'ধরি মাছ না ছুঁই পানি' পরিস্থিতিতে হজযাত্রীরা

চলতি বছরে চরম বিপাকে পড়েছেন হজযাত্রীরা। ধরি মাছ না ছুঁই পানি- এমন অবস্থায় পড়েছেন তারা। হজ যাত্রায় ব্যয়ের হিসেবে গত বছরের হিসাবে কষে অনেকে হজের প্রাক-নিবন্ধন করেছেন। তারপরেই দেখলেন চলতি বছরে বারিয়ে দেয়া হলো হজের খরচ। এখন মূল নিবন্ধন করতে সাহস পাচ্ছেন না অনেকে। হজের নিয়ত করে পিছুটান দেওয়াকেও অনেকে সঠিক মনে করছেন না। সবমিলিয়ে এক দ্বান্দ্বিক পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছেন হজযাত্রীরা।

এভাবেই রাজধানীর বাসাবো বসবাসকারী হজপালনে প্রত্যাশী আবদুল হালিম নিজের অভিব্যক্তি তুলে ধরেন।

এদিকে, গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে হজের খরচ বেড়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৬৭৫ টাকা। বাড়তি খরচের কারণে আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও অনেকেই হজযাত্রা থেকে বিরত থাকছেন। এর প্রমাণ মিলেছে হজের নিবন্ধনে। এ বছর বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজে যেতে পারবেন। নিবন্ধনের সময়সীমা ২২ ফেব্রুয়ারি শেষ হলেও ১২ শতাংশ হজযাত্রীও নিবন্ধন সম্পন্ন করেননি। এতে হজের কোটা পূরণ না হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বাধ্য হয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নিবন্ধনের সময়সীমা বৃদ্ধি করেছে মন্ত্রণালয়। এই সময়সীমা আরও বৃদ্ধি করা হবে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার ও অবশিষ্ট ১ লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ করার সুযোগ পাবেন। বৃহস্পতিবার ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকারিভাবে হজে যাওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন ৪ হাজার ৮৯২ জন। আর বেসরকারিভাবে হজে যাওয়ার জন্য নিবন্ধনে করেছেন ১১ হাজার ৭৫৭ জন।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ অনু বিভাগ বলছে, খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় হজে যেতে আগ্রহীদের কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু কোটা পূরণে সমস্যা হবে না। নিবন্ধনের সময় আরও বাড়ানো হবে। ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনই হজে যাবেন বলে আশা তাদের।

হজের কয়েক মাস আগে হজ এজেন্সিগুলো ব্যস্ত সময় পার করলেও এবার দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। বেশিরভাগ অফিসে তেমন ব্যস্ততা নেই।

এজেন্সিগুলো বলছে, যারা প্রাক-নিবন্ধন করেছেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও আশানুরূপ সাড়া মিলছে না। নিবন্ধনের সময় চলে যাচ্ছে, তবু তারা কেন নিবন্ধন করছেন না, জানতে খোঁজ নিচ্ছেন। ৯৯ ভাগ ক্ষেত্রে উত্তর আসছে, খরচ বেড়ে যাওয়ায় এ বছরে হজে যেতে পারবেন না।

গত ১ ফেব্রুয়ারি হজ প্যাকেজ ঘোষণা করে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা। ২ ফেব্রুয়ারি সরকারি প্যাকেজ থেকে ১০ হাজার টাকা কমিয়ে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় প্যাকেজ ঘোষণা করে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব)। হাব নির্ধারিত হজ প্যাকেজের সর্বনিম্ন প্যাকেজ ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা।

হজ এজেন্সি মালিকরা বলছেন, ক্রমাগত খরচ বাড়ায় হজযাত্রীদের আর্থিক চাপ বেড়েছে। অনেকে প্রস্তুতি নিয়েও শেষ পর্যন্ত হজে যেতে পারবেন না। প্রতি বছর নির্ধারিত কোটার চেয়ে বেশি মানুষ হজে যেতে প্রাক-নিবন্ধন করেন। এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৬৫ হাজার ৭৩৮ জন প্রাক-নিবন্ধন করেছেন। কিন্তু খরচ বেড়ে যাওয়ায় প্রাক-নিবন্ধন করলেও অনেকে নিবন্ধন করছেন না। ধর্ম মন্ত্রণালয় নিবন্ধনের সময় বাড়ালেও লাভ কী। খরচ যে হারে বেড়েছে তাতে যারা যাবেন না, তারা তো আর সিদ্ধান্ত বদলাবেন না। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিমান ভাড়াসহ হজের খরচ পুনর্নির্ধারণ করা জরুরি। গত বছর হজযাত্রীদের জন্য বিমান ভাড়া ছিল ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এ বছর তা ৫৮ হাজার বাড়িয়ে ১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। হজের বিমান ভাড়া কমিয়ে পুনর্নির্ধারণ করতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছে অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব)। ১৪ ফেব্রুয়ারি আটাব বিমান ভাড়াসহ প্যাকেজ মূল্য পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিত আবেদন করে। 

এ প্রসঙ্গে আটাবের মহাসচিব আবদুস সালাম আরেফ বলেন, নিবন্ধনের জন্য আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। হজের খরচ অনেক বেড়ে যাওয়ায় জায়গা-জমি বিক্রি করা ছাড়া অনেকের পক্ষে হজ করা সম্ভব হবে না। খরচ বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই এ বছর হজে যেতে পারছে না বলে জানিয়েছেন। নতুনরাও আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এ কারণে হজযাত্রীদের জন্য বিমান ভাড়া ও হজের খরচ পুনরায় সহনীয় মাত্রায় নির্ধারণে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে। আশা করি প্রধানমন্ত্রী সদয় দৃষ্টি দেবেন।

হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, হজের খরচ কমানোর বিষয়টি নিয়ে আমরাও সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

এ বিষয়ে হজ অনু বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মতিউল ইসলাম জানান, মানুষের একটু সমস্যা আছে, অনেকের টাকা জোগার করতে সময় লাগে, এ জন্য হয়তো নিবন্ধন করতে সময় নিচ্ছে। তবে কোটা পূরণ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২১ বা ২২ মে হজ ফ্লাইট শুরু হবে। প্রথম দিনই একাধিক ফ্লাইট পরিচালনা করার টার্গেট রয়েছে। তিনি জানান, সৌদি আরবের দেওয়া শর্তানুয়ায়ী হজযাত্রীকে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯), মেনিনজাইটিস এবং সিজনাল ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা দিতে হবে।

হজ ফ্লাইট শুরু ২১ বা ২২ মে : চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজে যেতে পারবেন। এর মধ্যে বিমান পরিবহন করবে ৬৩ হাজার ৫৯৯ জন। আর সৌদি এবং ফ্লাইনাস পরিবহন করবে ৬৩ হাজার ৫৯৯ হজ যাত্রী।

জানা গেছে, নিজস্ব উড়োজাহাজ দিয়ে হজ ফ্লাইট পরিচালনার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। বিমানের জনসংযোগ দফতর জানিয়েছে, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২১ বা ২২ মে হজের প্রথম ফ্লাইট শুরু করার সব প্রস্তুতি নেওয়া আছে। বিমানের প্রস্তুতি আছে ৬৬ হাজার ৭০৯ জন হজযাত্রী পরিবহনের। প্রি-হজ ফ্লাইটের সময়সীমা ২১ মে থেকে ২২ জুন ২০২৩। পোস্ট হজ ফ্লাইট ২ জুলাই থেকে ২ আগস্ট পর্যন্ত। হজ ফ্লাইটে বিমানের নিজস্ব ৭৭৭-৩০০ ইআর এবং বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার ব্যবহৃত হবে। ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রাম ও সিলেট থেকে সরাসরি হজযাত্রী পরিবহন করা হবে। ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রাম থেকে মোট ১৬০টি হজ ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। ফিরতি ফ্লাইট সংখ্যা এখনও নির্ধারিত হয়নি।


সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //