জটিল হচ্ছে বাংলাদেশিদের হজে যাওয়ার প্রক্রিয়া

হজ মুসলমানদের জন্য একটি আবশ্যকীয় ইবাদত। এটি ইসলাম ধর্মের চতুর্থ স্তম্ভ। শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য জীবনে একবার হজ সম্পাদন করা ফরজ। আর এই হজ পালন প্রক্রিয়া বাংলাদেশিদের জন্য দিন দিন জটিল হয়ে যাচ্ছে। করোনাভাইরাসের কারণে এবছর হজে যেতে পারছে না বাংলাদেশিরা। আর পরবর্তীতেও হজে যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের কিছু প্রক্রিয়া অতিক্রম করে হজ করতে যেতে হবে।  

মঙ্গলবার (১৫ জুন) সংসদে হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা বিল-২০২১ পাস হয়েছে। এপ্রিল মাসের শুরুতে এটি সংসদে উপস্থাপন করা হয়।এরপর ধর্ম মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটিকে দায়িত্ব দেয়া হয় বিলটির খুঁটিনাটি বিস্তারিত দেখার জন্য। আজ সেটি সংসদে পাশের প্রস্তাব করেন ধর্মপ্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান।

হজে যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের জন্য যা বলা আছে

আইনটিতে বলা হয়েছে হজে যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিকে শারীরিক ও মানসিকভাবে যোগ্য হতে হবে। যোগ্যতা ঘোষিত হতে হবে নির্ধারিত মেডিকেল বোর্ডের মাধ্যমে।

ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান বলেছেন, এক্ষেত্রে জেলার সিভিল সার্জনের কাছে যেতে হবে। তারাই বুঝতে পারবেন কোনো ব্যক্তি শারীরিক ও মনস্তাত্ত্বিকভাবে সুস্থ কিনা। আজকাল মানুষের গড় আয়ু অনেক বেড়েছে। চিকিৎসা সেবার উন্নতির কারণে অনেক বয়স পর্যন্ত মানুষ অ্যাক্টিভ থাকতে পারে।

যদিও হজের সময় দেখা যায় বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অনেক বয়স্ক ব্যক্তিকে শারীরিকভাবে খুব দুর্বল হওয়ায় তাদের হুইলচেয়ারে বহন করা হয়। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে সৌদি আরব এ বছরও শুধুমাত্র সেদেশের নাগরিক ও সেখানে অবস্থানরতদের মধ্যেই হজের সুযোগ সীমিত রেখেছে। তাই এবছরও বাংলাদেশিরা হজে যেতে পারছেন না।

হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা বিল-২০২১ বিলে আরো বলা হয়েছে, ইচ্ছুক ব্যক্তির আর্থিক সচ্ছলতা থাকতে হবে। কিন্তু কীভাবে তা যাচাই হবে সেটি পরিষ্কার নয়। এ ছাড়াও বলা হয়, সরকার নির্ধারিত পদ্ধতিতে নিবন্ধন করতে হবে এবং ইচ্ছুক ব্যক্তিকে নির্ধারিত অর্থ পরিশোধ করতে হবে। সরকারে হজ সম্পর্কে যখন যেসব নির্দেশনা ও শর্ত দেবে - তা সঠিকভাবে পালন করতে হবে।

এজেন্সির ব্যাপারে যা আছে এই বিলে

সৌদি আরব গিয়ে হজ ও ওমরাহ এজেন্সি কোনো অপরাধ করলেও বাংলাদেশে সেই অপরাধের বিচার করার বিধান রাখা হয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, হজের সময় সরকারের লোকজন যায় সবকিছু মনিটর করার জন্য। তারা কোনো অনিয়ম দেখলে ব্যবস্থা নেবে। ফৌজদারি কিছু হলে মামলা বাংলাদেশে হবে। অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় প্রমাণ সাপেক্ষে সবকিছু করা হবে।

কিন্তু দেশের মাটিতেই প্রায়শ নানা অনিয়মের জন্য এজেন্সিগুলোকে শাস্তির আওতায় আনা যায় না। সেক্ষেত্রে বিদেশে অপরাধ করলে সেটি প্রমাণ করার জটিলতা থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়ে যায়।

এছাড়া নিবন্ধন করতে হলে হজ এজেন্সির ক্ষেত্রে চার বছর এবং ওমরাহ এজেন্সির ক্ষেত্রে তিন বছর ট্রাভেল এজেন্সি পরিচালনার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে বলে বিধান রাখা হয়েছে। শুধুমাত্র একটি এজেন্সির নিবন্ধন নেয়া যাবে। কোন ধরনের অনিয়ম করলে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।

কোনো এজেন্সির দায়িত্বে অবহেলার কারণে হজ বা ওমরাহ যাত্রীর কোনো আর্থিক ক্ষতি হলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি যদি অভিযোগ আনেন এবং তা প্রমাণিত হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট এজেন্সিকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

এই নির্দেশনা পালন না করলে এজেন্সির জামানত থেকে জরিমানার অর্থ ক্ষতিপূরণ হিসাবে দেয়া যাবে। যা আইনে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা আদায় করে দেবে।

হজ ব্যবস্থাপনার জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করে এসংক্রান্ত জাতীয় কমিটি গঠন করবে সরকার। হজ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত একটি নির্বাহী কমিটিও তৈরি করা হবে।

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে গত বছর মাত্র ১০০০ ব্যক্তি হজ পালনের সুযোগ পেয়েছিলেন। এবছরও বাংলাদেশ থেকে কেউ হজে যেতে পারছে না। তবে স্বাভাবিক সময়ে প্রতি বছর প্রায় বিশ লাখ মুসলিম হজ পালনের জন্য সৌদি আরবে সমবেত হতেন।

এদিকে চলতি বছরে অনুষ্ঠিতব্য হজ উপলক্ষে তিনটি নতুন প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সৌদি সরকার। এর মধ্যে রয়েছে অনলাইনে নিবন্ধন করে হজে যাওয়ার সুবিধা এবং মাহরাম (পুরুষ অভিভাবক) ছাড়াই নারীদের হজ করার অনুমতি।

এ বছরের হজের রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়েছে রবিবার (১৩ জুন) স্থানীয় সময় দুপুর ১টা থেকে। আগামী ২৩ জুন রাত ১০টা পর্যন্ত অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করা যাবে। তবে আগে আবেদন করা প্রার্থীরা কোনো বিশেষ সুবিধা পাবেন না।

সরকারি এই তিন প্যাকেজের জন্য ব্যয় হবে যথাক্রমে ১৬,৫৬০.৫০ সৌদি রিয়াল (৪,৪২৬ ডলার), ১৪,৩৮১.৯৫ রিয়াল ও ১২,১১৩.৯৫ রিয়াল। প্রতিটি প্যাকেজের সঙ্গেই ভ্যাট যুক্ত হবে।

সৌদির হজ ও উমরাহ মন্ত্রণালয় তাদের ওয়েবসাইটে আরও ঘোষণা দিয়েছে, যাত্রীদের বাসে করে নেয়া হবে এবং এক গাড়িতে ২০ জনের বেশি মানুষ বহন করা যাবে না।

আবেদন করার ক্ষেত্রে আগ্রহীদের পাঁচটি ধাপ পার হতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে হজযাত্রা পর্যালোচনা করা এবং ব্যক্তির স্বাস্থ্য সম্পর্কিত ও অন্যান্য বিস্তারিত তথ্য নেয়া। এর পরে জাতীয় তথ্য অধিদপ্তরের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে আবেদনকারীর যোগ্যতা যাচাই করা হবে।

আবেদন গ্রহণের পর আবেদনকারীকে পরবর্তী তথ্যানুসন্ধানের জন্য একটি রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেয়া হবে। ব্যক্তির কভিড-১৯ সম্পর্কিত অবস্থা বিবেচনার পর টাকা পরিশোধের একটি বিস্তারিত বার্তা তাকে জানানো হবে।

তবে মন্ত্রণালয় এও জানিয়েছে, নিবন্ধন করা মানেই একজন ব্যক্তিকে হজের অনুমতি দিয়ে দেয়া নয়। স্বাস্থ্যবিধি ও নিয়ম মেনে সকল শর্ত পূরণের পরেই হজের অনুমতি পাওয়া যাবে।

এছাড়াও, আবেদন করার আগেই আবেদনকারীকে নিশ্চিত হতে হবে, তিনি বিগত ৫ বছরে কোনো হজ পালন করেননি, কভিড-১৯ আক্রান্ত নন এবং শরীরে কোনো দুরারোগ্য রোগ নেই। বিগত ছয় মাসের মধ্যে দুরারোগ্য রোগ বা ডায়ালাইসিসের জন্য হাসপাতালে ভর্তির রেকর্ডও থাকা যাবে না এবং বয়স হতে হবে ১৮ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে।   

এর আগে, গত শনিবার সৌদি আরব সরকার ঘোষণা দেয়, জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে অনুষ্ঠিতব্য হজের জন্য এবার ৬০,০০০ হজযাত্রীকে অনুমোদন দেয়া হবে। হাজি নির্বাচন করার প্রক্রিয়া শুরু হবে আগামী ২৫ জুন থেকে এবং নির্বাচিত হওয়ার তিন ঘণ্টার মধ্যেই হাজিদেরকে তাদের প্যাকেজের মূল্য পরিশোধ করতে হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //