মেঘালয়ের সব বাঙালিকে বাংলাদেশি দাবি, উত্তপ্ত শিলং

এবার ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মেঘালয়ের সব বাঙালিকেই ‘বাংলাদেশি’ বলে দাবি তুলেছে খাসি ছাত্র সংগঠন (কেএসইউ)। এ নিয়ে সেখানে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।

মেঘালয়ের ইছামতীতে মুসলিমবিদ্বেষী নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) বিরোধী আন্দোলনে সময় ফেব্রুয়ারিতে স্থানীয় গ্রামবাসীদের সাথে হাতাহাতিতে এক খাসি ট্যাক্সিচালকের মৃত্যু হয়। তার জেরে স্থানীয় বাঙালিদের ভয়ে গ্রামছাড়া হতে হয়েছিল বলে অভিযোগ। পুলিশ অনেককে ধরে নিয়ে যায়। জঙ্গি সংগঠন এইচএনএলসিও অবিলম্বে বাঙালিদের রাজ্য ছাড়ার হুমকি দেয়।

সম্প্রতি ফের অভিযোগ ওঠে ইছামতীর পুরুষদের এখনো গ্রামে ফিরতে দেয়া, ব্যবসা করতে দেয়া হচ্ছে না। গ্রামে থাকা নারী-শিশুরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এ নিয়ে জাতীয় মহিলা কমিশন রাজ্যের কাছে রিপোর্ট তলব করে। কিন্তু তদন্তে ও স্থানীয় গ্রামবাসীদের বক্তব্যে নির্যাতনের কথা প্রমাণিত হয়নি। বিষয়টি নিয়ে বরাকের আমরা বাঙালি সংগঠন, সিআরপিসি আন্দোলনে নেমেছে। সর্বভারতীয় মহিলা কংগ্রেস সভাপতি সুস্মিতা দেবও মেঘালয়ের বাঙালি নিগ্রহ নিয়ে মুখ খোলেন। নালিশ জানান প্রধানমন্ত্রীর কাছে। 

এর মধ্যে গত মঙ্গলবার নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটি ও আমরা বাঙালি অসম-মেঘালয় সীমানায় বিক্ষোভ দেখায়। কাছাড় জেলার মালিডহরে গিয়ে শতাধিক মানুষ মেঘালয় সরকারের কাছে বঙ্গভাষীদের নিরাপত্তা চেয়ে স্লোগান দেয়। কাটিগড়ায় ধরনা দেন যুব কংগ্রেসিরা। বাঙালি সংগঠনের প্রতিনিধিরা মেঘালয়ের রাজ্যপালের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে অভিযোগ করেন, বাঙালিদের বিরুদ্ধে পুলিশ, বিচারব্যবস্থা, প্রশাসন, ছাত্র সংগঠন, জঙ্গি- সবাই একজোট হয়েছে।

এরপরেই গতকাল বুধবার (২১ অক্টোবর) মেঘালয়ের সব বাঙালিদের বাংলাদেশি বলে পোস্টার টানিয়ে দেয় কেএসইউ। কোথাও লেখা হয়, ‘বাংলাদেশিরা মেঘালয়, ত্রিপুরা, অসম ও মিজোরামে অত্যাচার বন্ধ কর।’ সুস্মিতা দেবীকেও মেঘালয়ের ব্যাপারে নাক না-গলাতে সতর্ক করা হয়। 

সুস্মিতা দেবী সেই পোস্টারের ছবিসহ প্রধানমন্ত্রী ও মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমাকে ট্যাগ করে টুইটে লেখেন, বাংলাদেশে হিন্দুদের উপরে অত্যাচার তো দূরের কথা, মেঘালয়েই এমন ব্যানার! স্বদেশে বাঙালিদের উপরে নির্যাতনের আরো প্রমাণ লাগে কী?’ 

রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়, সাম্প্রদায়িক বা ভাষিক বিভেদ কখনোই কাম্য নয়। বিষয়টি জানার পরেই পুলিশ গিয়ে সব ব্যনার সরিয়ে ফেলেছে। 

মেঘালয়ের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লাকমেন রিম্বুই বুধবার বলেন, বাংলা ও আসামে নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে সুস্মিতা দেবী হঠাৎ করে মেঘালয়ের বাঙালিদের ব্যবহার করে খামোকা বিতর্ক সৃষ্টি করতে চাইছেন। এতে কারও ভাল হবে না। 

মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমার বক্তব্য, পরিস্থিতি যাতে খারাপ না-হয় তাই আমরা খাসি ও বাঙালি সংগঠনগুলোর সাথে কথা বলছি। কেন্দ্রের সাথেও কথা বলা হচ্ছে।

 ভারতের রাজনীতিতে ‘বাংলাদেশি’ ইস্যু নতুন নয়। ২০১৯ সালের গোড়ার দিকে কথিত অনুপ্রবেশকারীদের (বাংলাভাষী মুসলিম) ‘উইপোকা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন বিজেপি নেতা ও ভারতের বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি বলেন, অনুপ্রবেশকারীরা বাংলার মাটিতে উইপোকার মতো। বিজেপি সরকার তাদের এক এক করে তুলে বঙ্গোপসাগরে ছুড়ে ফেলবে। -আনন্দবাজার পত্রিকা

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //