ভবিষ্যতে ট্রিলিয়ন ডলার হারাতে পারে শিক্ষার্থীরা

করোনা মহামারী আঘাত হানার পর স্মরণকালের ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়ে বিশ্ব। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে অন্যান্য কার্যক্রমের পাশাপাশি বন্ধ করে দেয়া হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বিশ্বজুড়ে প্রায় ১৭ কোটি শিক্ষার্থীর বিদ্যালয়গুলো বছরজুড়ে বন্ধ ছিল। এ পরিস্থিতিতে অনলাইনে কিছু শিক্ষা কার্যক্রম স্থানান্তর করা হয়। যদিও সেখানে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ সমান ছিল না। মহামারীতে দীর্ঘ সময় ধরে বিদ্যালয় বন্ধ থাকা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ উৎপাদনশীলতা ও আয়কে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বলেছে, উন্নয়নশীল এশিয়ার জন্য শিশুদের এ হারানো আয়ের বর্তমান মূল্য ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি ডলার।

গতকাল প্রকাশিত ‘এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এডিবি জানিয়েছে, বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় এ অঞ্চলের শিশুরা শিক্ষাবর্ষের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ হারিয়েছে। এজন্য তাদের ভবিষ্যতের উপার্জন ২ দশমিক ৪ শতাংশ কিংবা বছরে ১৮০ ডলার করে কমে যেতে পারে। আয়ের এ ক্ষতি অঞ্চলটির ২০২০ সালের উৎপাদনের ৫ দশমিক ৪ শতাংশের সমান।

হাতেগোনা কয়েকটি বৃহৎ অর্থনীতি বিদ্যালয়গুলো অবিচ্ছিন্নভাবে চালু রাখতে সক্ষম হয়েছিল। এডিবি জানিয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় বেশি সময় ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। শিক্ষার্থীরা অর্ধবছরেরও বেশি সময় ধরে বিদ্যালয়ের পড়াশোনা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এক্ষেত্রে পূর্ব এশিয়ার শিক্ষার্থীরা বছরের ৩৯ শতাংশ এবং দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার শিক্ষার্থীরা বছরের ৩৫ শতাংশ সময় বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে ছিল।

মহামারীর শুরুতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে বিশ্বজুড়েই শিক্ষা কার্যক্রম অনলাইনে স্থানান্তরিত হয়। তবে এক্ষেত্রেও তৈরি হয় তীব্র বৈষম্য। উন্নত দেশের ও শহুরে শিক্ষার্থীরা অনলাইনে পড়াশোনার সুযোগ পেলেও অনুন্নত দেশ এবং গ্রামের শিক্ষার্থীরা ডিজিটাল ডিভাইস ও ইন্টারনেটের বাইরে থাকায় এ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। 

ম্যানিলাভিত্তিক ঋণদানকারী সংস্থাটি বলেছে, অনেক শিক্ষার্থী কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের মতো বিষয়গুলো ব্যবহারে বাধার মুখোমুখি হয়েছে। এটা বাড়িতে থাকাকালীন তাদের শেখার ক্ষমতা সীমাবদ্ধ করেছে।

এদিকে শিশুদের নিয়ে কাজ করা জাতিসংঘের সংস্থা ইউনিসেফ জানিয়েছে, করোনা মহামারীজনিত লকডাউনের কারণে বিশ্বজুড়ে ১৬ কোটি ৮০ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থীর বিদ্যালয়গুলো বছরজুড়েই বন্ধ ছিল। পাশাপাশি ২১ কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থী তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি বিদ্যালয়ের সরাসরি শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

বিদ্যালয় বন্ধের এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে ১৪টি দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে। দেশগুলোর দুই-তৃতীয়াংশই লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের। এতে ৯ কোটি ৮০ লাখ শিক্ষার্থী প্রভাবিত হয়েছে। ১৪টি দেশের মধ্যে পানামায় বেশির ভাগ দিনই বিদ্যালয়গুলো বন্ধ ছিল। এর পরেই রয়েছে এল সালভাদর, বাংলাদেশ ও বলিভিয়া।

বিদ্যালয় বন্ধের বিষয়টি শিশুদের পড়াশোনা ও সুস্থতার ক্ষেত্রেও ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলেছে। দূরবর্তী শিক্ষায় (রিমোট লার্নিং) অংশগ্রহণ করতে না পারা শিক্ষার্থীরা কখনো ক্লাসরুমে ফিরে না আসা এবং এমনকি বাল্যবিবাহ ও শিশুশ্রমে বাধ্য হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। 

ইউনেস্কোর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, পুরো ও আংশিকভাবে বিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারণে বিশ্বজুড়ে ৮৮ কোটি ৮০ লাখেরও বেশি শিশুর পড়াশোনা বাধার মুখে পড়েছে।

বিশ্বজুড়ে শিক্ষার্থীদের জন্য বিদ্যালয়গুলো এমন এক স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়, যেখানে তারা তাদের সহপাঠীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে, সহায়তা চাইতে পারে, টিকাদান কার্যক্রমে অংশ নিতে পারে এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে পারে। সুতরাং যত বেশি সময় ধরে বিদ্যালয়গুলো বন্ধ থাকবে, তত বেশি সময় ধরে শিশুরা শৈশবকালীন এ জটিল বিষয়গুলো থেকে বিচ্ছিন্ন থাকবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //