জুমার দিনে যেসব কাজ নিষিদ্ধ

জুমাবার মুসলমানদের কাছে বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ দিন। এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘দিবসসমূহের মধ্যে জুমার দিন শ্রেষ্ঠ এবং তা আল্লাহর কাছে অধিক সম্মানিত।’ (ইবনে মাজাহ: ১০৮৪)। জুমার নামাজ ও এদিনের অন্যান্য আমলগুলো বিশেষ ফজিলতপূর্ণ হলেও অনেকের জুমার নামাজ কোনো কাজে আসবে না বলে সাবধান করা হয়েছে হাদিসে।

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘জুমার সালাতে তিন ধরনের লোক হাজির হয়। এক ধরনের লোক আছে যারা মসজিদে প্রবেশের পর তামাশা করে, তারা বিনিময়ে তামাশা ছাড়া কিছুই পাবে না। দ্বিতীয় আরেক ধরনের লোক আছে যারা জুমায় হাজির হয় সেখানে দোয়া মোনাজাত করে, ফলে আল্লাহ যাকে চান তাকে কিছু দেন আর যাকে ইচ্ছা দেন না। তৃতীয় প্রকার লোক হল যারা জুমায় হাজির হয়, চুপচাপ থাকে, মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনে, কারও ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনে আগায় না, কাউকে কষ্ট দেয় না, তার দুই জুমার মধ্যবর্তী ৭ দিনসহ আরো তিনদিন যোগ করে মোট দশ দিনের গুনাহ খাতা আল্লাহ তাআলা মাফ করে দেন।’ (আবু দাউদ: ১১১৩)

উল্লেখিত হাদিস অনুযায়ী, তামাশাকারীরা বিনিময়ে তামাশাই পাবে। ইমামের খুতবার সময় কথাবার্তা বলা, মুসল্লিদের টপকে সামনে আগানোকে নবীজি খুবই অপছন্দনীয় কাজ বলেছেন। তাদের ব্যাপারে বলা হয়েছে, তারা জুমা থেকে ফায়দা নিতে পারে না। ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণিতি হাদিসে প্রিয়নবী (স.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিনে ইমামের খুতবার সময় কথা বলে, সে যেনো পুস্তক বহনকারী গাধার মতো! অন্যত্র তিনি শুনেছেন- তার কোনো জুমা নেই (অর্থাৎ তার জুমা বরবাদ হলো) (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ২/১৮৪, হাদিস: ৩১২৩, ৩১২৫)

পাশে কেউ কথা বললে তাকে ‘চুপ করো’ বলতেও নিষেধাজ্ঞা এসেছে হাদিসে। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, জুমার দিন খুতবা চলা অবস্থায় যদি তোমার পাশের সাথীকে বলো- চুপ করো, তাহলে তুমি একটি অনর্থক কাজ করলে। (সহিহ বুখারি: ৯৩৪, সহিহ মুসলিম: ৯৩১)

একইভাবে খুতবার সময় দানবাক্স চালানো অনর্থক ও গুনাহের কাজ বলে বিবেচিত হবে। ফতোয়ার কিতাবে এসেছে, খুতবার সময় বাক্স চালানো নিষিদ্ধ; নিষিদ্ধ কাজে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত হওয়াও নিষিদ্ধ। (হেদায়া: ১/২৩১-২৩২, আদ্দুররুল মুখতার: ৬/৩৬০, ফতোয়ায়ে দারুল উলুম: ৫/১২১, ফতোয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত: ৪/৪০১)

অন্যদিকে ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে উত্তম পোশাক পরিধান করে, সুগন্ধি থাকলে তা ব্যবহার করে, জুমার নামাজে আসে এবং অন্য মুসল্লিদের গায়ের ওপর দিয়ে টপকে সামনের দিকে না যায়, নির্ধারিত নামাজ আদায় করে, ইমাম খুতবার জন্য বের হওয়ার পর থেকে সালাম পর্যন্ত চুপ করে থাকে তার এই আমল আগের জুমা থেকে পরের জুমা পর্যন্ত সব ছোট পাপ মোচন হবে।’ (আবু দাউদ: ৩৪৩)

অতএব, জুমার দিন মুসল্লিদের কর্তব্য হলো- আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সুন্দরভাবে নিঃশব্দে মসজিদে গিয়ে যেখানে জায়গা থাকবে সেখানে অবস্থান নেওয়া; সময় থাকলে সুন্নাত নামাজ পড়া এবং কাউকে কষ্ট না দিয়ে, কারো ঘাড় টপকে সামনে না গিয়ে চুপচাপ ইমামের খুতবা শোনা এবং নামাজ পড়া। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে হাদিসের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //