ওআইসির বৈঠকে কাশ্মীর প্রস্তাব, ক্ষুব্ধ ভারত

পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজারে অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কোঅপারেশনের (ওআইসি) বৈঠকে জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে যৌথ প্রস্তাব গ্রহণ করেছে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ মুসলিম দেশগুলো। 

তবে ভারত সেই প্রস্তাবের কড়া সমালোচনা করে বলেছে, জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে এ ধরনের প্রস্তাব গ্রহণের কোনো অধিকার অন্য কোনো দেশের নেই। জম্মু-কাশ্মীর ভারতের অখণ্ড অংশ এবং বিষয়টি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়।

নাইজারে গত ২৭ থেকে ২৯ নভেম্বর ৪৭তম ওআইসি সম্মেলনে মিলিত হয়েছিলেন বিশ্বের ৫৭টি মুসলিম দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। করোনাভাইরাস, আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সম্পর্কের পাশাপাশি বৈঠকে আলোচনা হয়েছে জম্মু-কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে। 

২০১৯ সালে কাশ্মীরের ৩৭০ অনুচ্ছেদ তুলে দিয়েছে ভারত সরকার। ফলে কাশ্মীর এতদিন যে বিশেষ অধিকার পেত, তা খারিজ হয়ে গেছে। একইসাথে জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যটিকে ভেঙে দুইটি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা হয়েছে। একটি লাদাখ ও অন্যটি জম্মু-কাশ্মীর।

কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তের পর বিতর্ক কম হয়নি। দেশের ভেতর বিরোধীরা এর প্রতিবাদ করেছেন। দেশের বাইরেও এর প্রভাব পড়েছে। পাকিস্তান গোড়া থেকেই এর প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। আন্তর্জাতিক মঞ্চে এ বিষয়ে একাধিক প্রস্তাব গ্রহণের আবেদন জানিয়েছে ইমরান খানের সরকার। কিন্তু জাতিসংঘ থেকে শুরু করে একাধিক মঞ্চে পাকিস্তানের আবেদন সেভাবে গুরুত্ব পায়নি। ভারত বারবারই বলে এসেছে, কাশ্মীর ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। অন্য কোনো রাষ্ট্রের সে বিষয়ে মন্তব্য করার অধিকার নেই।

এই প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক মঞ্চে সরাসরি কাশ্মীর নিয়ে প্রস্তাব গ্রহণ করল। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, নাইজারের সম্মেলনে কাশ্মীর প্রস্তাব গ্রহণের ক্ষেত্রে পাকিস্তান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

গত বছর ৫ অগাস্টের ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জন্যও ভারতকে আহ্বান জানানো হয়েছে। একইসাথে ভারতশাসিত কাশ্মীরে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে ওআইসির প্রস্তাবে।

কাশ্মীরে ‘ভুয়া এনকাউন্টারে’ আইন বহির্ভূত হত্যা, ‘তল্লাশি ও ঘেরাও’ অভিযান এবং শাস্তির কৌশল হিসাবে কাশ্মীরিদের বাড়ি-ঘর ও ব্যক্তিগত সম্পত্তি গুঁড়িয়ে দেয়া, সাধারণ মানুষের ওপর ‘পেলেট’ বুলেট ছোড়া ও ‘ভারতীয় সৈন্যদের হাতের কাশ্মীরি নারীদের হেনস্থার’ নিন্দা করা হয়েছে। ভারত যেভাবে কাশ্মীরে ‘আন্তর্জাতিক ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন করছে, আন্তর্জাতিক প্রস্তাব অগ্রাহ্য করছে’- তার বিবেচনায় ভারতের সাথে সম্পর্ক ‘পুনর্বিবেচনা’ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে ওআইসির প্রস্তাবে।

ওআইসি আবারো বলেছে, কাশ্মীর একটি অমীমাংসিত ইস্যু এবং ‘নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণে কাশ্মীরিদের অধিকারের বিষয়টি জাতিসংঘের এজেন্ডাতে থাকলেও গত ৭০ বছর ধরে অমীমাংসিত রয়ে গেছে।

এরপরেই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতি জারি করে প্রস্তাবের তীব্র সমালোচনা করে। সেখানে বলা হয়, কাশ্মীর নিয়ে প্রস্তাব গ্রহণের কোনো অধিকার কোনো রাষ্ট্র বা অর্গানাইজেশনের নেই। যেসব রাষ্ট্র ওই প্রস্তাবের অংশীদার, তাদের নিজেদের দেশেই সংখ্যালঘুদের স্বার্থ সুরক্ষিত নয়। সংখ্যালঘুদের উপর সেখানে অত্যাচার করা হয়। নাম না করলেও ভারতের ওই বিবৃতিতে পাকিস্তানের দিকেই অঙ্গুলিনির্দেশ করা হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।

জাতিসংঘে চীনের সমর্থনে কাশ্মীর প্রসঙ্গ উত্থাপনের একাধিক চেষ্টা করেছে পাকিস্তান। কিন্তু তা বিশেষ কার্যকরী হয়নি। পরবর্তীকালে পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়েছে তুরস্ক। ভারতের কাশ্মীর নীতির নিন্দা করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান। অন্যদিকে আরব বিশ্বেও কাশ্মীর নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সম্প্রতি আরবের জি-২০ নোটে ভারতের যে মানচিত্র ব্যবহার করা হয়েছে, সেখানে কাশ্মীরকে বাদ দেয়া হয়েছে। 

বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, সাম্প্রতিক সময়ে ওআইসির বৈঠকে কাশ্মীর প্রসঙ্গে প্রস্তাব গ্রহণ অভূতপূর্ব ঘটনা। -ডয়চে ভেলে ও বিবিসি

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //