মিয়ানমারে বিক্ষোভের সবচেয়ে রক্তাক্ত দিনে নিহত ৩৯

মিয়ানমারে সেনাঅভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর সবচেয়ে রক্তাক্ত দিন পার করলো দেশটি। গতকাল রবিবার (১৪ মার্চ) দেশটিতে বিক্ষোভে অন্তত ৩৯ জন নিহত হয়েছে।

এদিন দেশটির বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভকারীদের সাথে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। হামলা চালানো হয়েছে শিল্প এলাকা বলে পরিচিত হ্লাইংথায়ায় চীনের বেশ কয়েকটি কারখানায়।

দেশটির সবচেয়ে বড় শহর ইয়াঙ্গুনে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালিয়ে নিরাপত্তা বাহিনী। বিক্ষোভকারীরাও লাঠি ও ছুরি নিয়ে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে। আর ইয়াঙ্গুন শহরেই অন্তত ২২ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। এছাড়া দেশটির অন্যান্য শহরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন বাকি ১৬ জন। আর বিক্ষোভকারীদের সাথে সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন একজন পুলিশ সদস্য।

বিক্ষোভকারীরা সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর কাছ থেকে নিজেদের আলাদা করে রেখেছে। ছবি: বিবিসি

গত ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থান করার পর থেকেই মিয়ানমার দেশটির সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। দেশটির বেসামরিক নেত্রী ও ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) দলের প্রধান অং সান সুচিকে আটক করে রেখেছে সামরিক জান্তা। গত নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে ব্যাপক বিজয় পেয়েছে এনএলডি। তবে সামরিক বাহিনীর দাবি, ওই নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি করা হয়েছে।

পালিয়ে যাওয়া বেশ কয়েকজন এমপি গত মাসের সামরিক অভ্যুত্থান মেনে নেননি। তারা লুকিয়ে নিজেদের মিয়ানমারের বৈধ সরকার বলে দাবি করেছেন। লুকিয়ে থাকা রাজনৈতিকদের নিয়ে গঠিত একটি কমিটির প্রধান মাহন উইন খিয়াং থান প্রথম বার্তায় বিক্ষোভকারীদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহবান জানিয়েছেন, যাকে তিনি ‘বিপ্লব’ বলে বর্ণনা করেছেন।

পর্যবেক্ষক গ্রুপ অ্যাসিট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্সের তথ্য অনুযায়ী, রবিবার মিয়ানমারে মোট ৩৮ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে।

স্বাস্থ্যকর্মীরা জানিয়েছেন, ইয়াঙ্গুনে হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। কারণ আরো অনেকেই গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন।

হ্লাইংথায়ার এলাকায় বিক্ষোভের সময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর  অবস্থান। ছবি: আল জাজিরা

ইয়াঙ্গুনের হ্লাইংথায়ার এলাকায় অনেক কারখানা রয়েছে যেগুলো চীনা বিনিয়োগে তৈরি। চীনা কর্তৃপক্ষের অভিযোগ এখানে চীনা কারখানাগুলো বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে, তাদের নিরাপত্তা প্রয়োজন।

দেশটির সেনানিয়ন্ত্রিত টেলিভিশনের খবরে বলা হয়, শিল্প এলাকা হ্লাইংথায়ায় চারটি গার্মেন্টস কারখানা ও একটি সার কারখানায় আগুন দেয়া হয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি সেদিকে যেতে চাইলে বিক্ষোভকারীরা বাধা দেয়। প্রায় দুই হাজার বিক্ষোভকারী ফায়ার সার্ভিসের পথ বন্ধ করে দেয়।

জান্তা সরকার এরপর এই এলাকায় সামরিক আইন জারি করে।

এদিকে চীনের কয়েকটি কারখানায় হামলার খবর পেয়ে মিয়ানমারকে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে বলেছে বেইজিং। মিয়ানমারের চীন দূতাবাস তাদের ফেসবুক পোস্টে লিখেছে, কারখানাগুলোতে লুটপাট হয়েছে, ক্ষতিসাধন করা হয়েছে, বহু চীনা কর্মী আহত হয়েছে ও তারা আটকে পড়েছে।

ওই এলাকায় দিনভর গুলির শব্দ শোনা যায়। রাস্তায় দেখা গেছে সেনাবাহিনীর ট্রাক। বিক্ষোভকারীর বালির বস্তা, টায়ার ও কাঁটাতার দিয়ে অবরোধ তৈরি করে। কিছু বিক্ষোভকারীকে দেখা যায় অস্থায়ী ঢাল তৈরি করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে আহতদের উদ্ধার করার জন্য।

এএপিপি মনিটরিং গ্রুপের হিসেবে, মিয়ানমারে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হবার পর এখন পর্যন্ত ১২০ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে। -বিবিসি

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //