মিয়ানমারে ৭০ বিক্ষোভকারীকে হত্যা: জাতিসংঘ

মিয়ানমারে নিযুক্ত জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি থমাস অ্যান্ড্রুস বলেছেন, অভ্যুত্থানের পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশটির সেনাবাহিনী অন্তত ৭০ জন বিক্ষোভকারীকে হত্যা করেছে। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে হত্যা, নিপীড়ন ও নির্যাতনসহ মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের প্রমাণ বেড়ে চলছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার পরিষদের কর্মকর্তাদের অভিযোগ, দেশটিতে ‘যা খুশি তাই করছে’ জান্তা সরকারের বাহিনী। সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়নামারে অব্যাহত হত্যা, দমন-পীড়ন, নির্বিচারে মানুষদের বন্দি করা, কারাগারে নির্যাতন, সাধারণ মানুষদের বাড়িঘরে ও দোকানপাটে লুটপাট চালানো, অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন মানবতা বিরোধী অপরাধে জড়াচ্ছে দেশটির সেনাবাহিনী।

মিয়ানমার সেনাবাহিনী অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেছেন, দেশের ‘চরম নাজুক’ পরিস্থিতিতে ‘চূড়ান্ত সংযমের’ পরিচয় দিচ্ছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী।

বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার পরিষদকে এই তথ্য জানিয়েছেন ওই সংস্থাটির বিশেষ তদন্তকারী কর্মকর্তা টমাস অ্যান্ড্রুস।

বর্তমানে একদল ‘খুনে, অবৈধ দখলাদারী’ মিয়ানমার শাসন করছে উল্লেখ করে অ্যান্ড্রুজ বলেন, যারা নিহত হয়েছেন তাদের অর্ধেকেরও বেশি ২৫ বছর পার করেননি। অভ্যুত্থানের পর থেকে এখন পর্যন্ত সেখানে ২ হাজারেরও বেশি মানুষকে অবৈধভাবে বন্দি করা হয়েছে এবং কারাগারে তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে বলেও জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদকে জানিয়েছেন তিনি।

মানবাধিকার পরিষদকে তিনি বলেন, ‘মিয়ামারের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা প্রতিবাদকারীদের ওপর নিষ্ঠুরভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছে- এমন ভিডিও চিত্র প্রচুর রয়েছে। অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশটির সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা মানুষের বাড়ি বাড়ি হানা দিচ্ছে, বাড়িঘর ও দোকানপাট লুটপাট করছে, প্রতিবাদকারী ও সাধারণ মানুষদের যথেচ্ছভাবে আটক ও গ্রেফতার করছে, মানুষের বাড়িতে আগুন দিচ্ছে- এসবের ভিডিও চিত্রও রয়েছে আমাদের কাছে।’

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর জ্যেষ্ঠ কয়েকজন কর্মকর্তাদের ওপর বহুপাক্ষিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুপারিশ করেছেন টমাস অ্যান্ড্রুস। মিয়ানমারে রাজস্বের একটি বড় উৎস সেখানকার জ্বালানি সম্পদ- খনিজ তেল ও গ্যাস। বৃহস্পতিবার দেশটির সেনা কর্মকর্তাদের পাশাপাশি তেল ও গ্যাস উত্তলনে নিয়োজিত সেখানকার সেনা নিয়ন্ত্রত সংস্থাগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করারও আবেদন জানিয়েছেন তিনি।

অ্যান্ড্রুজ বলেন, ‘যেহেতু দেশটির সেনাসদস্যরা বর্তমানে ব্যাপকভাবে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে, তাই তাদের নিয়ন্ত্রিত তেল-গ্যাস উত্তোলনকারী সংস্থাগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ সম্পূর্ণ যৌক্তিক বলে মনে করি আমি।’

তবে টমাস অ্যান্ড্রুস জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে অভিযোগ জানানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তা অস্বীকার করেছে মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন জান্তা সরকার। দেশটির পরারাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সচিব চান আয়ে ভিডিও বার্তা ও লিখিত বিবৃতিতে বলেন, বর্তমানে মিয়ানমারে যে ‘সহিংস’ প্রতিবাদ চলছে, তার প্রেক্ষিতে সেনাবাহিনী ‘চূড়ান্ত সংযমের’ পরিচয় দিচ্ছে।

সেনবাহিনী বর্তমানে ‘জটিল চ্যালেঞ্জ’ এবং ‘চরম নাজুক’ পরিস্থিতি পার করছে এবং দেশটির বিকাশমান গণতন্ত্রকে বাধা দেয়ার কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করেন চান আয়ে।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের সরকার দেশের সার্বভৌমত্ব, রাজনৈতিক স্বাধিকার, আঞ্চলিক সমন্বয়, জাতীয় ঐক্য ও সামাজিক স্থিতাবস্থা রক্ষায় সর্বোচ্চ মাত্রায় চেষ্টা করছে। জাতিসঙ্ঘ ও আন্তর্জাতিক কমিউনিটির প্রতি সেনাবাহিনীর একান্ত প্রত্যাশা, তারা যেন মিয়ানমারের বর্তামান সরকারকে ভুল না বোঝেন।’

গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লেইংয়ের নেতৃত্বে এক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাসীন সরকারকে হটিয়ে দেশটির ক্ষমতা দখল করে দেশটির সেনাবাহিনী; বন্দি করা হয় মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্র অং সান সু চি ও তার দল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির পার্লামেন্ট সদস্য ও অন্যান্য বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের।

এদিকে এই অভ্যুত্থানের অব্যবহিত পর থেকেই ফুঁসে ওঠেছেন মিয়ানমারের গণতন্তকামী জনগণ। ২ ফেব্রুয়ারি থেকে মিয়ানমারে ব্যাপকমাত্রায় বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেন তারা।

বিক্ষোভ শুরুর প্রথম পর্যায়ে দৃশ্যত সংযমের পরিচয় দিলেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আগ্রাসী হয়ে উঠতে থাকে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। বিক্ষোভ দমনে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের লাঠি, রাবারবুলেট, জলকামানের পরিবর্তে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেয়া হয়।

ইতোমধ্যে দেশটির সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে আরো কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য এই দেশগুলোর নেতারা জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। মিয়ানমারের গণতন্ত্রকামী জনগণও সামরিক শাসন অবসানে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পদক্ষেপ নেয়ার আর্তি জানিয়েছেন। সূত্র: আলজাজিরা

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //