যেভাবে পাবেন কমনওয়েলথ স্কলারশিপ

বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক স্কলারশিপগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্য সরকার প্রদত্ত কমনওয়েলথ স্কলারশিপ অন্যতম। প্রতিবছর কমনওয়েলথভুক্ত দেশসমূহের মেধাবী শিক্ষার্থীরা এ স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স ও পিএইচডি কোর্স সম্পন্ন করেন।কমনওয়েলথ স্কলারশিপের নির্বাচন প্রক্রিয়াও দীর্ঘমেয়াদি, যা কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয়। এক বছরেরও বেশি সময় লাগে নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে। অর্থাৎ, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে যাঁরা এ স্কলারশিপের জন্য নির্বাচিত হবেন তাদের প্রাথমিক আবেদন প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।

কমনওয়েলথ স্কলারশিপের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেছেন ২০০৯ সালে লিডস বেকেট ইউনিভার্সিটিতে পিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিষয়ে মাস্টার্স ও ২০১২ সালে স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিষয়ে পিএইচডির জন্য কমনওয়েলথ স্কলারশিপপ্রাপ্ত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জহিরুল হক শাকিল।

যারা কমনওয়েলথ স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবেন

কিছু যোগ্যতা ও শর্ত পূরণ সাপেক্ষে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর যেকোনো নাগরিক যুক্তরাজ্যের কমনওয়েলথ স্কলারশিপের জন্য তালিকাভুক্ত নির্ধারিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ১ বছর মেয়াদি মাস্টার্স ও ৩ বছর মেয়াদি পিএইচডি ডিগ্রির জন্য আবেদন করতে পারবেন। মাস্টার্স কোর্সের জন্য ভর্তির যোগ্যতাসহ সনাতন পদ্ধতিতে সংশ্লিষ্ঠ কোর্সে দ্বিতীয় শ্রেণির ব্যাচেলর ডিগ্রি থাকতে হবে। আর পিএইচডির জন্য থাকতে হবে উচ্চতর দ্বিতীয় শ্রেণির মাস্টার্স ডিগ্রি। গ্রেডিং পদ্ধতিতে বি বা বি প্লাস থাকলে আবেদন করা যাবে। এটি হলো ন্যূনতম যোগ্যতা। তবে আগেই বলা হয়েছে, এটি বিশ্বের মধ্যে অন্যতম প্রেস্টিজিয়াস স্কলারশিপ এবং সবচেয়ে বেশি প্রতিযোগিতামূলক তাই শিক্ষার সব ক্ষেত্রে প্রথম শ্রেণি বা অন্তত এ মাইনাস গ্রেড থাকা প্রয়োজন।

যেভাবে আবেদন করবেন 

বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক বাছাইয়ের জন্য যুক্তরাজ্যের কমনওয়েলথ স্কলারশিপ কমিশন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) দায়িত্ব প্রদান করেছে। ইউজিসি তাদের ওয়েবসাইট (www.ugc.gov.bd) ও বেশ কয়েকটি প্রধান জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় সাধারণত প্রতি বছরের আগস্ট মাসে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আবেদন আহ্বান করে থাকে। যাঁরা ২০২০ সালের কমনওয়েলথ স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে ইচ্ছুক তাদের প্রাথমিক বাছাইপ্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। আগামী ১৫  সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্ধারিত ফরমেটে আবেদনপত্র পূরণ করে শিক্ষাগত যোগ্যতার সব সনদপত্রের সত্যায়িত কপি, আইইএলটিএসের সনদের সত্যায়িত কপি (যদি থাকে), প্রকাশনার কপি (যদি থাকে), ১ কপি পাসপোর্ট সাহজের ফটোসহ আবেদন পত্র ইউজিসির সচিব বরাবর পৌঁছাতে হবে। আবেদনপত্র পাঠানোর ঠিকানা: সচিব, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, আগারগাঁও প্রশাসনিক এলাকা, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা-১২০৭। 

যেসব বিষয়ে আবেদন করা যাবে

এ বছর ৬টি থিমের উপর মাস্টার্স বা পিএইচডি আবেদন আহ্বান করা হয়েছে। বিষয়গুলো হলো: ক) সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ফর ডেভেলপমেন্ট; খ) স্ট্রেন্দেনিং হেলথ সিস্টেমস অ্যান্ড ক্যাপাসিটি; গ) প্রোমোটিং গ্লোবাল প্রসপারিটি; ঘ) স্ট্রেন্দেনিং গ্লোবাল পিস, সিকিউরিটি অ্যান্ড গভার্নেস; ঙ) স্ট্রেন্দেনিং রেসিলিয়েন্স অ্যান্ড রেসপন্স টু ক্রাইসেস; ও চ) এক্সেস, ইনক্লুশন অ্যান্ড ওপরচুনিটি। [(i) Science and technology for development (ii) Strengthening health systems and capacity (iii) Promoting global prosperity (iv) Strengthening global peace, security and governance (v) Strengthening resilience and response to crises (vi) Access, inclusion and opportunity]।

মাস্টার্স বা পিএইচডি স্কলারশিপের জন্য এই ৬টি থিমকে বিবেচনায় রেখে আবেদনকারীকে তার মূল বিষয় অর্থাৎ, কোন বিষয়ে তার প্রথম বা টার্মিনাল ডিগ্রি অর্জন করেছেন তা উল্লেখ করতে হবে। একজন আবেদনকারীকে মাস্টার্স অথবা পিএইচডি যেকোনো একটি প্রোগ্রামের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

নির্বাচন প্রক্রিয়া

আবেদনপত্র ইউজিসিতে পৌঁছার পর তাঁরা যাচাইবাছাই করে পূর্ববর্তী পরীক্ষাগুলোর ফলাফল, প্রকাশনা প্রভৃতির ওপর ভিত্তি করে শর্টলিস্ট করবেন। শর্টলিস্টভুক্ত ক্যান্ডিডেটদের সাধারণত অক্টোবরের শেষ অথবা নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হবে। ইউজিসি সমজাতীয় বিষয়গুলোর ওপর ভিত্তি করে সাক্ষাৎকারের জন্য বোর্ড গঠন করে। সাধরণত ইউজিসির একজন সদস্য হন সাক্ষাৎকার বোর্ডের সভাপতি। সদস্য হিসেবে উপস্থিত থাকেন অন্তত ১০/১২ জন বিশেষজ্ঞ ও দেশের অধ্যাপকগণ। প্রতি বোর্ড থেকে সাধারণত ১/২ জন মাস্টার্সের জন্য ও ১/২ জন পিএইচডির জন্য মনোনয়ন দেন।

মনোনয়নপ্রাপ্তরা যুক্তরাজ্যের কমনওয়েলথ স্কলারশিপ কমিশনের ওয়েবসাইটে গিয়ে নির্ধারিত লিংকে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। এ সময় প্রার্থীকে যুক্তরাজ্যে পড়তে ইচ্ছুক এমন তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম দিতে হবে। দুইজন প্রফেসরের নাম দিতে হবে যারা অনলাইনে নির্ধারিত তারিখের মধ্যে আবেদনকারীর সপক্ষে লেটার অব রিকোমেন্ডেশন সাবমিট করবেন। প্রার্থীর যদি আইইএলটিএসের স্কোর না থাকে তাহলে জানুয়ারির মধ্যে অবশ্যই ইউকেভিআই আইইএলটিএস দিতে হবে। আইইএলটিএসের নুন্যতম স্কোর হলো ৬ দশমিক ৫ পয়েন্ট কিন্ত কোনো ব্যান্ডে কমপক্ষে ৬ পেতে হবে। তবে প্রার্থী যদি প্রথম সারির ইউনিভার্সিটিতে পড়তে ইচ্ছুক হন তাহলে তাকে ওই স্কোর অর্জন করতে হবে। যেমন কেউ যদি স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজে পিএইচডিতে এডমিশন নিতে চান তাহলে আইইএলটিএসে ন্যূনতম স্কোর হলো ৭ পয়েন্ট ৫ এবং প্রতিটি ব্যান্ডে অন্তত ৭ পেতে হবে।

এই ফরমটি খুবই সতর্কতার সঙ্গে পূরণ করতে হবে। কারণ ওই আবেদনের ওপর ভিত্তি করেই কমনওয়েলথ স্কলারশিপ কমিশনের নির্বাচনি বোর্ড চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবে।

এপ্রিলের দিকে যুক্তরাজ্যের কমনওয়েলথ স্কলারশিপ কমিশন নির্বাচিত বা সফল প্রার্থীদের চিঠি দেওয়া শুরু করে। এরপর সফল প্রার্থীদের মেডিকেল ফিটনেস সার্টিফিকেট ও ডাটা প্রোটেকশন ফরম পূরণ করে পাঠাতে হয়। সবকিছু ঠিক থাকলে মে মাসে অ্যাওয়ার্ড নোটিফেকশন লেটার প্রেরণ করা হয়। পরবর্তীতে ব্রিটিশ কাউন্সিল নির্বাচিত প্রার্থীদের ভিসা ও টিকেটের যাবতীয় পদক্ষেপ নেন। সেপ্টেম্বর মাসে চূড়ান্ত নির্বাচিত প্রার্থীদের যুক্তরাজ্যে গমন করতে হয়।

লেখক: অধ্যাপক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট

ইমেইলঃ [email protected]

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //