সন্তানের অস্বস্তিকর প্রশ্ন যেভাবে সামলাবেন

‘আম্মু দেখো, সেই আন্টি এসেছে। যে তোমার শাড়ি চুরি করেছিল। তুমি ওই দিন আব্বুর সঙ্গে বলছিলে!’ রেহানাকে দেখে ছেলের কথায় বেশ অস্বস্তিতে পড়ে যান তাবাসসুম। লজ্জায় কোনো কথা বলতে পারছেন না। তারপর ছেলে নাবিলের পিঠে সজোরে চড় মেরে ঘরের ভেতরে পাঠিয়ে দিলেন। কিন্তু তাবাসসুম বুঝে উঠতে পারছেন না, পাশের ফ্ল্যাটের রেহানার সঙ্গে কীভাবে কথা শুরু করবেন! এ সমস্যা কেবল তাবাসসুমের নয়। সন্তানের প্রশ্নে বা মন্তব্যে অনেক মা-বাবাকে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। এ ধরনের বেফাঁস কথাবার্তার কারণে অনেক সময় পারিবারিক সম্পর্কও নষ্ট হয়।

সন্তানকে বড় করে তোলার একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হলো তাদের প্রশ্ন, কৌতূহল, ভুল ধারণা যথাযথভাবে মোকাবিলা করা। অবশ্যই এটি একটি কঠিন কাজ। কিন্তু সেটি বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে। কীভাবে এসব পরিস্থিতির মোকাবিলা করবেন তা নিয়ে থাকছে কিছু পরামর্শ।

খোলামেলা পরিবেশ 

সন্তানদের থেকে কিছু প্রশ্ন লুকিয়ে রাখি। আর ওরা সেই প্রশ্নগুলোই করে সবচেয়ে বেশি অস্বস্তিতে ফেলে। সাধারণ যৌনতা বিষয়ক অনেক শব্দ সন্তানের সামনে উচ্চারণ করি না। অথচ টেলিভিশন বা পত্রপত্রিকার মাধ্যমে এসব শব্দ ওরা শিখে ফেলে। পরে প্রশ্নও করে বসে। তাই এসব বিষয়ে গোপন করা ঠিক নয়। যতটা সম্ভব সহজভাবে বুঝিয়ে বলতে হবে। তা হলে সন্তান বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের শরীরের খুঁটিনাটি বিষয়ে জানতে পারবে। দরকার হলে শিশুদের জন্য বিশেষভাবে লেখা সেক্স এডুকেশন বইয়ের সাহায্য নিতে পারেন। টিভিতে হঠাৎ এ ধরনের কোনো বিষয় সামনে এলে এড়িয়ে যাবেন না। বরং সহজভাবে বুঝিয়ে বলুন। তা হলে ওদের মধ্যে এসব নিয়ে বাড়তি কৌতূহল তৈরি হবে না।

অস্বস্তিকর পরিস্থিতি 

আত্মীয়স্বজন বা বন্ধুবান্ধবের বাড়িতে বেড়াতে গেলে বা বাড়িতে অতিথি এলে সন্তানের অনেক প্রশ্ন মা-বাবাকে বিপদে ফেলে। ওই পরিস্থিতি সেনসিটিভলি মোকাবিলা করা গুড প্যারেন্টিংয়ের অন্যতম শর্ত। বাইরের লোকের সামনে ওরা কোনো ব্যক্তিগত প্রশ্ন করলে নিজেকে সংযত রাখুন। সন্তানের প্রশ্নের জন্য তাদের কাছে দুঃখপ্রকাশ করুন। তারপর সবার সামনেই সন্তানকে বুঝিয়ে বলুন, এ ধরনের প্রশ্ন করা ঠিক নয়। তাকে তখনই ‘স্যরি’ বলে ক্ষমা চেয়ে নিতে উৎসাহ দিন। তারা চলে গেলে তাকে বুঝিয়ে বলুন, কেন এ ধরনের প্রশ্ন বা মন্তব্য করা অনুচিত। আর এ ধরনের পরিস্থিতিতে পড়তে না চাইলে বাড়িতে নিজেরা সংযতভাবে আলোচনা করুন। সন্তানের সামনে বাইরের কাউকে নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করবেন না।

ভালো আচরণ-মন্দ আচরণ

ছোট থেকেই সন্তানের মধ্যে ভালো-খারাপ আচরণের ধারণা ঢুকিয়ে দিন। নিজেকে সন্তানের কাছে রোল মডেল হিসেবে উপস্থাপন করুন। পরিচিতদের নিয়ে সমালোচনা, কটূক্তি, পরচর্চা সন্তানের মনে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। ওদের বুঝিয়ে দিন কোনটা ভালো আচরণ আর কোনটা খারাপ আচরণ। নিজেও সেগুলো মেনে চলুন। 

ভুলে যাবেন না 

‘ও ছোট ও কিছু বোঝে না।’-এই মারাত্মক ভুল ধারণা থেকে বেরিয়ে আসুন। বরং সন্তানের মাঝে কৌতূহল থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। শিশুদের এই অনুসন্ধিৎসু মনোভাব খুব ভালো ব্যাপার। তাই ওর প্রশ্নগুলোর সহজভাবে উত্তর দিন। তাতে কৌতূহল কিছুটা হলেও কমবে। তবে বুঝিয়ে বলার পরও যদি না বোঝে বা বারবার অস্বস্তিকর প্রশ্ন করতেই থাকে, তা হলে অবশ্যই শাস্তি দেবেন। আবার কোনো প্রশ্নেই ‘তুমি বুঝবে না’ বলবেন না। ওর মতো করে বুঝিয়ে দিন। তবে সন্তানকে শেখানোর আগে নিজে ঠিক তথ্যটা জানেন কি না তা যাচাই করে নিন। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //