আলিঙ্গনে মানসিক প্রশান্তি

দিনগুলো বেশ কঠিন যাচ্ছে? মেজাজটাও ঠিক থাকে না মাঝেমধ্যেই; ইচ্ছে করে সবকিছু থেকে পালিয়ে যাই। এমন সময়ে প্রয়োজন আলিঙ্গনের নিবিড় প্রশান্তি। বন্ধু বা প্রিয়জন, পরস্পরের প্রতি স্নেহ ও ভালোবাসা প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম হলো আলিঙ্গন বা জড়িয়ে ধরা। অভিমান, ছোট ছোট দুঃখ, মুহূর্তেরা ঋণী হয়ে থাকে উষ্ণ আলিঙ্গনের কাছেই। 

এটা কি তা হলে মন ভালো করার কোনো ওষুধ নাকি- আসলেই তাই। শুধু দূর থেকে প্রিয়জনকে মনে রাখা নয়, বরং প্রিয়জনকে জড়িয়ে ধরা হার্ট ও ইমিউন সিস্টেমের জন্য হতে পারে মহৌষধ। এটা শুধুই মনগড়া আলাপ নয়, এর আছে চিকিৎসাগত অনেক প্রমাণও।

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যারোলিনার একটি গবেষণায় প্রমাণিত, প্রিয়জনের সঙ্গে আলিঙ্গন ও খুনসুটিমাখা মধুর সম্পর্ক হৃদরোগ ও বিষণ্ণতাজনিত রোগ দূর করে। কেননা প্রিয়জনের সংস্পর্শ মানুষের রক্তে অক্সিটোসিনের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়, এতে মস্তিষ্ক শান্ত থাকে, যা উদ্বিগ্নতা আর বিষণ্ণতাকে অনেক কমিয়ে দেয়। প্রিয়জনের সংস্পর্শ ও আদর দুটি বিশেষ সুখের হরমোন নিঃসৃত করে, যা হার্ট ও ইমিউন সিস্টেমের জন্য কার্যকরী। এর কারণ হলো তখন শরীরে সেরেটোনিন হরমোনের উপস্থিতি আপনার মধ্যে একটি সুখ ও আনন্দদায়ক অনুভূতির জন্ম দেয়। 

শুধু আপনজন নয়, গবেষণায় প্রমাণিত প্রিয় বন্ধু-বান্ধবী বা প্রিয় কোনো মানুষের আলিঙ্গনও স্ট্রেস রিলিফ করতে কার্যকরী। তবে সাধারণত স্বামী-স্ত্রী, সন্তান, বাবা-মা, প্রেমিক-প্রেমিকার সঙ্গে সম্পর্কে আবেগীয় একটি বন্ধন থাকার কারণে এই মানুষগুলোর সান্নিধ্য ও আলিঙ্গন যে কোনো কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলায় ইতিবাচক শক্তি প্রদান করবে। প্রিয়জনদের জড়িয়ে ধরা বা আলিঙ্গনের মধ্যে কোনো খারাপ কিছু নেই বরং সম্পর্কগুলোর মাঝে এই আলিঙ্গন খুবই জরুরি একটি বিষয়।

ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন রিসার্চ-২০২১-এ দেখা গেছে, নিউরো ইমিউন সিস্টেমের জন্য সেরেটোনিন ও অক্সিটোসিন হরমোন বিশেষভাবে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। বিশেষজ্ঞরা গবেষণায় এটার প্রমাণ পেয়েছেন যে প্রিয়জনের সঙ্গে উষ্ণ আলিঙ্গনে মানবদেহে এই দুটি হরমোন পর্যাপ্ত পরিমাণে নির্গত হয়। তাই অনেক চিকিৎসক তাদের থেরাপি ও চিকিৎসায় প্রিয়জনের সঙ্গে আলিঙ্গনকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। ১০ সেকেন্ড বা তার বেশি সময় ধরে আলিঙ্গন করলে মনের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। বিশেষ করে খুব কাছের কোনো বন্ধু বা প্রিয়জন কেউ জড়িয়ে ধরলে মানসিক প্রশান্তি আসে। 

নিয়মিত প্রিয়জনকে আলিঙ্গন করেন তাদের মধ্যে আর যারা করেন না তাদের মধ্যে তুলনামূলক একটি চার্টে দেখা গেছে, যারা নিয়মিত প্রিয়জনের সঙ্গে আলিঙ্গনে আবদ্ধ হয়েছেন তাদের রক্তে বেশি অক্সিটোসিন ও সেরেটোনিন হরমোন নিঃসৃত হয়েছে। যা কিনা তাদের নিউরোইমিউন সিস্টেমের উন্নতি ঘটিয়েছে।

আলিঙ্গন করলে শারীরিক কিছু সমস্যার সমাধানও হয়। এ ছাড়া আলিঙ্গন আত্মসম্মান বাড়ায়। শরীরের উত্তেজনা মুক্ত করে পেশি শিথিল করে। নরম টিস্যুতে সঞ্চালন বাড়িয়ে ব্যথাও দূর করতে পারে। স্পর্শ ও আলিঙ্গন মৃত্যুর উদ্বেগ কমায়। এটি আমাদের নিরাপদ বোধ করে। গবেষণায় দেখা গেছে, নবজাতককে আলিঙ্গনের ফলে ত্বকের স্পর্শে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটায়। ফলে শিশুর কান্না কমে, ঘুম ভালো হয় মা ও শিশুর, উদ্বেগ কমে, হরমোনের সঠিক উৎপাদন ঘটে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //