সুখী দাম্পত্যের রসায়ন

দাম্পত্য তিন অক্ষরের একটি স্বপ্ন, একটি ভরসা, একটি বিশ্বাস, একটি আস্থার নাম। আর এই স্বপ্ন, বিশ্বাস ও আস্থা- এক ছাদের তলায় যুগলবন্দি হয় তখন, যখন সেখানে মমতার ডালপালা ছড়িয়ে ভালোবাসার সুগন্ধ ছড়ায়। ভালোবাসার অপর নাম আরাম, নিশ্চয়তা, নির্ভরতা। নতুন জীবনের পথচলা শুরু হয় অনেক আশা আর স্বপ্ন নিয়ে। আর আজ কথা হবে সুখী দাম্পত্যের রসায়ন নিয়ে। সম্পর্ক আর একটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে সেটা হলো সমতা। 

দাম্পত্য আসলে সম্পূর্ণ আলাদা দুটি মানুষের বিভিন্ন অপূর্ণতা নিয়ে একসঙ্গে একটি ভ্রমণের নাম। এই ভ্রমণকে আনন্দদায়ক ও সুখী করার জন্য উভয়ের কিছু বিষয় মেনে চলা জরুরি। বিশ্বখ্যাত মনোবিদও সম্পর্ক নিয়ে কাউন্সেলিং করছেন তারা কয়েকটি বিষয়ের কথা বলেছেন যা দাম্পত্যের রসায়নকে সুমিষ্ট করবে। এক নজরে দেখে নিই বিষয়গুলো। 

  • দুজনের প্রতি দুজনের শ্রদ্ধা থাকা খুবই জরুরি। জীবনে চলার পথে দীর্ঘ যাত্রায় অনেক ধরনের ভুলভ্রান্তি হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেটার জন্য অন্যের সামনে সঙ্গীকে ছোট করা, সন্তানের সামনে হেয় করা, নানান ধরনের কথা বলা- এগুলো একেবারেই করা যাবে না। বরং পরিস্থিতি সামাল দিয়ে বিষয়টাকে বোঝার চেষ্টা করতে হবে। তাকে সাপোর্ট করা, তার পাশে থাকা। 
  • একজন মানুষ আরেকজনের মতো হবে না। এটাই স্বাভাবিক। আর এই স্বাভাবিক বিষয়টি মেনে নিয়েই তাকে বুঝতে হবে। সম্পর্কে যে ভুল সবচেয়ে বেশি করে মানুষ সেটা হলো সঙ্গীকে নিজের মতো পরিবর্তন করার প্রচেষ্টা। এতে সম্পর্কে তিক্ততা তৈরি হয়।
  • সঙ্গীর কথা গুরুত্ব দিয়ে শুনতে হবে। সব সময় শব্দ দিয়ে সব বিষয় বোঝানোর চেষ্টা করবে বিষয়টি এমন নয়। কিছু সময় সে নীরব থেকেও অনেক কথা বলার চেষ্টা করে, তার সেই কথাগুলো বোঝার চেষ্টা করুন। সঙ্গীকেও গুরুত্ব দিন। সঙ্গীর ভালো লাগা, মন্দ লাগা, আনন্দ, কষ্ট- এগুলোর মূল্য দিন। 
  • সুখী দাম্পত্যর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান চাপমুক্ত রাখা ও থাকা। কোনো চাপ এসে পড়লেও দুজন মিলেই সেটা ভাগ করে নিন। সেটা হোক আর্থিক, মানসিক বা শারীরিক। কর্মজীবী হলে ঘরের কাজ দুজনই ভাগ করে নিন। চেষ্টা করুন পরস্পরকে আরাম দিতে।
  • কোনো কিছু গোপন করবেন না। যা লুকিয়ে করছেন দিনশষে সেটাই বিশ্বাস ভঙ্গের কারণ হবে। তাই খুঁটিনাটি যাই ঘটুক সঙ্গীর সঙ্গে শেয়ার করুন। যদি কোনো কিছু খারাপ লাগে, দুর্ব্যবহার না করে পরে বুঝিয়ে বলুন। 
  • সঙ্গীর যত্ন নিন। যত্ন নিন তার মনের, শরীরের ও আত্মার। তার মানসিক চ্যালেঞ্জগুলো অবহেলা না করে তাকে আনন্দ দিতে ছোট ছোট জোকস বলুন, তাকে উদ্দীপিত করুন। তার মন বা শরীর খারাপ হলে, কোনো কিছু নিয়ে দুশ্চিন্তার সময় তাকে ভরসা দিন। 
  • পরস্পরের প্রতি আস্থা নষ্ট করবেন না। দাম্পত্যে এই শব্দটি খুব জরুরি। ভুল হতে পারে, অন্যায় হতে পারে। সেটাকে বারবার পুনরাবৃত্তি করবেন না। কিছুটা মানিয়ে নেবেন, মনে নেবেন না। তবে আস্থায় যেন ঘাটতি না পড়ে।
  • প্রশংসা করুন। ছোট ছোট বিষয় অ্যাপ্রিশিয়েট করুন। স্ত্রী সুন্দর করে ঘর সাজান অথবা স্বামী ভালো রান্না করেন- সেটার প্রশংসা করুন। প্রশংসা এমন একটি ওষুধ যা দাম্পত্যকে পুষ্টি জোগায়।
  • ভালোবাসার প্রকাশ করুন। ছোট্ট ছোট্ট অভ্যাস যা প্রতিদিনের ভালোবাসা প্রকাশ করে। রাগ, দুঃখ সব প্রকাশ করি অথচ সঙ্গীর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করি না। মাঝে মাঝে ছোটখাটো সারপ্রাইজ দিন। 
  • শুধুই প্রিয়জন নয় বরং প্রয়োজনও হয়ে উঠুন। দিনশেষে তার মনের শান্তির এক আশ্রয়স্থল হয়ে উঠুন। মমতায়, আস্থায়, প্রশংসায় মুগ্ধ শ্রোতা হোন, প্রেমিক হোন। আটপৌরে জীবনের মাঝেও তাকে ছোট ছোট খুশি দিয়ে বোঝান যে সে কতটা স্পেশাল, কতটা প্রিয়।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //