‘বাধ্য’ হয়েই ভারতে কার্যক্রম স্থগিত করলো অ্যামনেস্টি

‘বাধ্য’ হয়েই ভারতে কার্যক্রম স্থগিত করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

সংস্থাটি বিবৃতিতে বলেছে, চলতি মাসের শুরুর দিকে ভারতে তাদের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়। তাই তারা তাদের কর্মীদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।

বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিকূল প্রতিবেদনের জেরে অ্যামনেস্টির বিরুদ্ধে ভারত সরকার এমন ব্যবস্থা নিয়েছে বলে লন্ডনভিত্তিক এই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনটি অভিযোগ করেছে। 

ওয়াকিবহাল মহলের প্রশ্ন- জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা তুলে নেয়া, দিল্লিতে দাঙ্গার মতো ঘটনায় প্রদানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকারের সমালোচনা করার জন্যই কি মাসুল দিতে হলো অ্যামনেস্টিকে।

ভারতে কোনো সংস্থা যদি বিদেশি অনুদান নিতে চায় তবে বিদেশি অনুদান (নিয়ন্ত্রণ) আইনে নথিবদ্ধ করা বাধ্যতামূলক। নয়াদিল্লির অভিযোগ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তা করেনি। আবার কোনো অলাভজনক সংস্থা ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট (এফডিআই) বা প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের চ্যানেলে বিদেশি অর্থ নিতে পারে না। 

অ্যামনেস্টি এটাই করেছে বলে অভিযোগ ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের। তাদের বক্তব্য, সেই কারণেই অ্যামনেস্টির অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।

এরপরেই আজ মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) একটি প্রেস বিবৃতি জারি করে সংস্থাটি জানিয়েছে, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ভারতের সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দিয়েছে সরকার। সেটা আমরা জানতে পেরেছি গত ১০ সেপ্টেম্বর। বাধ্য হয়ে সংস্থার সমস্ত কাজকর্ম বন্ধ রাখা হয়েছে। ভারতের সব কর্মীকেও বসিয়ে দিয়ে সব প্রচার ও গবেষণার কাজ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছি।

নয়াদিল্লির তরফে যে সব অভিযোগ আনা হয়েছে, সেগুলো উড়িয়ে দিয়ে অ্যামনেস্টির বক্তব্য, ভারত সরকারের ক্রমাগত মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে অপদস্থ করার অপচেষ্টার এটা শেষ নিদর্শন। প্রমাণ হয়নি এমন অভিযোগ ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগের ভিত্তিতেই সরকার এই ব্যবস্থা নিয়েছে। 

ভারতের সব আইনকানুন মেনে তারা কাজকর্ম করেন বলেও দাবি করেছেন সংগঠনের কর্মকর্তারা।

গত বছরের আগস্টে ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপ করে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা তুলে নেয়ার পর কড়া নিয়ন্ত্রণ জারি হয়েছিল উপত্যকায়। মোবাইল, ল্যান্ডলাইন, ইন্টারেন্ট, কেবল টিভিসহ যাবতীয় পরিষেবা বন্ধ করে রেখেছিল কেন্দ্র। তাতে জম্মু কাশ্মীরের নাগরিকদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে মোদি সরকারের সমালোচনা করেছিল অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। আবার এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে দিল্লিতে দাঙ্গার সময়েও একই অবস্থান ছিল সংস্থার। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একটা বড় অংশ মনে করছেন, এই সব কারণেই অ্যামনেস্টির বিরুদ্ধে কেন্দ্রের এই পদক্ষেপ।  

সেই দিকে ইঙ্গিত করে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডিয়ার এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর অবিনাশ কুমার বলেন, দুই বছর ধরে ভারতে অ্যামনেস্টির কাজকর্মে বাধাদানের চেষ্টা চলছে। অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়। দ্ব্যর্থহীন ভাষায় সরকারের নানা অনৈতিক ও অমানবিক কাজকর্মের সমালোচনা করার জন্যই ইডিসহ সরকারের নানা সংস্থার মাধ্যমে হেনস্থা করা হচ্ছে। সাম্প্রতিককালে দিল্লি সংঘর্ষে তার আগে জম্মু-কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। অ্যামনেস্টি শুধু অবিচারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিল। তার জন্য অ্যাকাউন্ট ফ্রিজের মতো ব্যবস্থা নেয়া অনুচিত।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //