নিঃসন্তান দম্পতির পাশে দাঁড়ান

হাঁপাতে হাঁপাতে গাড়িতে বসল নীলা। পাশের সিটে বসা সেলিনা ও রিতা আপার দিকে শুকনো হাসি হেসে বলল, হেঁটে আসছি তো। আপারা একজন আরেকজনের দিকে টিপ্পনির হাসি কেটে জিজ্ঞাসা করল, আপা কোনো নতুন খবর আছে। রিতা আপা বলল দেরি করছেন কেন, ছেলে-পুলে না থাকলে স্বামীও ভালোবাসে না। সন্তান হচ্ছে সংসারের খুঁটি। সমস্যা থাকলে ডাক্তার দেখান। নীলা কিছু বলে না। সন্তান না হওয়ার কষ্ট একান্তই ব্যক্তিগত। এ ব্যাপারটি নিয়ে প্রকাশ্যে আলোচনা করতে নীলার ভালো লাগে না। সন্তানের আশায়ই ডাক্তার দেখাচ্ছে সে । শুধু রিতা নয়, এ ধরনের কথা প্রতিদিন শুনতে হচ্ছে তাকে নানা জনের কাছে। শ্বশুর-শাশুড়ি আত্মীয়স্বজন সবাই একই কথা বলছে। 

নারী যদি সম্পূর্ণভাবে সন্তান জন্মদানে অক্ষম হয়, তাহলে সন্তানের মুখ দেখতে না পারার কষ্টে বেশিরভাগ মেয়ে এমনিতেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে; কিন্তু সেই কষ্ট হাজারগুণে বাড়িয়ে দেয় পরিবার, সমাজ আর চারপাশের মানুষের নিত্যদিনের এইসব নগ্ন উক্তি। সে হয়ে যায় অপয়া, অলক্ষুণে। ভদ্রতার সবটুকু সীমারেখা অতিক্রম করে এই প্রশ্নগুলো প্রতিনিয়তই চেনা-অল্পচেনা-অচেনা মানুষগুলোর মুখে শুনতে হয়। যেন নারীর জীবনে বিয়ে করার একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে সন্তান জন্ম দেওয়া, শ্বশুরবাড়ির ভাষায়, বংশরক্ষা করা। চারপাশের এসব উক্তি নিঃসন্তান নারীকে অপমানিত করে, নারীর কষ্ট বাড়িয়ে দেয়। এগুলো কেউ বুঝতে চায় না।

নারী সন্তান নেবেন কি নেবেন না, কখন নেবেন কিংবা কয়টি সন্তান নেবেন বা কত বছরের বিরতিতে সন্তান নেবেন সেটি নারীর সিদ্ধান্ত। স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই আলাপ আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু নীলার কষ্টটা অন্য জায়গায়, আর তা হলো তার স্বামীর ভূমিকা। সন্তান না হওয়ার জন্য সে কিছুটা অসন্তুষ্ট। কিন্তু তার জন্য ডাক্তার দেখানো, ওষুধ ক্রয় বা ডাক্তারের দেওয়া নির্দেশনা মেনে চলা কোনোটাই সে করে না । কোনো কিছু বললে একটাই উত্তর- যার সমস্যা সে যাবে, আমি যাব কেন; কিন্তু নীলা সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত করে বলতে পারে না, সমস্যা একমাত্র তারই। সন্তান না হওয়ার জন্য স্বামী-স্ত্রী উভয়ই সমভাবে দায়ী হতে পারে। এই দায়ের ভার ৫০ শতাংশ পুরুষের ও ৫০ শতাংশ নারীর। আবার স্বামী-স্ত্রী দু’জনেরই সমস্যা আছে এমন দম্পতি রয়েছে ১২ হতে ১৫ শতাংশ; কিন্তু এখনো এদেশে মাতৃত্বের দায় চাপিয়ে দেওয়া হয় শুধু নারীর ওপর। 

বন্ধ্যাত্বের একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে মানসিক চাপ। অনেক সময় সন্তান লাভের তীব্র বাসনাও প্রবল মানসিক চাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়; কিন্তু আমাদের দেশে সমাজ ও পরিবার কর্তৃক আরোপিত চাপও এই মানসিক চাপকে তীব্রমাত্রায় বাড়িয়ে দেয়। তাই স্বামীদের উচিত স্ত্রীকে এসব বিরূপ পরিস্থিতি থেকে দূরে রেখে আনন্দ ও হাসি-খুশির মধ্যে রাখা। 

আমরা যারা আত্নীয়-স্বজন ও প্রতিবেশী রয়েছি তাদেরও উচিত নিঃসন্তান দম্পতিকে বারবার এসব প্রশ্ন করে বিব্রত না করা। প্রত্যেকেরই একটি ব্যক্তিগত জীবন রয়েছে। এখানে আমাদের কারোরই উচিৎ নয় নানা ধরনের টিপ্পনি কেটে দাম্পত্যজীবনকে বিষিয়ে দেওয়ার। বরং নিঃসন্তান দম্পতিকে বিব্রত না করে মানসিকভাবে ভেঙে না পড়ে, সেজন্য পাশে দাঁড়ান। তাদের সঙ্গে নানারকম আনন্দ-আড্ডায় মেতে থাকুন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //