানসিকতা বদলে দিতে পারেন, তবে পারিবারিক জীবনটা অনেক সুন্দর ও সহনীয় হয়ে উঠবে। 

ছেলের বৌ বলেই তার খুঁত ধরতে যাওয়াটা নিজেরই অশান্তির কারণ হয়। নিজের মানসিকতা সময়টা আকাশের মতো উদার করে দিন, দেখবেন সংসারে শান্তি মিলবে। ইতিবাচক চিন্তার সঙ্গে চলুন, নেতিবাচক চিন্তা একদম করবেন না। এটি স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো, যখন আপনি ইতিবাচকভাবে জীবনকে দেখতে শিখবেন। ছেলের বৌয়ের ছোট ছোট ভুলগুলো বড় করে তাকে ঠেস দিয়ে কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। নিজের মেয়েকে যতটা ভালোবাসবেন তার দশগুণ ভালোবাসা দিন পরের মেয়েকে। দেখবেন সে ঠিক আপনার পায়ে পায়েই ঘুরবে। কিছু পেতে হলে কিছু নয়, অনেকখানি ছাড় দিতে হবে। সেই ছাড় দেওয়া শুরু করলে দেখবেন আপনার মনেও এক অন্য ধরনের প্রশান্তি ছড়িয়ে পড়ছে। অবাধ্য বৌমাকে কথার বিষ দিয়ে নয় ভালোবেসে কাছে টানুন। ছেলেকে বৌয়ের নামে নালিশ করা থেকে বিরত থাকুন। 

নিজের বয়সকে উপভোগ করুন। কখন কি পাননি সেটা নিয়ে আক্ষেপ না করে, যা পেয়েছেন সেটাকেই সুন্দর মন নিয়ে দেখার চেষ্টা করতে হবে। নিজের ভেতরে জিদ, অহংবোধ, রাগ, ঘৃণা এই ক্ষতিকর আবেগগুলো সরিয়ে রাখুন। সে ঠিক কি বলতে চাইছে বা তার পছন্দটা। যখন আপনি বোঝার চেষ্টা করেন, তখন দেখবেন সেও আপনাকে বুঝে নিচ্ছে। কর্তৃত্ব খাটাবেন না বরং অধিকারের আসনে তাকে এগিয়ে রাখুন, আপনার সম্মান বাড়বে বই কমবে না।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //