মক্কা-মদীনার দর্শনীয় স্থান

মক্কা-মদীনায় দর্শনীয় পবিত্র স্থানগুলো প্রিয়নবীর (স) স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে আজো সুসংরক্ষিত এবং তাঁর (স) চলমান মু’জিজা। যেমন- মসজিদুল হারামের আনুমানিক ৫০ মিটার দূরে ‘সুক-আল-লাইল্’ মহল্লার ‘আব্দুল মুত্তালিবে’র বাড়ি যেখানে দু’জাহানের বাদশাহ্ জন্মগ্রহণ করেন। অনুরূপভাবে দুধ মা হালিমা সা’দিয়ার (রা) বাড়ি বনু সা’আদ গোত্রের একটি সাধারণ বাড়ি ও এর কাছের একটি কূপ প্রিয়নবীর (স) স্মৃতিধন্য। সেখানে দুধবোন সায়মার সেবায় তাঁর কেটেছিল ছয়টি বছর। 

মক্কার কাবাঘরের অদূরে অবস্থিত ‘জাবালে নূর’ যা হেরা পর্বত হিসেবে খ্যাত— এখানেই পবিত্র কুরআন নাযিলের শুভ সূচনা হয়। পবিত্র মক্কার ৯৫ কি.মি. উত্তর-পূর্বে অবস্থিত ‘তায়েফ প্রান্তর’। নবুওয়াতের দশম বর্ষে প্রিয়নবী (স) এখানে ইসলাম প্রচারের জন্য এসে লঞ্ছিত ও রক্তাক্ত অবস্থায় ওত্বা ইব্নু রাবিয়াহ্র আঙ্গুর বাগানে আশ্রয় গ্রহণ করেন। এখানেই বালক কৃতদাস আদ্দাস (রা) প্রিয়নবীর (স) দাওয়াত কবুল করেন। ‘জাবালে সওর’ প্রিয়নবীর (স) হিজরতের স্মৃতি বিজড়িত স্থান। হিজরতের সময় প্রিয়নবী (স) ও আবুবকর (রা) তিনদিন তিন রাত অবস্থান করেন— এখানেই আবুবকর (রা) প্রিয়নবীর (স) নিরাপত্তার জন্য সাপের গর্তের মুখে নিজের পা চেপে ধরেছিলেন এবং সাপের দংশনেও অস্থির হননি, বরং শত্রুর পদধ্বনি শুনে অস্থির হয়েছিলেন। 

পবিত্র কুরআনের ভাষায়, “তিনি আপন সঙ্গীকে বললেন: বিষণ্ন হয়ো না, আল্লাহ্ আমাদের সঙ্গেই আছেন...” (তওবা: ৪০)। প্রিয়নবীর (স) স্মৃতি বিজড়িত অনেক মসজিদ রয়েছে। যেমন- মসজিদে কোবা, মসজিদে নব্বী, মসজিদে কিবলাতাইন, মসজিদে জুম’আ, মসজিদে জ্বীন ইত্যাদি। মদিনা থেকে তিন মাইল দূরের আলিয়া বা কোবায় প্রিয়নবীকে (স) স্বাগত জানান আমর ইবনু আউফ গোত্রের প্রধান কুলসুম ইবনু হাদাম (রা)। মদিনায় প্রবেশের আগে  প্রিয়নবী (স) এখানে চৌদ্দদিন অবস্থান করেন। এখানে প্রিয়নবী (স) একটি মসজিদ নির্মাণ শুরু করেন। এই ‘মসজিদে কোবা’ হলো প্রিয়নবীর (স) তৈরি প্রথম মসজিদ।

কোবায় দু’সপ্তাহ অবস্থানের পর প্রিয়নবী (স) মদিনার উদ্দেশ্যে রওনা হলেন, পথিমধ্যে তাঁর উট বনি সালাম গোত্রের এলাকায় থামলো- সেখানে প্রিয়নবীর (স) খুত্বা ও ইমামতিতে সর্বপ্রথম জুম’আর নামায আদায় করা হয়। প্রিয়নবীর (স) স্মৃতিচিহ্ন এ স্থানেই নির্মিত হয় মসজিদে জুম’আ। ‘মসজিদে নব্বী’ যে মসজিদকে প্রিয়নবী (স) সব সময় বলতেন ‘আমার মসজিদ’। হিজরতের পর টানা ১০ বছরের অধিকাংশ সময় প্রিয়নবী (স) এখানেই অবস্থান করেন। হযরত আবু আইয়ুব আনসারীর (রা) বাড়ি সংলগ্ন একটি পড়ো জমির মালিক সহল ও সুহাইল বালকদ্বয়। এখানেই নির্মিত হয় ‘মসজিদে নব্বী’। আর যে মসজিদে নামাজরত অবস্থায় তাকে কিবলা পরিবর্তনের কথা বলা হয়, তাকে দু’কিবলা বিশিষ্ট মসজিদ বা ‘মসজিদে কিবলাতাইন’ বলে। 

অন্যদিকে ‘মসজিদে জ্বীন’ হলো যেখানে জ্বীনরা প্রিয়নবীর (স) কণ্ঠে পবিত্র কুরআন শুনে ঈমান আনে। মদীনায় বৃষ্টির জন্য ‘ইস্তেস্কা’ আদায় করবার কারণে প্রিয়নবীর (স) স্মৃতিধন্য ঐতিহাসিক মসজিদের নাম হয়ে যায় ‘মসজিদে গিমামাহ্ (গামামাহ্)’। আর প্রিয়নবীর (স) শ্রেষ্ঠতম স্মৃতিচিহ্ন তার ‘রওজাতুল আতহার’ বা ‘পবিত্র সমাধি’। উম্মতে মুহাম্মদীর সর্বকালীন সর্বাত্মক ঐক্যমত হলো ‘বায়তুল্লাহ’ পর দুনিয়ার বুকে সর্বোত্কৃষ্ট ও সর্বাপেক্ষা মর্যাদাপূর্ণ স্থান হলো ‘রওজাতুল আতহার’ বা ‘পবিত্র সমাধি’।

লেখক: বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ, কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ, গাজীপুর

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

বিষয় : মক্কা মদীনা

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //