বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা-গবেষণায় নবযাত্রা

স্বাধীনতার পর উচ্চশিক্ষায় একটা সংকট দেখা দেয়। ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর, বুয়েট, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ মাত্র সাত-আটটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষার চাহিদা মেটানো কঠিন হয়ে পড়ে। তাই আশির দশকে উচ্চশিক্ষার জন্য শিক্ষার্থীরা যেতে শুরু করেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। কেবল প্রতিবেশী দেশ ভারতেই পড়তে যান ৩০ থেকে ৪০ হাজার। জ্ঞান আহরণের বিনিময়ে এভাবে প্রতিবছর বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা হারায় নতুন করে জন্ম নেওয়া বাংলাদেশ।

এ দিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বর্ধিত চাহিদা মেটাতে না পারায় সরকার ১৯৯০ সালে বেসরকারি বা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেয়। এরপরই শুরু হয় বেসরকারি উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা। বিদেশমুখী শিক্ষার্থীদের দেশে রেখে উন্নত ও আন্তর্জাতিকমানের পাঠদান এবং বৈদেশিক মুদ্রা ধরে রাখা ছিল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় অবদান। যেসব শিক্ষার্থী পড়াশোনার জন্য হয়তো ভারত কিংবা অন্য দেশে যেতেন তাদের অনেকেই এখন দেশে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন। সে হিসাবে মাত্র ৩২ বছরের ইতিহাস হলেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকাটা বেশ দীর্ঘ, মোট ১০৭টি; যেখানে পাবলিক কেবল ৫৮টি।

প্রতীচ্যের দিকে তাকালে দেখা যায়, হার্ভার্ডসহ বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগই প্রাইভেট। সেগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও লেখাপড়ার মান ও গবেষণা ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে স্পেনের মাদ্রিদভিত্তিক শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়েবমেট্রিকস একটি র‌্যাংকিং প্রকাশ করে। এর জানুয়ারি ২০২২ সংস্করণে বাংলাদেশের সেরা ১০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চারটিই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো কোনো সেশনজট নেই। ফলে একজন শিক্ষার্থী চার বছরেই তার গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি অর্জন করে অল্প বয়সেই কর্মজীবনে প্রবেশ করতে পারেন। বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য স্কলারশিপসহ নানা সুবিধার ব্যবস্থা তো আছেই। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় বিদেশি বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে, যাতে তাদের শিক্ষার্থীরা সহজেই সেখানে ভর্তি হতে পারেন। তাই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ না থাকলে শিক্ষার্থীদের পরবর্তী পছন্দ প্রাইভেট। শুধু উচ্চ বা মধ্যবিত্ত নয়, নিম্নবিত্তের ছেলেমেয়েরাও বৃত্তির আওতায় উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে; কিন্তু কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ভালো, এ সম্পর্কে ধারণা না থাকলে পড়তে হয় বিড়ম্বনায়। পাশাপাশি পড়াশোনার মান কেমন হবে, সেই প্রশ্ন তো থাকছেই। কারণ প্রতিনিয়ত ছত্রাকের মতো গজিয়ে উঠছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। সেই সঙ্গে মানহীন শিক্ষাব্যবস্থা এবং আকাশ ছোঁয়া খরচের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হন শিক্ষার্থীরা। অনেকে তো শিক্ষাজীবনেই ইতি টানতে বাধ্য হন। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার আগে জেনে নিতে হবে সামগ্রিক বিষয়। পড়াশোনার মান, কত হতে পারে খরচ, সরকারি অনুমোদন ও স্থায়ী ক্যাম্পাস রয়েছে কিনা, বিশ্ববিদ্যালয়টি ব্ল্যাক লিস্টেড কিনা ইত্যাদি। তবে আশার কথা হলো, দেশের বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ওয়ার্ল্ড র‌্যাংকিংয়ে খুব ভালো করেছে। অন্তত ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদান অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকেও উন্নতমানের। তাদের গ্রন্থাগারগুলোও সমৃদ্ধ, পাশাপাশি এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণায় বড় অঙ্কের টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনার-সিম্পোজিয়ামের আয়োজন, বিভিন্ন ক্লাবের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক বিকাশ ও পাঠবহির্ভূত নানা কর্মকাণ্ডের ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও এগিয়ে। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও তারা কিছু মানদণ্ড মেনে চলে, যেমন পিএইচডি গবেষণা ও প্রকাশনার ক্ষেত্রে, যা মেধাবী শিক্ষার্থীদের সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিতে উৎসাহী করে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতায়ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখছেন। বর্তমানে বিশ্বের শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলছে আমাদের দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।

যুগের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ বিষয়

আধুনিক বিশ্বের আধুনিক শিক্ষার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো মানবসম্পদ তৈরি ও মানবসম্পদ উন্নয়ন। শিল্পবিপ্লবের পর থেকেই বৃত্তিমূলক শিক্ষায় আলাদা করে গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। নিত্যনতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও কর্মসংস্থানের সৃষ্টি, সেখানে প্রবেশের জন্য প্রয়োজন বৃত্তিমূলক শিক্ষার। আর সেটাকেই মাথায় রেখে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলেছে সম্পূর্ণ বাজারমুখী বিষয়। যেমন- ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, আর্কিটেকচার, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, বায়োকেমিস্ট্রি, মাইক্রোবায়োলজি, পাবলিক হেলথ, ফার্মেসি, ডেন্টাল, এমবিবিএস, ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্স, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, ফ্যাশন ডিজাইন অ্যান্ড টেকনোলজি, অ্যাপারেল ম্যানুফেকচারিং অ্যান্ড টেকনোলজি, নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং, টেলিকমিউনিকেশন, ইন্টেরিয়র আর্কিটেকচার, প্রডাক্ট ডিজাইন, মিউজিক, গভর্নমেন্ট অ্যান্ড পলিটিক্স, মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং, উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ, অ্যাকাউন্টিং, মার্কেটিং, ম্যানেজমেন্ট, ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন, বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, আইন ইত্যাদি। এসব বিষয় থেকে পাস করার পর একজন শিক্ষার্থী চাকরির বাজারে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন খুব সহজেই। তবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়েই শিক্ষার্থীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। 

রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসে নেই সেশনজট

সবাই চায় নির্ধারিত সময়ে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করতে। তবে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমস্যা হলো সেশনজট; যা সাধারণত রাজনৈতিক সংঘাত, স্বার্থসিদ্ধি ও ক্লাস-পরীক্ষার দীর্ঘসূত্রতার জন্য হয়ে থাকে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে হানাহানির ঘটনাও নিয়মিত চিত্র। ফলে শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে নষ্ট হয়ে যায় অনেক মূল্যবান সময়। এসব মাথায় রেখেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের ক্যাম্পাসকে করেছে সম্পূর্ণ রাজনীতি মুক্ত। তাই সেগুলোতে কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কিংবা প্রভাব না থাকায় সহিংসতা নেই, সেশনজটও নেই। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের একাডেমিক ক্যালেন্ডার মেনে চলার ব্যাপারে কোনো ধরনের ছাড় দিতে নারাজ। ফলে অত্যন্ত কঠোর নিয়মকানুনের মাধ্যমে ক্লাস ও পরীক্ষা পরিচালিত হয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা পদ্ধতি অনুসরণ করে। একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালিত হয় সেমিস্টার পদ্ধতিতে। আবার যেহেতু এসব বিশ্ববিদ্যালয় ব্যক্তি বা ট্রাস্টের মাধ্যমে পরিচালিত হয় তাই এখানকার শিক্ষকদেরকে থাকতে হয় সদাসচেষ্ট। নিয়মিত পাঠদান, সময়ানুবর্তিতা, আধুনিক ও আন্তর্জাতিকমানের জ্ঞানদান, ক্লাসের বাইরেও ছাত্র-ছাত্রীদের সময় দেওয়াকে তাদের নিয়মিত রুটিন কাজ হিসেবেই ধরে নেওয়া হয়। মূলত মানসম্পন্ন বেতন-ভাতা ও কর্মপরিবেশের কারণে দেশ-বিদেশের উচ্চ ডিগ্রিসম্পন্ন ও ভালো রেজাল্টধারী শিক্ষকরাই নিয়োজিত থাকেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে তো আমেরিকান ডিগ্রি ছাড়া শিক্ষকই নিয়োগ দেয় না। তাদের ক্লাস লেকচার উপস্থাপন পদ্ধতি বেশ আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত, যা শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত সহায়ক ও কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। এ ছাড়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক প্রবীণ ও দক্ষতাসম্পন্ন শিক্ষক খণ্ডকালীন অথবা পূর্ণকালীন সময় দিচ্ছেন তাদের চাকরি শেষে, যা বেসরকারি শিক্ষার মানকে করছে আরও উন্নত। আবার বিভিন্ন কারণে পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যাওয়া শিক্ষার্থীদের জন্যও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিয়েছে অপার সুযোগ। যথাযথ কারণ দর্শিয়ে শিক্ষা বিরতিকরারা নতুনভাবে শুরু করতে পারেন নিজেদের পছন্দের বিষয়ে। চাকরিজীবীদের জন্যও রয়েছে সান্ধ্যকালীন বিশেষ প্রোগ্রাম। ফলে নিজের ক্যারিয়ারকে আরও উপরে নিয়ে যেতে অনেকেই পড়াশুনার দিকে মনোনিবেশ করছেন। সময়মতো উচ্চশিক্ষা, পড়াশোনার মান, ভবিষ্যতের অফুরন্ত সুযোগ, আন্তর্জাতিক ও জাতীয় ক্ষেত্রের কথা চিন্তা করে শিক্ষার্থীরা এখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিই বেশি ঝুঁকছেন। 

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু

দেশের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি (এনএসইউ)। রাজধানীর বসুন্ধরায় এর স্থায়ী ক্যাম্পাস। মাত্র ১৩৭ শিক্ষার্থী নিয়ে ১৯৯৩ সালে যাত্রা শুরু করা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী এখন ২২ হাজারেরও বেশি। চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়েই আজ নর্থ সাউথ দেশের উচ্চশিক্ষায় অনন্য শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ হিসেবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিচিতি এবং স্বীকৃতি লাভ করেছে। ওয়েবমেট্রিক্স র‌্যাংকিংয়ের জানুয়ারি ২০২২ সংস্করণে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম স্থানে আছে নর্থ সাউথ। সম্মিলিতভাবে আছে চতুর্থ অবস্থানে। আর বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে ২০৫৬তম। আন্তর্জাতিক শিক্ষা কার্যক্রম ও মানসম্পন্ন গবেষণাকাজ পরিচালনায় বিশ্বের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে এনএসইউ গঠন করেছে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভাইজারি বোর্ড। মোট চারটি অনুষদ বা স্কুলের অধীনে পরিচালিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম। এর মধ্যে স্কুল অব বিজনেসের অধীনে রয়েছে বিবিএ, এমবিএ এবং ইএমবিএ। স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অ্যাপ্লায়েড সায়েন্সের অধীনে কম্পিউটার সায়েন্স, কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, মাস্টার অব সায়েন্স ইন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, মাস্টার অব সায়েন্স ইন ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স, এনভায়রনমেন্টাল ম্যানেজমেন্ট, এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজ, এমএসসি ইন রিসোর্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ম্যানেজমেন্ট। স্কুল অব লাইফ সায়েন্সের অধীন মাইক্রোবায়োলজি, বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি, মাস্টার্স ইন পাবলিক হেলথ, মাস্টার্স ইন বায়োটেকনোলজি। স্কুল অব আর্টস অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সে আছে ইংলিশ, ইকোনমিকস, মাস্টার অব সায়েন্স ইন ইকোনমিকস, মাস্টার ইন ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, মাস্টার ইন পাবলিক পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্স। ২০২০ সালের তথ্য নিয়ে তৈরি ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদন বলছে, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ওই বছর গবেষণার জন্য ব্যয় করেছে ৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে আধুনিক উপকরণ সজ্জিত ক্লাসরুম ও ল্যাব। অত্যাধুনিক শিক্ষামূলক প্রযুক্তিসহ ছয় তলাবিশিষ্ট সুবিশাল লাইব্রেরি; যেখানে অর্ধলাখ বই, রিপোর্টস ও বিভিন্ন জার্নালের সমাহার। ৭০ হাজার বর্গফুট আয়তনের এ লাইব্রেরিতে বসে একসঙ্গে ১ হাজার ২০০ শিক্ষার্থী পড়তে পারেন। এর বাইরে সহশিক্ষা কার্যক্রম হিসেবে রয়েছে ইয়াং এন্ট্রাপ্রেনিউরস সোসাইটি, ডিবেটিং ক্লাব, সাংস্কৃতি সংগঠন, গেমস অ্যান্ড স্পোর্টস ক্লাব, ফিনে অ্যান্ড ড্রামা ক্লাব, ইয়াং ইকোনসিস ফোরাম, এমবিএ ক্লাব, কম্পিউটার ল্যাব, ফটোগ্রাফি ক্লাব, আর্থ ক্লাব, ইংলিশ ক্লাব, মিডিয়া ক্লাব ও সোশ্যাল সার্ভিস ক্লাব। 

এনএসইউ উপাচার্য অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘এনএসইউতে রয়েছেন সবচেয়ে যোগ্য ও আন্তর্জাতিকমানের শিক্ষক, যারা শিক্ষার্থীদের পরম যত্নের সাথে শিক্ষা দেন। অপেক্ষাকৃত পশ্চাৎপদ শিক্ষার্থীদের সাহায্য করার জন্য রয়েছে টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট। শিক্ষক ও টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্টদের নিবিড় পরিচর্যায় পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীরাও বেশ ভালো ফল করতে সক্ষম। রয়েছে সুস্থধারার বিভিন্ন ক্লাব কার্যক্রম। লেখাপড়ার পাশাপাশি অনেক ধরনের ক্লাবে যুক্ত থেকে শিক্ষার্থীরা নিজেদের সুপ্ত প্রতিভার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে পারে। এ ধরনের ক্লাব কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেতৃত্বের বিকাশ ঘটে, যা পেশাগত জীবনের উত্তরণে বিশেষ ভূমিকা রাখে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের প্রোগ্রামগুলো জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। গ্র্যাজুয়েট এমপ্লয়বিলিটি র‌্যাংকিং-২০২২ এ নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় গোটা বিশ্বের মধ্যে শীর্ষ ৫০০-এর তালিকায় স্থান পেয়েছে।’

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এনএসইউর উদ্দেশ্য হলো জ্ঞানের অগ্রগতি সাধন, যা শিক্ষার নিরাপদ পরিবেশ ব্যতীত সম্ভব নয়। সে লক্ষ্যেই এনএসইউ কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের শৃঙ্খলাবোধ তৈরিতে বদ্ধপরিকর।’ তিনি বলেন, ‘নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি সব সময়ই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা এ পর্যন্ত চৌদ্দশর অধিক মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের সম্পূর্ণ বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ করে দিয়েছি। গরিব মেধাবীদেরও এখানে বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ রয়েছে।’

শিক্ষার পাশাপাশি আয়ের দিক দিয়েও সবার ওপরে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি থেকেই প্রতিবছর আয় হয় প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। যেখানে বার্ষিক অনুন্নয়ন ও উন্নয়ন ব্যয়ের পরিমাণ ২৫০ কোটি টাকারও কম। ফলে প্রতিবছরই বেঁচে যাওয়া বড় অঙ্কের এ অর্থ যুক্ত হচ্ছে নর্থ সাউথের তহবিলে। বর্তমানে যার পরিমাণ প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। ইউজিসি বলছে, দেশের আর কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েরই এত বড় অঙ্কের তহবিল নেই। এমনকি আয়ের পরিমাণ ও উদ্বৃত্ত তহবিলের আকারে নর্থ সাউথ এখন দেশের অনেক বৃহৎ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকেও ছাড়িয়েছে। তবে এও অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন সময় বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা নিজেদের পছন্দ ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সেই অর্থ জমা রেখেছেন। শুধু তাই নয়, তহবিল থেকে নিজেদের ইচ্ছামতো অর্থ ব্যয় ও বিলাসবহুল গাড়ি কেনারও অভিযোগ উঠেছে ট্রাস্টিদের বিরুদ্ধে।

ব্যতিক্রম ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি

দেশ ও দেশের বাইরে শিক্ষিত নেতৃত্ব তৈরিতে সক্ষম, এমন একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দাঁড় করানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন স্যার ফজলে হাসান আবেদ। সেটিকে বাস্তবে রূপ দেন ২০০১ সালে, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। দক্ষ ও যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক, যুগোপযোগী কারিকুলাম, গবেষণার যথাযোগ্য পরিবেশ, সমৃদ্ধ লাইব্রেরি, ব্যতিক্রমী নানা কার্যক্রমের মাধ্যমে মাত্র দুই দশকেই অর্জন করেছে ব্যাপক সুনাম। মূলত বড় ধরনের সামাজিক পরিবর্তন ও চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মাথায় রেখে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা, সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী শক্তি বিকাশে কাজ করছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। তাই যুক্তরাষ্ট্রের লিবারেল আর্টস অ্যান্ড সায়েন্স প্রকল্পের শিক্ষাপদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক সেমিস্টার পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। একসঙ্গে ক্যাম্পাসে থাকা ও লেখাপড়ার মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীলতা ও সেবামূলক কাজের সুযোগ পান তারা। ক্যাম্পাসের নানা ক্লাব ও সোসাইটিতে অংশ নিয়ে সৃজনশীলতা ও নেতৃত্বগুণ চর্চার সুযোগ পাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। বিতর্ক, মডেল ইউএন, সাংস্কৃতিকচর্চা, খেলাধুলা, বেড়ানো, চলচ্চিত্র, পরিবেশ, উদ্যোক্তাসহ নানা বিষয়ভিত্তিক ক্লাব ও সোসাইটি তাদের সমৃদ্ধ করছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অর্জনের মাধ্যমে এরই মধ্যে নজর কেড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবটিকস ক্লাব। 

নানা ক্ষেত্রে গবেষণার জন্য ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির বেশ কয়েকটি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের সুনাম রয়েছে। রোহিঙ্গা সংকট, জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ উন্নয়ন, উদ্ভাবনী স্থাপত্য এবং পোশাকশিল্পের ব্যবসায়িক উন্নয়নের মতো বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য কর্মকাণ্ডে যুক্ত আছে এ বিশ্ববিদ্যালয়। জন হপকিনস ইউনিভার্সিটির গ্লোবাল হেলথ স্বীকৃতি পেয়েছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির অধীন জেমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ। এ ছাড়া বিশ্বসেরা ১০০ ‘থিঙ্ক ট্যাংক’-এর তালিকায় স্থান পেয়েছে ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট। ওয়েবমেট্রিকস র‌্যাঙ্কিংয়ের জানুয়ারি ২০২২ সংস্করণে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে থাকা ব্র্যাক সম্মিলিতভাবে সপ্তম। আর সারাবিশ্বে ২৪২৭তম। শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও নানা কার্যক্রমের সুবাদে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিসের রয়েছে বিশেষ সুনাম। দেশে করোনা ভাইরাসের টিকাদান বণ্টন কৌশল নিয়ে যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম ইউনিভার্সিটির সঙ্গে এক হয়ে কাজ করছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। ব্র্যাক সবচেয়ে বেশি জোর দেয় গবেষণায়। ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদন বলছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে গবেষণায় ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি সর্বোচ্চ ৫৫ কোটি ২৩ লাখ ৬৩ হাজার টাকা ব্যয় করেছে। তাদের প্রকাশনার সংখ্যা ছিল ৩৭৮। 

ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি তাদের শিক্ষার্থীদের জন্য নানা রকম বৃত্তি বা বিশেষ ছাড়ের সুবিধা দেয়। দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ক্রেডিট ট্রান্সফার’-এরেও সুযোগ পান এখানকার শিক্ষার্থীরা। অনেকগুলো স্কুল ও ইনস্টিটিউটের আওতায় বিভিন্ন বিষয়ে পড়ার ব্যবস্থা রয়েছে এই শিক্ষপ্রতিষ্ঠানে। এগুলো হলো- ফার্মেসি, ল, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, আর্কিটেকচার, ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্স, ইংলিশ অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ, ম্যাথমেটিকস অ্যান্ড ন্যাচারাল সায়েন্সেস, পাবলিক হেলথ, বিজনেস স্টাডিজ, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ, ল্যাঙ্গুয়েজেস, এডুকেশনাল ডেভেলপমেন্ট, গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, ডেটা অ্যান্ড সায়েন্সেস, জেনারেল এডুকেশনসহ যুগোপযোগী অসংখ্য প্রোগ্রাম। সাভারে ৩০ একর জমিতে নান্দনিক ও পরিবেশবান্ধব এক নতুন ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করার পরিকল্পনা করছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি। 

ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারপারসন তামারা হাসান আবেদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়টি বৈশ্বিকভাবে এখন অনেক বেশি সম্পৃক্ত, বিশ্বের অনেক নামকরা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। সেই সঙ্গে এখানে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বেড়েছে। আমরা এখন শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক পাঠদান এবং গবেষণার ক্ষেত্র প্রসারে সচেষ্ট হয়েছি।’ উপাচার্য ভিনসেন্ট চ্যাং বলেন, ‘আমরা একটি বৈশ্বিক বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে ওঠার লক্ষ্য স্থির করেছি। যদিও এ যাত্রা অত সহজ নয়, তবে আগামী ২০ বছরের মধ্যে সেই লক্ষ্য অর্জিত হবে বলে আশা করি। এরই মধ্যে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি দেশের সেরা একটি বিদ্যাপীঠে পরিণত হয়েছে।’ 

বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়কেই কেবল প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবে আইইউবি

ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি  বাংলাদেশ (আইইউবি) প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৩ সালে। তখন একদল মানুষ ভিশনারি চিন্তা করেছিলেন- উচ্চশিক্ষায় আমাদের একটা ভালো মানের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় দরকার, যেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীরা যেন দেশ-বিদেশে নাম ছড়াতে পারেন। সেই উদ্দেশ্যেই ৩৩ শিক্ষার্থী নিয়ে রাজধানীর বারিধারায় ভাড়া করা কয়েকটা বাড়িতে শুরু হয় আইইউবির যাত্রা। সেই থেকে আজ শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি। তিন একর জায়গার উপর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় হয়েছে সুন্দর স্থায়ী ক্যাম্পাস, যেটা এখন আন্তর্জাতিক যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে টেক্কা দিতে পারে। গবেষণা, উদ্ভাবন ও সামাজিক প্রভাব- এ তিন বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে সিমাগো ইনস্টিটিউশনস র‌্যাংকিং ২০২১-এর তালিকায় দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেছে আইইউবি। আর দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এর অবস্থান দশম।

আইইউবিতে পাঁচটি স্কুল বা অনুষদের মাধ্যমে ২০টি বিষয়ে পড়ানো হয়। এর মধ্যে স্কুল অব বিজনেস অ্যান্ড এন্টারপ্রেনারশিপের অধীনে হিসাববিজ্ঞান, অর্থনীতি, ফিন্যান্স, জেনারেল ম্যানেজমেন্ট, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস, ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম ও মার্কেটিং বিভাগ। স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং, টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেসের অধীনে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল, তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক প্রকৌশল এবং ফিজিক্যাল সায়েন্স। স্কুল অব এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড লাইফ সায়েন্সেসের অধীনে পরিবেশ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা এবং জীবন বিজ্ঞান বিভাগ। স্কুল অব লিবারেল আর্টস অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সেসে অন্তর্ভুক্ত ইংরেজি, গ্লোবাল স্টাডিজ অ্যান্ড গভর্নেন্স, আইন, মিডিয়া ও যোগাযোগ এবং সামাজিক বিজ্ঞান ও মানবিক বিভাগ। স্কুল অব ফার্মেসি অ্যান্ড পাবলিক হেলথে আছে ফার্মেসি এবং পাবলিক হেলথ বিভাগ। 

বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনটি ফ্লোর নিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে সুপরিসর লাইব্রেরি। সেখানে রয়েছে প্রায় ৩০ হাজার বই এবং শতাধিক পত্রিকা। এছাড়াও আইইউবির লাইব্রেরিতে বসে অনলাইনের মাধ্যমে এমারালড, জেস্তর, অক্সফোর্ডসহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তথ্য আদান-প্রদানের সুবিধা। গবেষণা কাজের জন্য রয়েছে ছয়টি ল্যাবরেটরি। এর মধ্যে একটি পদার্থ বিজ্ঞান, তিনটি কম্পিউটার, একটি টেলিকম ও একটি ইলেক্ট্রনিক্স ল্যাবরেটরি। এখানকার শিক্ষাক্রমে অনুসরণ করা হয় উত্তর আমেরিকার ধারা। প্রায় ১৫-২০ আমেরিকান শিক্ষার্থী বছরে একবার আইইউবির নয় সপ্তাহব্যাপী বাংলা ভাষা প্রোগ্রামে অংশ নেয়। পাশাপাশি গ্রামীণ জীবন সম্পর্কে গবেষণার জন্য তারা আইইউবির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুই সপ্তাহ গ্রামে অবস্থান করে। বিদেশি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের থাকার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টিতে রয়েছে আন্তর্জাতিকমানের ডরমেটরি।

আইইউবির অ্যাডমিশন অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল এইডের সহকারী পরিচালক প্রিয়াংকা দে বলেন, ‘আইইউবি শিক্ষা সহায়ক কার্যক্রম উপযোগী ক্যাম্পাস। সারা বছর আমাদের ক্যাম্পাসে কোনো না কোনো কার্যক্রম চলে। একাডেমিক কার্যক্রমের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে সতেজ রাখার জন্য করা হয় বিভিন্ন আয়োজন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একজন শিক্ষার্থীকে পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষ করে গড়ে তুলি। এ জন্যও আমাদের বিভিন্ন কার্যক্রম রয়েছে। ফলে আইইউবি থেকে বের হয়ে শিক্ষার্থীরা সহজেই চাকরি পাচ্ছেন এবং চাকরিজীবনে ভালো করছেন।’

ড্যাফোডিল চায় সৃজনশীল শিক্ষা

পেশাজীবনে প্রবেশের আগে শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি নির্ভর করে তিনটি ভিত্তির ওপর- চিন্তা করার ক্ষমতা, দায়িত্ববোধ ও যোগাযোগের দক্ষতা। তবে এগুলো কোনো পাঠ্যক্রমে নেই। তাই এ নিয়ে কাজ করছে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ডিআইইউ)। তাদের পাঠক্রমেরই একটি অংশ ‘আর্ট অব লিভিং’। নীতি-নৈতিকতা, মূল্যবোধ, 

আচার-আচরণ থেকে শুরু করে পারিবারিক বা প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত, সবকিছুই শেখানো হয় বাধ্যতামূলক এই বিষয়টিতে। মূলত আন্তর্জাতিকমানের শিক্ষা দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে ২০০২ সালের ২৪ জানুয়ারিতে মাত্র ৬৮ শিক্ষার্থীকে নিয়ে যাত্রা শুরু করে ডিআইইউ। কয়েক বছরেই সবাইকে অবাক করে দিয়ে উঠে আসে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন মূল্যায়িত মানসম্পন্ন সেরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায়। শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও ছড়িয়ে পড়েছে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সুনাম। সম্প্রতি কিউএস এশিয়া ইউনিভার্সিটি র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে করে নিয়েছে চতুর্থ স্থান। ইউআই গ্রিনমেট্রিক ওয়ার্ল্ড র‌্যাংকিং-২০২১ এবং টাইমস হায়ার এডুকেশন ইউনিভার্সিটি ইমপ্যাক্ট র‌্যাংকিং-২০২০ এ আছে দেশের শীর্ষস্থানে। নিয়মিত বৃত্তির পাশাপাশি অতিরিক্ত ২০ শতাংশ বৃত্তি সুবিধাসহ শিক্ষার্থীদের ভর্তির ব্যবস্থা রয়েছে ডিআইইউতে। এছাড়াও ট্যালেন্ট স্কলারশিপের মাধ্যমে অসচ্ছল ও মেধাবীদের শতভাগ বৃত্তি দেওয়া হয়। আছে সহোদর, স্বামী-স্ত্রী, মুক্তিযোদ্ধা কোটা, খেলোয়াড়, আদিবাসী কোটার বৃত্তি।

নাগরিক কোলাহল মুক্ত, পাখির কলকাকলিতে মুখরিত সবুজে ঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ লীলাভূমিতে গড়ে উঠেছে ডিআইইউর শিক্ষাবান্ধব ক্যাম্পাস। সর্বাধুনিক শিক্ষা উপকরণ, অভিজ্ঞ শিক্ষক, ১২ হাজার শিক্ষার্থীর আবাসন সুবিধা, উন্নত ল্যাবরেটরি, ইনোভেশন ল্যাব, সহশিক্ষা কার্যক্রম, বিশাল খেলার মাঠ, টেনিস কোর্ট, গলফ কোর্স, যাতায়াত সুবিধাসহ সব ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত ক্যাম্পাসটিকে বলা হয় ‘ড্যাফোডিল স্মার্ট সিটি’। ঢাকার আশুলিয়াতে প্রায় ১৫০ একর জায়গার উপর এর অবস্থান। বর্তমানে প্রায় ২৫ হাজার দেশি-বিদেশি শিক্ষার্থীতে মুখরিত সেই ক্যাম্পাস। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে পাঁচটি অনুষদে রয়েছে মোট ২৪টি বিভাগ। বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি অনুষদের অধীনে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং, মাল্টিমিডিয়া অ্যান্ড ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি, জেনারেল এডুকেশন ডেভেলপমন্ট, এনভাইরোমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট, কম্পিউটিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম, ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট, এমআইএস বিভাগ। প্রকৌশল অনুষদের অধীনে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, আর্কিটেকচার বিভাগ। বাণিজ্য ও উদ্যোক্তা অনুষদের অধীনে রয়েছে ব্যবসায় প্রশাসন, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট, রিয়েল এস্টেট, ইনোভেশন অ্যান্ড এন্টারপ্রিনিউরশিপ, বিজনেস স্টাডিজ এবং এমবিএ। মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে এলএলবি, ইংরেজি, সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ এবং ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ। অ্যালাইড হেলথ্ সায়েন্স অনুষদের অধীনে রয়েছে ফর্মেসি, নিউট্রেশন অ্যান্ড ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং ও পাবলিক হেলথ বিভাগ। ভর্তি প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রমই সফটওয়্যার ও কম্পিউটারাইজেশনের আওতাভুক্ত। যুগোপযোগী তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষায় প্রশিক্ষিত করে তোলার লক্ষ্যে প্রতিটি শিক্ষার্থীকেই দেওয়া হয় একটি করে ল্যাপটপ। আছে সমৃদ্ধ ডিজিটাল লাইব্রেরি; যাতে দেশি-বিদেশি ২৫ হাজার রেফারেন্স বই, ১৫ হাজার ই-বুক, আড়াই হাজারের মতো প্রোজেক্ট রিপোর্ট, আট হাজার ই-জার্নাল এবং সাপ্তাহিক, পাক্ষিক ও মাসিক ম্যাগাজিনসহ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পত্রপত্রিকার সমাহার। সর্বাধুনিক সুবিধা সংবলিত লাইব্রেরির সুবিশাল ফ্লোরে শান্ত ও নিরিবিলি পরিবেশে একসঙ্গে প্রায় ৮০০ শিক্ষার্থীর অধ্যয়নের সুযোগ রয়েছে। ব্যবহারিক ক্লাসের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আছে ডিজিটাল ক্লাশ রুম, কম্পিউটার ল্যাব, টেক্সটাইল ল্যাব, ফিজিক্স ল্যাব, ফার্মাসি ল্যাব, ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ ল্যাব, ফ্যাব ল্যাব (ডিজিটাল ফেব্রিকেশন), জেএমসি ল্যাব, সিসকো ল্যাব, মাইক্রোসফট আইটি একাডেমি, লিনাক্স, রেডহাট ও ওরাকল, মাল্টিমিডিয়া ল্যাব, ইনোভেশন ল্যাব। পড়ালেখার পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার রয়েছে ডিবেটিং ক্লাব, স্পোর্টস ক্লাব, সাইন্স ক্লাব, বিজনেস ক্লাস, ন্যাচারাল স্টাডি ক্লাব, কালচারাল ক্লাব, সাইবার ক্যাফে, ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব, এমবিএ ক্লাবসহ ৩৫টি সংগঠন। শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা, নিয়মানুবর্তিতা এবং কর্মঠ করে গড়ে তুলতে রয়েছে এয়ার রোভার স্কাউট গ্রুপ ও বিএসসিসি ইউনিট। গবেষণার ক্ষেত্রেও ডিআইইউর রয়েছে বেশ সুনাম। ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদন বলছে, ২০২০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি গবেষণা খাতে প্রায় ১২ কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয় করেছে।

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সবুর খান বলেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের জন্য মানসম্পন্ন উচ্চশিক্ষা প্রদান। তাদের এমনভাবে গড়ে তোলা হয়, যাতে তারা তাদের দক্ষতাকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও কাজে লাগাতে পারে। এক্ষেত্রে ড্যাফোডিলের প্রথম লক্ষ্য ছিল প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, সেটা আমরা পেরেছি। দ্বিতীয় লক্ষ্য ছিল দেশের বাইরে ড্যাফোডিলের সুনাম ছড়িয়ে দেওয়া। এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের মাধ্যমে সেই লক্ষ্যপূরণেও আমরা অনেকটা সফল। তৃতীয় লক্ষ্য, পাস করার পরপরই শিক্ষার্থীদের চাকরি দেওয়া। এ জন্য শিক্ষানবিশ প্রকল্প চালু করেছি, আমাদের এখানেই যেন তারা চাকরি পায়। আর চতুর্থ লক্ষ্য হলো উদ্যোক্তা তৈরি করা। এটা এখন আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তাতে সফল হলে চাকরি তাদের পেতে হবে না, তারা উল্টো অন্যকে চাকরি দেবে। এ জন্য আমরা চালু করেছি এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ বিভাগ।’

ইউআইইউ যেন একটি গবেষণাগার

উচ্চশিক্ষায় বিদেশমুখিতা কমাতে এবং দেশের মানুষের আর্থিক সাশ্রয়ের কথা চিন্তা করে কিছু বিদ্যানুরাগী শিল্পপতি ও প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ প্রতিষ্ঠা করেন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ইউআইইউ)। মাত্র ৭৬ শিক্ষার্থী নিয়ে ২০০৩ সালের অক্টোবরে এর পথচলা শুরু। রাজধানীর বাড্ডায় মাদানী এভিনিউয়ে ২৫ বিঘা জমির ওপর বিশ্ববিদ্যালয়টির দৃষ্টিনন্দন স্থায়ী ক্যাম্পাস। চারপাশ সবুজে ঘেরা। পাশ দিয়ে বয়ে গেছে প্রাকৃতিক লেক। মূল সড়ক থেকে নেমে গেছে প্রশস্ত রাস্তা। একটু দূরেই প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গড়ে তোলা হয়েছে আট লাখ বর্গফুটের ১৩ তলা সুদৃশ্য ভবন, যেখানে রয়েছে আন্তর্জাতিকমানের মাল্টিমিডিয়া ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ১০০টি স্মার্ট শ্রেণিকক্ষ। পড়ালেখার ফাঁকে গ্রুপ স্টাডি ও বিষয়ভিত্তিক আলোচনার জন্য নানা রকম বইসমৃদ্ধ লাইব্রেরি ও স্টাডিরুম। ইউআইইউ গ্রন্থাগার তার ব্যবহারকারীদের স্বয়ংক্রিয় তথ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য লাইব্রেরি সফটওয়্যার ‘কোহা’ চালু করেছে। এর ফলে ব্যবহারকারীরা গ্রন্থাগারে না এসেও যেকোনো বইয়ের শিরোনাম, লেখক, কল নম্বর, কি-ওয়ার্ড, প্রকাশক ও প্রকাশকাল অনুযায়ী খুঁজতে পারেন। বাংলাদেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধ নামে একটি কর্নারও রয়েছে ওই গ্রন্থাগারে। একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল প্রতিভার বিকাশ ও বাজার উপযোগী দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও উৎসাহ দেওয়া হয়। ইউআইইউতে রয়েছে কালচারাল ক্লাব, স্পোর্টস ক্লাব, ডিবেট ক্লাব, থিয়েটার অ্যান্ড ফিল্ম ক্লাব, কম্পিউটার ক্লাব, ইলেকট্রনিকস ক্লাব, রোবটিকস ক্লাব, সোশ্যাল সার্ভিসেস ক্লাবসহ মোট ১২টি ক্লাব। ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ কর্মক্ষেত্রের জন্য প্রস্তুত করতে অ্যাকাউন্টিং ফোরাম, এইচআর ফোরাম, মার্কেটিং ফোরাম, ফাইন্যান্স ফোরাম, এন্টারপ্রিনিউয়ারশিপ ফোরাম, রাইটার্স ফোরামসহ মোট ১২টি ফোরাম সাহায্য করছে। এই ক্লাব ও ফোরামগুলোর মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীরা সারাবছর সেমিনার, কর্মশালা, সিম্পোজিয়াম, ক্যারিয়ার ফেয়ার, অভ্যন্তরীণ ও আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত থাকেন। ভবনের সপ্তম তলায় আছে প্রার্থনাগার, শারীরিক অনুশীলনের জন্য বেজমেন্টে স্থাপন করা হয়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ জিমনেসিয়াম ও খেলার রুম। নিজস্ব অনুষ্ঠানের জন্য আছে ৫০০ আসনবিশিষ্ট অডিটোরিয়াম। ভবনের সামনেই বিশাল খেলার মাঠ। শিক্ষার্থীদের খেলার উৎসব চলে পড়ন্ত বিকেলে।

শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় একটি অন্যতম প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা করা ইউআইইউ শুরু থেকেই ভিন্নধারায় ও স্বতন্ত্র মাত্রায় দেশের উচ্চশিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে সচেষ্ট। তাই ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীদের ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট, আইসি তৈরির জন্য এখানে রয়েছে ভিএলএসআই (ভেরি লার্জ স্কেল ইন্টিগ্রেশন) ল্যাব। কম্পিউটার শিক্ষার্থীদের জন্য আছে অ্যাডভান্সড ইন্টেলিজেন্ট মাল্টি ডিসিপ্লিনারি সিস্টেমস বা এইমস ল্যাব ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি গবেষণার জন্য সেন্টার ফর এনার্জি রিসার্চ বা জ্বালানি গবেষণা কেন্দ্র। পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীকে বিদ্যুতের আওতায় আনতে কাজ করছে এই গবেষণা কেন্দ্রটি। এরই মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও জলবায়ু মোকাবেলায় ৫০টি প্রকল্প পরিচালনা করা হয়েছে এর মাধ্যমে। বিভিন্ন দেশের ইনস্টিটিউট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গেও কাজ করছে ইউআইইউয়ের জ্বালানি গবেষণা কেন্দ্র। পেয়েছে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পুরস্কার। এছাড়াও রয়েছে সার্কিট ল্যাব, ফিজিক্যাল ল্যাব, কেমিস্ট্রি ল্যাব, কম্পিউটার ল্যাব, মেশিন অ্যান্ড পাওয়ার সিস্টেম ল্যাব, কমিউনিকেশন ল্যাব, ডিজিটাল ডিজাইন ল্যাব, মাইক্রোপ্রসেসর ল্যাব ও ইলেকট্রনিকস ল্যাবসহ ৩০টি ল্যাব। সব মিলিয়ে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়টিই যেন একটি গবেষণাগার। ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদন বলছে, ২০২০ সালে ইউআইইউ গবেষণা খাতে প্রায় ৩ কোটি ৯ লাখ টাকা ব্যয় করেছে। 

ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে শিক্ষার মান। দক্ষ এবং অভিজ্ঞ শিক্ষকদের পাঠদান, আন্তরিক প্রচেষ্টায় শিক্ষার্থীরাও সন্তুষ্ট। বর্তমানে ব্যবসায় প্রশাসন, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিংসহ মোট সাতটি বিষয়ে আন্ডার গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম রয়েছে। স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে আছে এমবিএ, ইভিনিং এমবিএ, অর্থনীতিতে মাস্টার্স, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, মাস্টার ইন ইন্টারন্যাশনাল এইচআরএম ও কম্পিউটার সায়েন্সসহ ছয়টি বিষয়ে পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রির সুবিধা। এছাড়া ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিক রিসার্চ (আইবিইআর) পিজিডি এইচআরএমসহ বিভিন্ন ধরনের ডিপ্লোমা ও সার্টিফিকেট কোর্স পরিচালনা করে থাকে। ২০১৯ থেকে ২০২১ পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে ইউআইইউ। দ্য ইমপ্যাক্ট র‌্যাঙ্কিংস এসডিজি-১ ক্যাটাগরিতে বিশ্বের ৮০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে। ইউআইইউর বিজনেস স্কুল বিশ্বখ্যাত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘এসিবিএসপি’ কর্তৃক স্বীকৃত বা অ্যাক্রেডিটেড। এছাড়া বিবিএ ইন এআইএস ডিপার্টমেন্টকে স্বীকৃত দিয়েছে ‘সিআইএমএ (সিমা)’। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (আইবি) কর্তৃক স্বীকৃত বা অ্যাক্রেডিটেড ইউআইইউর ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল। 

এ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি ট্রাইমেস্টারে মেধাভিত্তিক ১৫ শতাংশ শিক্ষার্থীকে ২৫ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বৃত্তি দেওয়া হয়। মুক্তিযোদ্ধা কোটায়ও বৃত্তি পান শিক্ষার্থীরা। ইউআইইউ শিক্ষার্থীরা চাইলে ক্রেডিট ট্রান্সফার করে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়তে পারেন। বিশ্ববিদ্যালয়টির সঙ্গে আমেরিকা, কানাডা, ইউকে, জাপান, পর্তুগাল, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে একাডেমিক কোলাবরেশন রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে স্টুডেন্ট এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামও পরিচালনা করা হয়।

ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. চৌধুরী মোফিজুর রহমান বলেন, ‘জীবন ও জীবিকার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করাই বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। বিশ্লেষণী চিন্তা ও উদ্ভাবন স্পৃহার স্ফুরণ ঘটানো শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য বলে আমরা মনে করি। বিশ্বায়ন ও প্রযুক্তির সম্প্রসারণের ফলে আমাদের ছেলেমেয়েরা তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়ছে। আর এই প্রতিযোগিতাকে মাথায় রেখেই আমরা শিক্ষার্থীদের তৈরির চেষ্টা করছি।’

ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, নারী শিক্ষকদের জয়জয়কার

দক্ষ জনশক্তি তৈরির লক্ষ্য সামনে রেখে ২০০৩ সালে ঢাকার ধানমন্ডিতে যাত্রা শুরু করে বেসরকারি ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি। শুরু থেকেই গুণগত শিক্ষা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে দেশের শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি বিশ্বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে স্থান করে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নির্দেশনা মোতাবেক ২০১৮ সালের মে থেকে স্থায়ী ক্যাম্পাসে ক্লাস শুরু করে এ বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকার গাবতলী ও আবদুল্লাহপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরত্বে বিরুলিয়ায় ২০ বিঘা জমির উপর অবস্থিত দৃষ্টিনন্দন এ ক্যাম্পাস ইতোমধ্যে সবার নজর কেড়েছে। প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার বর্গফুটের একাডেমিক ভবন, খেলার মাঠ, কোলাহলমুক্ত উন্মুক্ত স্থানসহ এটি একটি পূর্ণাঙ্গ ক্যাম্পাসে পরিণত হয়েছে। কর্মমুখী শিক্ষা কারিকুলাম আর সময়োযোগী প্রোগ্রাম নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে এ বিশ্ববিদ্যালয়।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচটি বিষয়ে শিক্ষাদান কার্যক্রম চলছে। পাঁচটি বিষয়ের দুটিসিএসই ও ইংরেজি বিভাগে নারী শিক্ষকের হার আশি শতাংশের বেশি। ব্যবসায় প্রশাসন ও আইন বিভাগে নারী শিক্ষকের হার ৫০ শতাংশ। 

কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগে শিক্ষক আছেন ১৭ জন। তাদের মধ্যে ১৪ জনই নারী। ইংরেজি বিভাগে শিক্ষক আছেন ১২ জন। বিভাগের চেয়ারম্যান রওশন আরাসহ ৯ জনই নারী। 

ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির সিএসই ও ইংরেজি বিভাগে নারী শিক্ষকদের আধিক্যের খবরটি দেশের নারী জাগরণ বা নারী স্বাবলম্বনের সার্বিক চিত্র মোটেই নয়। তবে শিক্ষকতায় নারীদের অভূতপূর্ব অগ্রগতির একটি উদাহরণ হিসেবে মেনে নেওয়াই যায়। কী করে এমনটি হলো? 

সিএসই বিভাগের সবচেয়ে প্রবীণ অধ্যাপক ড. জাকিয়া বেগম ২০০৮ সালে অনন্যা শীর্ষ দশ সম্মাননা পেয়েছেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে এই সম্মাননা দিয়ে থাকে অনন্যা ম্যাগাজিন। তিনি বলেন, ‘এখনকার মেয়েরা অনেক বেশি জানে। তাদের মেধা ও ইচ্ছেশক্তির জোর অনেক বেশি। তাই তারা অনেক বেশি সংখ্যায় সামনের কাতারে উঠে আসছে। এটি অনেক বড় অর্জন।’ তিনি বলেন, ‘আমি পড়াশোনা শেষ করে পরমাণু শক্তি কমিশনে দীর্ঘদিন চাকরি করেছি। সেখান থেকে অবসরের পর শিক্ষকতা পেশায় এসেছি। এখানে সব নতুন প্রাণের সঙ্গে মেলামেশার সুযোগ পাওয়াটা আমার জন্য অনেক গর্বের।’

ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান রওশন আরা বলেন, ‘আমি বিষয়টিকে নারীর ক্ষমতায়ন বলতে চাই না। ক্ষমতায়ন বললে কেমন যেন একটা ক্ষমতা বা প্রভাব বিস্তারের আভাস পাওয়া যায় যা মোটেই ইতিবাচক নয়। আমি বলতে চাই, নারীরা সমতার দিকে যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, নারীরা আগে থেকেই নিজেদের যোগ্যতার উপর প্রতিষ্ঠিত। সেই যোগ্যতাটুকু পরিবারের বা সমাজের চোখে এত দিন হয়তো মূল্যায়িত ছিল না। এখন সময় ও দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টেছে। অনেক ক্ষেত্রেই পুরুষেরা নারীদের যোগ্যতার প্রকৃত মূল্যায়ন করছেন। তাই নারীদের কাজগুলো আরও স্পষ্ট হচ্ছে।

ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ কি জেনেবুঝে হিসেব করেই শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন? নাকি পুরোটাই কাকতালীয়? জবাবে উপাচার্য অধ্যাপক ড. সহিদ আকতার হুসাইন বলেন, সিএসই বিভাগে নারী শিক্ষকদের আধিক্যের বিষয়টি এক কথায় অসাধারণ। তবে এটি মোটেই পরিকল্পিত বা কাকতালীয় কিছু নয়। এখানে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ পরীক্ষাপদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষক নির্বাচন করা হয়। ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা অনেক বেশি নিজেদের কাজের প্রতি মনোযোগী হয়। অন্তত ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে সেটাই দেখছি। শিক্ষক নির্বাচিত হয়েই তারা নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ রাখছেন।’ 

ড. সহিদ আকতার হুসাইন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়কে নারীবান্ধব হতেই হবে। সবার প্রতি বিশেষত নারীদের প্রতি সম্মানজনক আচরণ শেখানোর শেষ ধাপ হলো বিশ্ববিদ্যালয়। কর্মজীবনে প্রবেশের অব্যবহিত আগের এই পর্বে নারীদের প্রতি মানবিক হয়ে ওঠার যথাযথ শিক্ষা পেলে একজন শিক্ষার্থী সুনাগরিক হতে বাধ্য। 

এশিয়ার সেরা হতে চায় এশিয়া প্যাসিফিক 

দেশের ১০ম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ১৯৯৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয় ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক (ইউএপি)। বিশ্ববিদ্যালয়টি ২০১০ সালের বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় আইনের সকল শর্ত সফলভাবে পূরণ করতে সক্ষম হওয়ায় সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে স্থায়ী সনদ লাভ করেছে।

মূলত ‘এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয় ফাউন্ডেশন’-এর আর্থিক সহযোগিতায় চার বছর মেয়াদি কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ এবং ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ দিয়ে এর যাত্রা। সাতটি স্কুলের অধীনে এখন স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে প্রকৌশল, ফার্মেসি, আর্কিটেকচার, আইন ও মানবাধিকার, ইংরেজি ও ব্যবসা প্রশাসনসহ নয়টি বিভাগে পড়ছেন প্রায় সাড়ে সাত হাজার শিক্ষার্থী। আর তাদের পড়াচ্ছেন প্রায় ৩৬০ শিক্ষক। ছাত্রছাত্রীদের মনন গবেষণামুখী করতেই নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তারা। ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের ফার্মাসি বিভাগের একটা আলাদা সুনাম আছে। এ বিভাগের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন রিসার্চ পেপার আর গবেষণার খবর নিয়মিতই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়। তবে শুধু ফার্মাসিই নয়, পুরকৌশল আর স্থাপত্য বিভাগও এশিয়ার বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমকক্ষ হয়ে উঠছে। শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল মনন বিকাশের সব সুযোগই রাখার চেষ্টা করেছে ইউএপি। তারা মনে করে, শুধু পড়াশোনাই জীবনে সাফল্য আনে না; প্রয়োজন সহশিক্ষা কার্যক্রমও। আধুনিক প্রযুক্তি ও গবেষণাগারের মাধ্যমে সেই সুযোগ তৈরি করে দেয় ইউএপি। তাদের লক্ষ্য একটাই- আগামী কয়েক বছরের মধ্যে গবেষণা ও পড়াশোনার মানের দিক দিয়ে এশিয়ার শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি হওয়া। শিক্ষার্থীদের দাবি, তারা শুধু থিওরি পড়ার মধ্যে ডুবে থাকেন না। প্রতিদিনের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে হাতে-কলমে শেখার চেষ্টা করেন। আর পড়তে পড়তে যখন একঘেয়েমি পেয়ে বসে, তখন বন্ধুরা মিলে আড্ডায় বসে পড়েন। সৃজনশীল কাজ বা নতুন কিছু শেখার মধ্য দিয়েই তারা প্রতিটা মুহূর্তকে উপভোগ করতে চান। তারাই এক সময় উচ্চশিক্ষা নিয়ে যোগ দিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক হিসেবে। 

রাজধানীর ব্যাস্ততম এলাকা ফার্মগেটের গ্রিন রোডে স্থাপিত ইউএপি ভবনে পা রাখলেই চোখ যাবে মাথার ওপর বিশাল আকৃতির কাচের ছাদে। সেই কাচ ভেদ করেই সূর্যের আলো এসে পড়ে ক্যাম্পাসের করিডর আর ক্লাসরুমগুলোতে। আর সেই আলোতেই শানিত হয় তরুণ শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের আলো। একই ভবনে চলে বিভিন্ন বিষয়ের পাঠদান। ভাগাভাগি করে নেন একে অপরের ভাবনা। বহুমাত্রিক পরিবেশ আছে বলেই প্রকৌশলের ছাত্ররা যোগ দিচ্ছেন ড্রামা ক্লাবে, লিটারারি ক্লাবে যোগ দিয়ে বিবিএর শিক্ষার্থীরাও পড়ছেন নানা স্বাদের বই। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় প্রতিটি বিভাগের সামনেই দেখা যায় দেয়ালচিত্র, নানা বর্ণের দেয়ালিকার ছড়াছড়ি। রয়েছে পূর্ণাঙ্গ একটি গ্রন্থাগার; যা দেশি-বিদেশি প্রায় ২১ হাজার বই, ৩০ হাজার ই-বুক এবং সাড়ে ২০ হাজার ই-জার্নালে সমৃদ্ধ। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে চার হাজার বর্গফুটের একটি সুসজ্জিত অডিটোরিয়াম রয়েছে, যেখানে প্রায় তিনশ’ শিক্ষার্থী একসঙ্গে বসে উপভোগ করতে পারেন নানা আয়োজন। মাল্টিপারপাস ব্যবহারের জন্য আছে ২ হাজার ৭০০ বর্গফুট আয়তনের কেন্দ্রীয় হল রুম। এখানে ইনডোর গেমস, নানান প্রদর্শনী, সাংস্কৃতিক বা অন্যসব অনুষ্ঠানের প্রস্তুতির জন্য ব্যবহার হয়।

বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রায় ৩০টি বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ইউএপির সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি রয়েছে। ফলে উচ্চশিক্ষার সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা, শিক্ষার্থীদের ক্রেডিট ট্রান্সফার, শিক্ষা উপকরণ ও জ্ঞানভিত্তিক তথ্য আদান-প্রদান, যৌথভাবে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা, ট্রেনিং পরিচালনা, শিক্ষাসংক্রান্ত পরামর্শ সভাসহ নানা ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা হয়। শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন স্কলারশিপ। এসএসসি ও এইচএসসির ফলাফল ছাড়াও প্রতিটি বিভাগের ৩ শতাংশ শিক্ষার্থীকে টিউশন ফি ছাড় দেওয়া হয়। মুক্তিযোদ্ধা সন্তান, দারিদ্র্য ও মেধাবী শিক্ষার্থীদেরও টিউশন ছাড় দেওয়া হয়। ইউএপির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সুলতান মাহমুদ বলেন, ‘মানসম্পন্ন শিক্ষার বিকল্প নেই। তাই ইউএপি শিক্ষার মানের সঙ্গে আপোষ করে না। এখানে গবেষণার জন্য আলাদা বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয়। উপস্থিতি, অ্যাসাইনমেন্ট, টিউটোরিয়ালসহ সব পরীক্ষার উত্তরপত্র যথাযথ মূল্যায়ন শেষে ফলাফল প্রকাশ করা হয়। গবেষণা, উদ্ভাবন ও সামাজিক প্রভাব- এই তিনটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে ২০২১ সালে সিমাগো ইনস্টিটিউশনস র‌্যাংকিংয়ে ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে শীর্ষ পাঁচে জায়াগা করে নিয়েছে। আর দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১৯তম স্থানে রয়েছে। এ ছাড়া ওয়ার্ল্ড র‌্যাংকিংয়ে ইউএপি ৮৩৭ এবং এশিয়া র‌্যাংকিংয়ে ৪৫৮তম অবস্থান করছে।’ 

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষকদের গবেষণায় মনোযোগী হওয়া এবং গবেষণার সংস্কৃতি গড়ে তোলা জরুরি। মৌলিক গবেষণার ক্ষেত্রে দেশের বেশ কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ভালো করছে। গত অর্থবছরে গবেষণা খাতে তাদের সর্বোচ্চ বরাদ্দের বিষয়টিও অত্যন্ত ইতিবাচক। ভবিষ্যতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মদক্ষতা মূল্যায়নের ভিত্তিতে গবেষণা কাজ পরিচালনায় বাজেট দেওয়া হবে।’ 

আনন্দপাঠ ইউল্যাবে

তরুণদের পূর্ণ সম্ভাবনা বিকশিত করার লক্ষ্যে ২০০২ সালে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব) প্রতিষ্ঠা করেন কাজী শাহেদ আহমেদ। সেই থেকে নিজস্ব স্বকীয়তায় দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে এটি। পরবর্তী প্রচেষ্টা তাই আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রসার। এরই মধ্যে মিলেছে বেশ কিছু বৈশ্বিক স্বীকৃতি। ২০২১ সালে ইউল্যাব জিতেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা ও গবেষণা সংস্থা কোয়াককোয়ারেলি সায়মন্ডস (কিউএস) সোশ্যাল সায়েন্স সিলভার অ্যাওয়ার্ড, যা ‘শিক্ষায় অস্কার’ হিসেবে পরিচিত। জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য টাইমস হায়ার এডুকেশন র‌্যাংকিংয়ে দেশের মধ্যে চতুর্থ স্থান দখল। আর বিশ্বের ১ হাজার ১১৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১৫৬তম স্থান লাভ করে। ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়টি ২০২০ সালে গবেষণা খাতে ব্যয় করেছে প্রায় ৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।

বিশ্ববিদ্যালয়টিতে স্নাতক পর্যায়ে বিবিএ, মিডিয়া স্টাডিজ অ্যান্ড জার্নালিজম, ইংরেজি, কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল, তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিষয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে। আর স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়ানো হয় এমবিএ, ইএমবিএ, মাস্টার্স ইন কমিউনিকেশন এবং ইংরেজি (লিটারেচার অ্যান্ড কালচারাল স্টাডিজ, অ্যাপ্লায়েড লিঙ্গুইস্টিকস অ্যান্ড টেসল এবং লিটারেচার অ্যান্ড ক্রিয়েটিভ রাইটিং)। তবে ইউল্যাব মনে করে, শুধু লেখাপড়া করেই জীবনের চরম শিখরে পৌঁছানো সম্ভব নয়। তাই শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে খেলার মাঠ, বাস্কেটবল গ্রাউন্ড, ইনডোর গেমসহ খেলাধুলার নানা ব্যবস্থা। আছে শাটল বাস সার্ভিস, আধুনিক ক্যান্টিন, মেয়েদের জন্য হোস্টেল। করোনাকালের অনেক আগে থেকেই অনলাইন শিক্ষার সঙ্গে পরিচিতি ছিল ইউল্যাবের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। বিভিন্ন অরাজকতা কিংবা হরতালের কথা মাথায় নিয়ে তারা অনলাইন লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম দাঁড় করায়, যেটাকে বলা হচ্ছে ‘মুডল’। করোনাকালে এটি আরও কার্যকর হয়েছে। ১০ শতাংশ থেকে শতভাগ বৃত্তির সুযোগ দিয়ে থাকে ইউল্যাব। এসএসসি ও এইচএসসির ফলের ওপর ভিত্তি করে শিক্ষার্থীরা বৃত্তি পান। আবার প্রতি সেমিস্টারে ভালো ফল করলেও বৃত্তি পাওয়ার সুযোগ থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাস মোহাম্মদপুরের রামচন্দ্রপুর বেড়িবাঁধ।

ইউল্যাব বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সহ-সভাপতি ড. কাজী আনিস আহমেদ বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যেসব কর্মক্ষেত্রের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছেন, ভবিষ্যতে আর হয়তো তা দেখা যাবে না। হতে পারে সম্পূর্ণ নতুন ধরনের কাজের ক্ষেত্র তৈরি হবে, যা এখন কল্পনাও করতে পারছি না। তাই জীবনব্যাপী শিক্ষা গ্রহণের জন্য শিক্ষার্থীদের একটি মানসিক ক্ষুধা তৈরি হওয়া দরকার। এটাই লিবারেল আর্টস শিক্ষার মূল বক্তব্য।’ বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ইমরান রহমান বলেন, ‘একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স ১৬-১৭ বছর কিছুই না। ইউল্যাবকে আরও অনেক দূর যেতে হবে। আমি চাই আমাদের পাঠদান পদ্ধতি যেন আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হয়। শিক্ষার্থীরা শুধু মুখস্থ না করে প্রকৃত কিছু শিখুক। লেখাপড়ার পাশাপাশি অন্যান্য কাজও করবে তারা। যেটি একজন স্নাতক শিক্ষার্থীর করা উচিত। কো-কারিকুলার, ক্লাব, ফিল্ড ট্রাভেল, দেশের বাইরে যাবে, শিখবে। শিক্ষার্থীরা কিন্তু অনেকেই সাধারণ পরিবার থেকে আসে। আমরা তাদের এই সুযোগগুলো করে দিতে চাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘ইউজিসি আমাদের বিস্তর গাইডলাইন দেয়। তবে আধুনিকায়নসহ আনুষঙ্গিক কিছু বিষয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত। সবচেয়ে সেরা কাজটি হবে যদি সরকার আমাদের আরও ক্ষমতায়ন করে।’ 

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি শিক্ষায় বিশ্ব সংযোগে এআইইউবি 

শিক্ষানুরাগী ড. আনোয়ারুল আবেদীন এবং ফিলিপাইনের আমা গ্রুপের যৌথ বিনিয়োগে ১৯৯৪ সালে যাত্রা শুরু করে আমা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ। পরবর্তীকালে আমা গ্রুপ তাদের অংশীদারত্ব ছেড়ে দিলে বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম হয় আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ (এআইইউবি)। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার পাশেই রাজধানীর কুড়িলে বিশ্ববিদ্যালয়টির নজরকাড়া ক্যাম্পাস। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রকৌশল শিক্ষার ক্ষেত্রে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আলাদা সুনাম আছে। এই অনুষদের স্নাতক পর্যায়ে রয়েছে চারটি বিভাগ-তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল (ইইই), কম্পিউটার প্রকৌশল (সিওই), শিল্প ও উৎপাদন প্রকৌশল (আইপিই) এবং স্থাপত্য। স্নাতকোত্তর ডিগ্রি রয়েছে দুটি- মাস্টার্স ইন ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং ও মাস্টার অব ইঞ্জিনিয়ারিং ইন টেলিকমিউনিকেশন। এ অনুষদের শিক্ষাক্রম ও শিক্ষানীতি আন্তর্জাতিকভাবে প্রসিদ্ধ ‘ওয়াশিংটন অ্যাকর্ড’ অনুযায়ী প্রণীত। গবেষণার জন্যও এআইইউবি একটি আদর্শ বিশ্ববিদ্যালয়। ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি গবেষণা খাতে প্রায় ২২ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয় করেছে। আর গবেষণা কাজের জন্য এআইইউবিতে রয়েছে এনালগ ইলেক্ট্রনিক্স ল্যাব, কম্পিউটার হার্ডওয়্যার ল্যাব, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ল্যাব, কন্ট্রোল সিস্টেম ল্যাব, ডিজিটাল ইলেক্ট্রনিক্স ল্যাব, ডিজিটাল সিগন্যাল প্রসেসিং ল্যাব, ইলেক্ট্রিকাল সার্কিটস ল্যাব, ইলেক্ট্রিকাল মেশিন্স ল্যাব, মিজারমেন্ট অ্যান্ড ইন্সট্রুমেন্টেশন ল্যাব, মাইক্রো কম্পিউটার ল্যাব, মাইক্রো প্রসেসর ল্যাব, মাইক্রোওয়েভ ইঞ্জিনিয়ারিং ল্যাব, মোটর রিপেয়ার শপ, পিসিবি ইচিং রুম, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইলেক্ট্রনিক্স ল্যাব, টেলিকমিউনিকেশন ল্যাব, ভিএলএসআই ল্যাব, ভিএইচডিএল অ্যান্ড লজিক সিনথেসিস ল্যাব, সুইচ গিয়ার, প্রজেক্ট ল্যাব ও সেলুলার কমিউনিকেশন ল্যাব। বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে রেফারেন্স ও জার্নালেরও রয়েছে বিশাল সংগ্রহ। বর্তমানে লাইব্রেরিতে আছে প্রায় ৩০ হাজার বই ও দুই শতাধিক অনলাইন জার্নাল। এছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ের উপর রয়েছে ভিডিও সিডির সংগ্রহ। একসঙ্গে বসে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীর পড়ার ব্যবস্থা আছে প্রযুক্তিনির্ভর এই লাইব্রেরিতে।

প্রকৌশল অনুষদের বহু প্রাক্তন শিক্ষার্থী দেশ-বিদেশের নামি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। গুগলের প্রিন্সিপাল ইঞ্জিনিয়ার পদে আছেন কম্পিউটার প্রকৌশল বিভাগের সাবেক ছাত্র জাহীদ সবুর। ইইই বিভাগের সাবেক ছাত্রী তারজিনা ইসলাম বর্তমানে বিখ্যাত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপলে কর্মরত আছেন। অনেকে বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞান বিতরণ করছেন শিক্ষক হিসেবেও। প্রকৌশল অনুষদের ডিন এবিএম সিদ্দিক হোসেন বলেন, ‘সুবিশাল স্থায়ী ক্যাম্পাস, উন্নত অবকাঠামো আর আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরি হয়েছে জ্ঞান আহরণের এক চমৎকার পরিবেশ।’ 

বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ব্যবসায় শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বিষয়ের পাশাপাশি ইদানীং কলা ও সমাজবিজ্ঞানের প্রতিও শিক্ষার্থীরা আগ্রহী হচ্ছেন, বাড়ছে কাজের সুযোগ। তাই এআইইউবি কলা ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদ থেকে চারটি বিষয়ে স্নাতক ও দুটি বিষয়ে স্নাতকোত্তর করার সুযোগ দিচ্ছে। স্নাতক পর্যায়ে রয়েছে গণমাধ্যম ও গণযোগাযোগ, অর্থনীতি, ইংরেজি এবং আইনে পড়াশোনার সুযোগ। আর উন্নয়ন অধ্যয়ন এবং গণস্বাস্থ্য বিষয়ে স্নাতকোত্তর করা যাবে। ‘আউটকাম বেজড এডুকেশন’ নীতিমালা অনুসারে সাজানো হয়েছে এ অনুষদের কার্যক্রম। এলএলবি শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে অত্যাধুনিক ‘মুট-কোর্ট’, যার মাধ্যমে তারা আদালতের কার্যক্রম হাতে-কলমে শিখতে পারেন। এছাড়া রয়েছে আধুনিক মিডিয়া স্টুডিও। ভিডিও সম্পাদনা থেকে শুরু করে ডাবিং, সবই করা যায় এই স্টুডিওতে। রয়েছে অ্যানিমেশন ল্যাবও, যেখানে বসে শিক্ষার্থীরা তৈরি করে ফেলছেন টুডি বা থ্রিডি চলচ্চিত্র, যা তাদের পাঠ্যক্রমেরই অংশ। এআইইউবিতে রয়েছে বৃত্তির সুবিধাও। কলা ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের অনুষদের লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের জন্য মানসম্মত শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করা। পাঠ্যক্রমকে এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যেন ছাত্রছাত্রীরা সমাজ ও রাষ্ট্রের সমস্যা এবং সম্ভাবনা সম্পর্কে সম্যক ধারণা পায়।’ 

পরিবেশবান্ধব ক্যাম্পাসে জ্ঞান বিলায় ইস্ট ওয়েস্ট

স্বল্প খরচে মধ্যবিত্তের জন্য আন্তর্জাতিকমানের শিক্ষা দেওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি (ইডব্লিউইউ) প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনসহ আরও কয়েকজন সমমনা বিদ্যানুরাগী। মহাখালীর ভাড়া করা একটি ভবনে মাত্র ২০ শিক্ষার্থী ও ছয়জন শিক্ষক নিয়ে ১৯৯৬ সালের সেপ্টেম্বরে এর যাত্রা শুরু। প্রাচ্যের সংস্কৃতি ও পাশ্চাত্যের উদ্ভাবনার সমন্বিত জ্ঞানের শিক্ষায় যোগ্য মানবসম্পদ তৈরিই ছিল প্রতিষ্ঠাতাদের লক্ষ্য। এখন গুণে-মানে-আকারে দেশের অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ ইডব্লিউইউ। রাজধানীর আফতাব নগরে বিশ্ববিদ্যালয়টির নান্দনিক ক্যাম্পাস। সিরামিক ইট দিয়ে তৈরি লাল রঙের পরিবেশবান্ধব এ স্থাপনা যেন তরুণদের উদ্দীপ্ত করে দেশের প্রতি ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধের চেতনায়। প্রবেশপথের ডান পাশেই বিশালাকৃতির শহীদ মিনার; যা ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, দেশের কৃষ্টি ও ঐতিহ্যের প্রতীক। 

প্রতিষ্ঠার ২৫ বছরেই নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে পেরেছে প্রতিষ্ঠানটি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের সব শর্ত পূরণ করে এটি পেয়েছে স্থায়ী সনদ, যা হাতেগোনা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়েরই রয়েছে। ১০ হাজারের অধিক শিক্ষার্থীর জন্য এখন সাড়ে চারশর মতো শিক্ষক। তাদের বেশিরভাগই আবার পিএইচডিধারী। সময়ের চাহিদা ও জ্ঞানের মৌলিকত্ব প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন বিষয়ে পড়ানো হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। এর মধ্যে বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের অধীন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি, ফার্মেসি, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং। লিবারেল আর্টস অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্স অনুষদের অধীন আছে ইংরেজি, আইন, সামাজিক সম্পর্ক, তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা এবং সমাজবিজ্ঞান। এছাড়া ব্যবসায় ও অর্থনীতি অনুষদের অধীন রয়েছে ব্যবসায় প্রশাসন ও অর্থনীতি বিভাগ। শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও কর্মে যথোপযুক্তভাবে গড়ে তোলার জন্য আছে আন্তর্জাতিকমানের লাইব্রেরি, গবেষণাকেন্দ্র, ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং সেন্টার, কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল, মেডিক্যাল সেন্টার, ২৫টি ক্লাব। লাইব্রেরিতে একাডেমিক বই ছাড়াও গবেষণাগ্রন্থ, রেফারেন্স বই, জার্নাল ও ই-বুকের বিশাল ভাণ্ডার। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গবেষণায় উৎসাহিত করতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং। এ কেন্দ্র থেকে নিয়মিত দক্ষতার উন্নয়নে প্রশিক্ষণ এবং গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করা হয়। তাই তো এডি সায়েন্টিফিক ইনডেক্স-২০২১ র‌্যাংকিংয়ে ইস্ট ওয়েস্ট অর্জন করেছে দেশসেরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি। আর সরকারি ও বেসরকারি সম্মিলিত তালিকায় আছে চতুর্থ অবস্থানে। বিশ্বের ২০৬টি দেশের ১৩ হাজার ৫৩০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যউপাত্ত নিয়ে এডি সায়েন্টিফিক ইনডেক্স তাদের ওয়েবসাইটে এই র‌্যাংকিং প্রকাশ করে। ইডব্লিউইউর প্রায় ৪০ জন শিক্ষক আছেন সেরা বিজ্ঞানীর তালিকায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি ব্যতিক্রমী দিক হলো তুলনামূলক কম টিউশন ফি নিলেও বিভিন্ন ধরনের বৃত্তির মাধ্যমে সে অর্থের বড় একটা অংশ শিক্ষার্থীদের কাছেই ফেরত চলে যায়। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //