দিল্লি দাঙ্গার চার্জশিটে শুধুই বিজেপিবিরোধীদের নামধাম

ভারতের দিল্লি দাঙ্গার চার্জশিটে একজন বিজেপি নেতা-কর্মীর নাম রাখেনি পুলিশ। অথচ অভিযুক্ত করা হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের।

১৭ হাজার ৫০০ পাতার চার্জশিটের ছত্রে ছত্রে দাঙ্গার বিশদ বিবরণ। দিল্লি দাঙ্গা নিয়ে এই চার্জশিট আদালতে পেশ করেছে দিল্লির পুলিশ। কিন্তু সেই চার্জশিট নিয়েই শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। সরাসরি আঙুল উঠছে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ দিল্লি পুলিশের নিরপেক্ষতা নিয়ে।

আদালতে দিল্লি পুলিশ যে চার্জশিট পেশ করেছে, তাতে কেবলমাত্র বিজেপি বিরোধী আন্দোলনের নেতানেত্রীদের নাম। ২০২০ সালের গোড়া থেকে দেশ জুড়েই শুরু হয়েছে নাগরিকত্ব আইনবিরোধী বিক্ষোভ। দিল্লিতেও তার ঢেউ লেগেছে যথেষ্ট। জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় সর্বত্রই প্রতিবাদের আগুন জ্বলে উঠছে। ঘটনাচক্রে দিল্লি দাঙ্গায় দিল্লি পুলিশ যতজনের নাম চার্জশিটে রেখেছে তাদের অধিকাংশই নাগরিকত্ব আইনবিরোধী আন্দোলনের প্রথম সারির কর্মী। জেএনইউয়ের ছাত্র নেতা থেকে শুরু করে আপ থেকে সাসপেন্ড হওয়া নেতা সবাইকে অভিযুক্ত করেছে পুলিশ। 

কিন্তু বিজেপি বা গেরুয়া শিবিরের কাউকে সেখানে রাখা হয়নি। অথচ বিজেপির কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে সে সময় সরাসরি অভিযোগ উঠেছিল।

বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র দাঙ্গা পূর্ব দিল্লিতে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, সিএএ নিয়ে যাঁরা জায়গায় জায়গায় আন্দোলন করছেন, তাদের এরপর তুলে দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। পুলিশ নয়, তারাই তুলে দেবেন বলে হুমকি দিয়েছিলেন কপিল। তার কিছুদিন আগে বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর 'গোলি মারো শালোকো স্লোগান' দিয়েছিলেন প্রকাশ্যে।

সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা জুলিও রিবেইরো দুইটি চিঠি দিয়েছেন দিল্লির পুলিশ কমিশনারকে। সেখানে তিনি বলেছেন, কী করে খপিল মিশ্র, অনুরাগ ঠাকুর, প্রবেশ বর্মাকে ছাড় দেয়া হলো? কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলো না? রিবেইরো পদ্মভূষণ ও রাষ্ট্রপতির পুলিশ মেডেল পেয়েছেন। পুলিশ মহলে তিনি রীতিমতো শ্রদ্ধার পাত্র।

কিছু দিন আগেই একটি রিপোর্ট পেশ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি। সেখানে দিল্লি দাঙ্গার জন্য সরাসরি দিল্লি পুলিশকেই অভিযুক্ত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, দাঙ্গাকারীদের সাথে হাত মিলিয়েছিল পুলিশের একাংশ। এ বিষয়ে পুলিশের কাছে কৈফিয়তও চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখনো পর্যন্ত পুলিশ তা নিয়ে কোনো উত্তর দেয়নি। 

বরং কেন চার্জশিটে ছাত্রদের নাম রাখা হয়েছে, তার ব্যাখ্যা দিয়েছে পুলিশ। তাদের বক্তব্য, চাক্কা জ্যামের মতো অগণতান্ত্রিক আন্দোলনে সামিল হয়েছিল ছাত্ররা। তারা ২০ কিলোমিটার হেঁটে দাঙ্গাবিধ্বস্ত অঞ্চলে পৌঁছেছিল। তাদের নির্দেশেই স্থানীয় লোকেরা দাঙ্গায় নেমেছিল।

দিল্লি পুলিশের এ হেন চার্জশিট সমস্ত মহলেই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। অনেকেই বলছে, পুলিশ সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে এমন চার্জশিট তৈরি করেছে। -ডয়চে ভেলে

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //