দৃষ্টিশক্তির সংযম ও হেফাজতের গুরুত্ব

দৃষ্টিশক্তি মহান আল্লাহ তায়ালার অন্যতম নিয়ামত। যার চোখে আলো নেই, দেখার শক্তি নেই, সে-ই বোঝে এ অপার নেয়ামতের মূল্য। সারা পৃথিবীর ধনভান্ডার, সৌন্দর্য্য দৃষ্টিশক্তি ছাড়া অর্থহীন। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে এই অনন্য নেয়ামতের আলোচনা বহুবার করেছেন, যাতে মানুষ এ নেয়ামতের যথাযথ মূল্যায়ন করে, কৃতজ্ঞচিত্তে এর সদ্ব্যবহার করে, হারাম দৃষ্টিপাত থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকে। 

ইরশাদ হয়েছে, ‘হে নবী! আপনি বলে দিন, তিনিই তোমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদেরকে দিয়েছেন শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি ও অন্তঃকরণ। তোমরা খুব সামান্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাকো’ (সুরা মূলক: ২৩)। আল্লাহ না করুন, যদি এ দৃষ্টিশক্তি তিনি ছিনিয়ে নেন, তাহলে সারা পৃথিবীর বিনিময়েও কি তা ফিরিয়ে আনা সম্ভব? আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আপনি বলুন, তোমরা আমাকে একটু বলো তো, আল্লাহ যদি তোমাদের শ্রবণশক্তি এবং তোমাদের দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নেন এবং তোমাদের অন্তরে মোহর করে দেন, তবে আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ আছে, যে তোমাদেরকে এগুলো ফিরিয়ে দেবে?’ (সুরা আনআম: ৪৬)

দৃষ্টিশক্তির সদ্ব্যবহার ও অপব্যবহার

চোখের নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও সদ্ব্যবহার হলো হারাম বস্তু না দেখা, পরনারী থেকে দৃষ্টি সংযত রাখা, অভিশপ্ত নর্তকীদের নাচ-গান, ব্লু ফিল্ম, পর্নোগ্রাফি ইত্যাদি জীবনবিধ্বংসী অশ্লীলতা দেখা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকা। এ সবই অভিশপ্ত শয়তানের পাতানো ফাঁদ। যে এ ফাঁদে পা রাখবে তার ধ্বংস অনিবার্য। এ ছাড়াও চোখে দেখে কুরআন তেলাওয়াত, দ্বীনি বই-পুস্তক অধ্যয়ন এবং খাঁটি আল্লাহওয়ালাদের সংস্রব লাভে তাদের চেহারায় দৃষ্টিপাত চোখের সদ্ব্যবহারের অন্তর্ভুক্ত। সেই সঙ্গে পিতামাতার প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা ও অনুকম্পার দৃষ্টিতে তাকানো, প্রিয়তমা স্ত্রীর প্রতি অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভালোবাসার আদান-প্রদান, সন্তানদেরকে স্নেহ-মমতার দৃষ্টিতে অবলোকন এবং অন্যান্য মানুষকে কল্যাণকামিতা ও শুভ কামনার সঙ্গে দেখা ইত্যাদির মাধ্যমেও দৃষ্টিশক্তির সদ্ব্যবহার করা যায়।

চোখের সদ্ব্যবহারে পৃথিবীতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা আল্লাহর সৃষ্টিরাজি দেখে তা থেকে শিক্ষা নেওয়া এবং স্রষ্টার পরিচয় লাভ করাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এ মর্মে পবিত্র কুরআনের বাণী খুবই চমৎকার, ‘তারা কি দৃষ্টিপাত করে না উটের দিকে, কীভাবে তা সৃষ্টি করা হয়েছে? এবং আকাশের দিকে, কীভাবে তা ঊর্ধ্বে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে? পর্বতমালার দিকে, কীভাবে তা স্থাপন করা হয়েছে? ভূমির দিকে, কীভাবে তা বিস্তৃত করা হয়েছে?’ (সুরা গাশিয়াহ : ১৭-২০) 

কুনজর শয়তানের মোক্ষম হাতিয়ার

কুনজর দেহ-মনে নিক্ষিপ্ত এক বিষাক্ত তীর, যা প্রথমে হৃদয়ে বিদ্ধ হয় তারপর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে এর বিষক্রিয়া। ইবলিশ মানবজাতিকে পথভ্রষ্ট করার জন্য যারপরনাই পাঁয়তারা করে। এসবের মধ্যে কুনজর তার মোক্ষম হাতিয়ার। এটাকে কাজে লাগিয়ে সে প্রথমে মানব-মনে কুমন্ত্রণা ও কুচিন্তা সৃষ্টি করে, যা জন্ম দেয় কুপ্রবৃত্তি। এবার এই প্রবৃত্তি দেহ-মনে লাগিয়ে দেয় যৌবনের উন্মাদনার ভয়াবহ আগুন, যা জ্বালিয়ে ভস্ম করে দেয় মানুষের চারিত্রিক পবিত্রতা, আত্মিক প্রশান্তি এবং দৈহিক শক্তি। সে সৃষ্টির সেরা মানবকে জনসমাজে ধিক্কৃত, অপদস্থ ও লাঞ্ছিত করে।

যারা কামভাব নিয়ে পরনারীর প্রতি তাকিয়ে থাকে তাদের ইহজীবন যেমন অশান্তি, অস্থিরতা ও বেদনায় পর্যুদস্ত হয়, তেমনি পরকালীন জীবনও হয় অসহনীয় শাস্তি ও দুঃখ-কষ্টে লণ্ডভণ্ড। আবদুল্লাহ ইবনে মাসুদ সূত্রে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) মহান আল্লাহর ভাষ্য বর্ণনা করেন এভাবে- ‘দৃষ্টিপাত ইবলিশের বিষাক্ত তীরগুলোর একটি। যে ব্যক্তি আমার ভয়ে তা পরিত্যাগ করে, বিনিময় হিসেবে তাকে ঈমানের এমন অপার্থিব স্বাদ আস্বাদন করাই, যা সে তার অন্তরে অনুভব করে।’ (আতারগিব ওয়াত তারহিব: ৩/৮৬) 

গোপন বিষয়ে দৃষ্টিপাত অপরাধ

ইসলামের অনুপম শিক্ষা হলো, শরয়ি কারণ ছাড়া অন্যের ব্যক্তিগত গোপনীয় বিষয় দেখা জায়েজ নয়। যেমন- কারও মোবাইলের মেসেজ, ইনবক্স, মেসেঞ্জার, গ্যালারি ইত্যাদি চেক করা নিষেধ। একইভাবে কারও ব্যক্তিগত তথ্য, চিঠিপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করা, পরীক্ষার হলে একে অপরের উত্তর দেখে কপি করা, কারও ঘরে সদর দরজা কিংবা জানালা দিয়ে উঁকি দেওয়া বৈধ নয়।

মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যদি কেউ তোমার ঘরে তোমার অনুমতি ব্যতীত উঁকি মারে আর তুমি পাথর মেরে তার চক্ষু ফুটো করে দাও, তাতে তোমার কোনো গুনাহ হবে না’ (বুখারি: ৬৮৮৮)। এ ছাড়াও নারী-পুরুষ একে অপরের সতরের দিকে তাকানো নাজায়েজ। পুরুষের সতর হচ্ছে নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত। নারীর সতর মাহরামদের সামনে মুখাবয়ব, হাতের কবজি এবং পায়ের টাখনু ছাড়া বাকি দেহ। আর গায়রে মাহরামের সামনে পূর্ণ শরীর।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //