পালিয়ে বিয়ে, ইসলাম কী বলে?

ইসলামে পারিবারিক বন্ধন গুরুত্বপূর্ণ। ফলে পারিবারিক মূল্যবোধের জায়গা থেকে বিয়ের ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের অভিমত ও বংশীয় মর্যাদাও অত্যন্ত জরুরি। তাই এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদের কিছু অধিকার দেওয়া হয়েছে। কারণ, অভিভাবকহীন বিয়েতে কখনো কখনো দেখা যায়- ‘কুফু’ বা সমতা রক্ষা হয় না। আর সে ক্ষেত্রে বংশের অপমান হয়।

বিয়ের ক্ষেত্রে শরিয়ত অনুযায়ী অভিভাবকের অভিমত গুরুত্বপূর্ণ। এক হাদিসে এ বিষয়ে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘অভিভাবক ছাড়া বিয়ে সংঘটিত হয় না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১১০১; আবু দাউদ, হাদিস : ২০৮৩)

আর অভিভাবকহীন বিয়ে বা গোপন বিয়ে অসামাজিক ও অকৃতজ্ঞতাপূর্ণ কাজ। এ জন্য বিয়ের ক্ষেত্রে গোপনীয়তা ইসলাম পছন্দ করে না। এছাড়াও গোপন বিয়েতে বহু বিপত্তি রয়েছে। তাই ইসলামের নির্দেশনা হলো, ‘বিয়ে করবে- ঘোষণা দিয়ে।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৪/৫)

গোপনে বিয়ে করে ফেললে কি বিয়ে হয়ে যাবে?

তবে এ ধরনের বিয়ে নিন্দনীয় হলেও গোপনে বিয়ে করে ফেললে- বিয়ে হয়ে যাবে, তখন এই বন্ধন অবশ্যই রক্ষা করতে হবে। কেননা বিয়ে কোনো ছেলেখেলা নয়, বরং এটি নারী-পুরুষের সারা জীবনের পবিত্র বন্ধন। তাই গোপনে বিয়ে করে ফেললেও তালাকের পথে পা বাড়াবেন না।

ইসলামে তালাকের সুযোগ রাখা হয়েছে খুবই অপছন্দনীয়ভাবে। স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সম্পর্ক যখন তিক্ত পর্যায়ে চলে যায় এবং সমাধানের কোনো পথ থাকে না, তখনই তালাক দেওয়া হয়ে থাকে। তারপরও ইসলামে তালাক একটি জঘন্যতম কাজ। আল্লাহর রাসুল (সা.) এটিকে ঘৃণা করতেন। হাদিসে এসেছে, ‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে ঘৃণিত বৈধ বিষয় হলো তালাক।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২১৭৭)

পরিবারের কথায় বউকে কি তালাক দেওয়া যায়?

এ জন্য অতীব প্রয়োজন (যা ইসলামের দৃষ্টিতে যৌক্তিক) ছাড়া স্বামীর জন্য তালাক দেওয়া জায়েজ নয়, স্ত্রীর জন্যও তালাক চাওয়া বৈধ নয়। স্বামী এ ক্ষেত্রে নিছক মা-বাবার চাপ বা বল প্রয়োগের কারণে তা প্রয়োগ করতে পারবে না। কারণ, সৃষ্টির আনুগত্যের সীমারেখা বর্ণনা করতে গিয়ে রাসুল (সা.) বলেন, ‘অসৎ কাজে আনুগত্য নয়, আনুগত্য শুধু সৎ কাজের ক্ষেত্রেই হতে হবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭১৪৫)

সুতরাং কেউ গোপনে বিয়ে করে ফেললে- মা-বাবার সঙ্গে এ বিষয়ে খোলাখুলি আলোচনা করা জরুরি। তাদের বুঝিয়ে-সুঝিয়ে বলতে হবে যে অভিভাবককে না জানিয়ে যে বিয়ে করেছে, তার শাস্তি সে পেতে পারে, তার স্ত্রী নয়। এর প্রতিকার হিসেবে তালাকের মতো দুর্ঘটনা ঘটলে তা হবে আরেকটি অন্যায়।

পিতামাতার কথায় যখন তালাকের অনুমোদন রয়েছে

এরপরও যদি তারা তালাকের কথা বলে, তাহলে দেখুন, তাদের কথা সঠিক ও যুক্তিসংগত কি না? যদি তাদের কথা সঠিক ও যুক্তিসংগত হয় এবং সে কারণে তালাক ছাড়া আর কোনো পথ বাকি না থাকে, পাশাপাশি যদি তালাক দেওয়ার দ্বারা তার ব্যভিচারে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা না থাকে, তাহলে মা-বাবার সন্তুষ্টির জন্য স্ত্রীকে তালাক দেওয়া যাবে।

আবদুল্লাহ বিন ওমর (রা.) বলেন, ‘আমার একজন স্ত্রী ছিল। যাকে আমি ভালোবাসতাম। কিন্তু আমার বাবা (যৌক্তিক কারণে) তাকে পছন্দ করতেন না। তিনি আমাকে তাকে তালাক দিতে বলেন। কিন্তু আমি তালাক দিতে অস্বীকৃতি জানালাম। তখন আমার বাবা রাসুল (সা.)-এর কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করেন এবং এর যৌক্তিক কারণ ব্যাখ্যা করেন। তখন রাসুল (সা.) বলেন, তাকে তালাক দিয়ে দাও। ফলে আমি তাকে তালাক দিই।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৪৭১২, আবু দাউদ, হাদিস : ৫১৩৮)

পক্ষান্তরে তালাকের কারণ যদি যৌক্তিক না হয়, তাহলে তালাক দেওয়া জায়েজ হবে না। কারণ, বিনা কারণে সংসার ভেঙে ফেলা- ইসলাম কোনোভাবেই সমর্থন করে না।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

বিষয় : ইসলাম বিয়ে

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //