শবে কদরের নামাজে কি সুরা কদর পড়তেই হয়?

লাইলাতুল কদর বা শবে কদর বছরের শ্রেষ্ঠ রাত। এ রাতের মর্যাদা এক হাজার মাসের চেয়েও বেশি। এ রাতের মর্যাদায় আল্লাহ তাআলা একটি সুরা নাজিল করেছেন। আর এ রাতেই আল্লাহ তাআলা মানুষের মুক্তির সনদ আল-কুরআনুল কারিম নাজিল করেছেন। 

এ রাত ও কুরআন নাজিল প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন-

‘নিশ্চয়ই আমি তা (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি কদরের রাতে। আর কদরের রাত সম্বন্ধে তুমি কী জান? শবে কদর হলো- এক হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। এতে প্রত্যেক কাজের জন্যে ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রমে। শান্তি আর শান্তি, যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত (নাজিল হতে) থাকে।’ (সুরা আল-কদর)

মর্যাদাপূর্ণ এ রাতে ঈমানের সাথে ও সওয়াবের নিয়তে ইবাদত-বন্দেগি করলে- আল্লাহ তাআলা পেছনের সব গুনাহ মোচন করে দেবেন, যদি তিনি তা কবুল করেন।

মর্যাদার এ রাতে কুরআন নাজিল ও এর বরকত সম্পর্কে সুরা দুখানে আল্লাহ তাআলা সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন এভাবে- ‘শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের। আমি একে (কুরআন) নাজিল করেছি এক বরকতময় রাতে। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় (লাওহে মাহফুজ থেকে ফেরেশতাদের কাছে) স্থিরিকৃত হয়। আমার পক্ষ থেকে আদেশক্রমে, আমিই প্রেরণকারী। আপনার পালনকর্তার পক্ষ থেকে রহমতস্বরূপ। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।' (সুরা দুখান : আয়াত ২-৬)

হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-  ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের আশায় রমজানের সিয়াম পালন করে, তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। আর যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের আশায় কদরের রাতে কিয়াম করে, তারও পূর্বের সব গুনাহ মোচন করে দেয়া হয়। (বুখারি, হাদিস : ৩৮; মুসলিম, হাদিস : ৭৬০)

সুতরাং যথাসম্ভব নফল সালাত, দোয়া, জিকির, কোরআন তিলাওয়াত ইত্যাদির মাধ্যমে এ মহিমান্বিত রাত জাগরণের চেষ্টা করতে হবে।

অনেকেই জানতে চান যে, শবে কদরের রাতে নফল নামাজে কি সুরা কদর তিলাওয়াত করতে হয়? না হলে কি নামাজ হয় না? হাদিসে এ রাতে নফল সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে (সুরা ফাতিহা ছাড়া) নির্দিষ্ট কোনো সুরা পড়ার নির্দেশনা আসেনি। সুতরাং শবে কদরের রাতে সুরা কদর তিলাওয়াত করতে হবে- এমন কোনো কথা হাদিসসম্মত নয়। 

বরং সঠিক কথা হলো- সুরা ফাতিহার পর পবিত্র কোরআনের যেখান থেকে সুবিধা হয়, সেখান থেকে পাঠ করা যাবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘কোরআনের যতটুকু তোমাদের জন্যে সহজ হয়, ততটুকু তিলাওয়াত কর।’ (সুরা মুজ্জাম্মিল, আয়াত : ২০)

প্রসঙ্গত, কেউ যদি এ রাতের নামাজে বিশেষ কোনো সুরা তিলাওয়াত করাকে সুন্নত মনে করে বা নির্দিষ্ট কোনো সুরা পড়াকে নিয়মে পরিণত করে- তাহলে তা বিদআত হিসেবে গণ্য হবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত নয়, এমন নতুন জিনিষ চালু করল তা পরিত্যাজ্য।’ (বুখারি, হাদিস : ২৬৯৭) অন্য বর্ণনায় আছে, ‘যে ব্যক্তি এমন আমল করল, যার ব্যাপারে আমার নির্দেশ নাই; তা প্রত্যাখ্যাত।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৫৪৮৯)

তবে হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! (সা.) আমি যদি লাইলাতুল কদর সম্পর্কে জানতে পারি, তাহলে আমি ওই রাতে আল্লাহর কাছে কী দোয়া করব? রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন; তুমি বলবে, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া; ফাফু আন্নি।’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাসেন; তাই আমাকে ক্ষমা করে দিন।’ (ইবনে মাজা, সহিহ-আলবানি)

শবে কদর রমজানের মধ্যেই। রাসুলে আকরাম (সা.) বলেছেন: ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে শবে কদরকে সন্ধান করো। (মুসলিম)। এ রাতগুলো হলো ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯। মনে রাখতে হবে, আরবিতে দিনের আগে রাত গণনা করা হয়।

মুহাক্কিকগণ বলেন, আরবিতে ‘লাইলাতুল কদর’ শব্দদ্বয়ে নয়টি হরফ বা আরবি বর্ণ রয়েছে; আর সুরা কদরে ‘লাইলাতুল কদর’ শব্দদ্বয় তিনবার রয়েছে; নয়কে তিন দিয়ে গুণ করলে সাতাশ হয়, তাই সাতাশে রমজানের রাতে শবে কদর হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। (তাফসিরে মাযহারি)

শবে কদরের আমল হলো: 

১. নফল নামাজ- তাহিয়্যাতুল অজু, দুখুলিল মাসজিদ, আউওয়াবিন, তাহাজ্জুদ, সালাতুত তাসবিহ, তাওবার নামাজ, সালাতুল হাজাত,  সালাতুশ শোকর ও অন্যান্য নফল ইত্যাদি পড়া। 

২. নামাজে কিরাত ও রুকু-সেজদা দীর্ঘ করা। 

৩. কোরআন শরিফ তিলাওয়াত করা। এর মধ্যে সুরা কদর, সুরা দুখান, সুরা মুয্যাম্মিল, সুরা মুদ্দাচ্ছির, ইয়া-সিন, সুরা ত-হা, সুরা আর রহমান ও অন্যান্য ফজিলতের সুরাসমূহ তিলাওয়াত করা

৪. দরুদ শরিফ বেশি বেশি পড়া 

৫. তাওবা-ইস্তিগফার অধিক পরিমাণে করা 

৬. দোয়া-কালাম, তাসবিহ-তাহলিল, জিকির-আজকার ইত্যাদি করা 

৭. কবর জিয়ারত করা 

৮. নিজের জন্য, পিতা-মাতার জন্য, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও সব মোমিন মুসলমানের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং দেশ ও জাতির কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনায় দোয়া করা।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //