বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব

লাখো মুসল্লিতে মুখরিত তুরাগ তীর

তাবলীগ জামাতের ৫৬তম বিশ্ব ইজতেমা শুরুর একদিন আগেই টঙ্গীর তুরাগ নদের তীর দেশ ও বিদেশের লাখো মুসল্লিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে। যদিও আগামীকাল শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ধর্মীয় এ আয়োজনের প্রথম পর্ব শুরু হবে।

এর আগে, আজ বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) সকালে ইজতেমা মাঠে সরেজমিনে দেখা গেছে, ময়দানের প্রায় দুই তৃতীয়াংশ জায়গা ইতোমধ্যে পূরণ হয়ে গেছে।

প্রচণ্ড শীত উপেক্ষা করে মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানের চটের ছাউনির নিচে অবস্থান নিয়েছেন। তারা নিজ নিজ জেলার খিত্তায় অবস্থান করছেন।

জানা যায়, এবার ইজতেমা ময়দানকে ৯১টি খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। ১৬০ একর খোলা ময়দানে বাঁশের খুঁটির ওপর পাটের চট দিয়ে টানানো হয়েছে বিশাল প্যান্ডেল। বিদেশি মেহমানদের জন্য টিনের ছাউনি দিয়ে আবাসস্থল করা হয়েছে।

আগামীকাল শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) বাদ ফজর থেকে আম বয়ানের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়ে ধারাবাহিকভাবে চলবে তিনদিন। পরে আগামী রবিবার (১৫ জানুয়ারি) আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে প্রথম পর্বের আয়োজন।

ইজতেমায় আগত সাধারণ মানুষের ইজতেমা ময়দানে প্রবেশের সুবিধার্থে ম্যাপ তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষের জন্য বিভিন্ন প্রকারের নির্দেশনা টানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এছাড়াও বিভিন্ন পরিকল্পনা করে কোন বিভাগের গাড়ি কোথায় পার্কিং করা থাকবে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা, কোন রাস্তা কখন খোলা বা কখন বন্ধ থাকবে সে নির্দেশনাও প্রদান করা হয়েছে।

ইজতেমার নিরাপত্তার জন্য ওয়াচ টাওয়ার ও সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সাদা পোশাক ও পোশাকে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী নিয়োজিত রয়েছে। ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ বিভাগ ১৪টি কন্ট্রোলরুম তৈরি করেছে। র‌্যাবের কন্ট্রোলরুম রয়েছে। ডিএমপিও তার এলাকায় কন্ট্রোলরুম খুলছে।

এছাড়া রয়েছে এসবি, এটিও, সিআইডি, নৌপুলিশ, রয়েছে অবজারভারভেশন টিম, র‌্যাবের হেলিকপ্টার টহল, ডগ স্কোয়াড টিম, মোবাইল পেট্রোল এবং বোম ডিস্পোজাল টিম।

বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের মিডিয়া সমন্বয়কারী মুফতি জহির ইবনে মুসলিম জানান, বিদেশিরা ইজতেমা ময়দানের উত্তর-পশ্চিম পাশে অবস্থান নিচ্ছেন। বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৬টি দেশের প্রায় দেড় হাজার বিদেশি এসে ময়দানে অবস্থান নিয়েছেন। তাদের পাশাপাশি একই সময়ে দেশের প্রায় সব জেলা থেকে লাখো মুসল্লি এসে ময়দানে নির্ধারিত খিত্তায় হাজির হয়েছেন।

মোনাজাতের দিন সুষ্ঠুভাবে আখেরি মোনাজাত ও জুম্মার নামাজ যাতে মুসল্লিরা সুষ্ঠুভাবে অংশ নিতে পারে সেজন্য সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দায়িত্ব পালন করবেন। মুসল্লিরা যেন নির্ভয়ে-নিরাপদে বিশ্ব ইজতেমায় সব কার্যক্রমে অংশ নিতে পারেন সে জন্য প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে আগে থেকেই।

ইজতেমায় আসা যাওয়ার জন্য দুই পর্বেই পাঁচ জোড়া বিশেষ ট্রেন সার্ভিস চালু করেছে রেলওয়ে।

গাজীপুরের স্বাস্থ্য বিভাগের সকলের ছুটি বাতিল করা হয়েছে ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত। এছাড়া ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের জন্য হাসপাতালগুলোতে অতিরিক্ত শয্যা স্থাপন করা হয়েছে। শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা এবং ওষুধ বিতরণ করবে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলাম জানান, প্রায় সাড়ে ৭ হাজার পুলিশ ও র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ইজতেমার নিরাপত্তায় নিয়োজিত। কয়েকটি স্তরের এ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ইজতেমা ঢেকে রাখা হয়েছে।

এছাড়া কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যেন ঘটতে না পারে, সে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হয়েছে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে মুসল্লিদের ঢল। ছবি: সংগৃহীত

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //