মরদেহ সৎকারে দিল্লির শ্মশান-কবরস্থানে হিমশিম

ভারতে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর শেষ কয়েক সপ্তাহে বিভিন্ন রাজ্যে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা হু হু করে বেড়েছে। এই মৃত্যু বৃদ্ধির জেরে শ্মশান, কবরস্থানে মরদেহ সৎকারের জন্য পড়ছে দীর্ঘ লাইন। 

মধ্যপ্রদেশের ভোপালের শ্মশানের কী অবস্থা হয়েছে তার ভিডিও গতকাল বুধবার (১৪ এপ্রিল) বারবার ভেসে উঠেছে নেটমাধ্যমে। একই অবস্থা দিল্লিতেও। সেখানেও দৈনিক মৃত্যু বাড়ার ফলে শ্মশান, কবরস্থানে লাইন পড়ছে বিশাল। 

এদিকে ভারতে আজ বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) দেশটিতে ২ লাখ ৭৩৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে; যা এখন পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ শনাক্তের নতুন রেকর্ড। এখন পর্যন্ত দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১ কোটি ৪০ লাখ ৭৪ হাজার ৫৬৪ জন। করোনা সংক্রমণের দিক থেকে ভারত এখন বিশ্বে দ্বিতীয়।

গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে এক হাজার ৩৮ জনের। এ নিয়ে দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মোট এক লাখ ৭৩ হাজার ১২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।

দিল্লির সবচেয়ে বড় শ্মশান নিগম্বোধ ঘাট। সৎকারের জন্য গত ক’দিন ধরে সেখানে দেখা যাচ্ছে দীর্ঘ লাইন। কভিডে মৃত দাদুর দেহ সৎকার করতে নিগম্বোধ ঘাটে এসেছিলেন ২৭ বছরের গৌতম। তার দাদু মারা গেছেন গত মঙ্গলবার রাতে। বুধবার সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ দাদুর দেহ সৎকার করার জন্য নিয়ে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু ৬ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও সৎকারের সুযোগ হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি। 

গৌতম এক সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘সকাল সাড়ে ৮টায় এখানে এসেছি। ছয় ঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছে। এখনো আমাদের সুযোগ আসেনি। পরিস্থিতি খুব খারাপ। কিছুক্ষণ অন্তরই দেখছি অ্যাম্বুল্যান্সে দুই-তিনটা করে মরদেহ আসছে।

একই পরিস্থিতি কবরস্থানেও। কভিড রোগীর দেহ এই পরিমাণে এলে আর কিছুদিন পরই কবর দেয়ার জায়গা শেষ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন দিল্লির এক কবরস্থানের রক্ষণাবেক্ষক। মোহাম্মদ শামিম নামের ওই ব্যক্তি বলেছেন, আগে দিনে এক-দুইটা করে মরদেহ আসত। এখন দিনে ১৭-১৮ টা করে দেহ আসছে। শেষ পাঁচদিনে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে। এখানে আর ৯০ জনকে কবর দেয়ার মতো জায়গা আছে।

একই অবস্থার দিল্লির কবরস্থানগুলোরও। আইটিওর কাছে দিল্লির সবচেয়ে বড় কবরস্থানে বড় জেসিবি ক্রেন ব্যবহার করে কবর খোঁড়ার কাজ চলছে। কিন্তু এরপরও সেখানে জায়গা সংকুলান হচ্ছে না। পরিস্থিতি যেকোনো সময় হাতের বাইরে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

শুধু মরদেহ সৎকার নয়। মর্গেও দেহ রাখার জায়গা হচ্ছে না বিভিন্ন রাজ্যের হাসপাতালে। ছত্তীসগঢ়ের রায়পুরের একটি সরকারি হাসপাতালের ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছিল নেটমাধ্যমে। সেখানে দেখা যায়, কীভাবে প্রকাশ্যে মাটিতে ফেলে রাখা হয়েছে মরদেহ। 

দিল্লির ফোরটিস এসকোর্টস হার্ট ইনস্টিটিউটের কার্ডিও থোরাসিক ভাস্কুলার সার্জারির ডিরেক্টর ড. ঋত্বিক রাজ ভূঁইয়া বলছেন, আক্রান্ত রোগীরা খুব দেরি করে হাসপাতালে আসছেন, তাই মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষ প্রাথমিক পর্যায়ের লক্ষ্মণগুলোকে সাধারণ কাশি বা ফ্লু হিসাবে বিবেচনা করছে। পরে অবস্থা খারাপ হলে উপায় না পেয়ে হাসপাতালে নিয়ে আসছেন। -আনন্দবাজার পত্রিকা ও এনডিটিভি

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //