ক্ষমতাধরদের চাপে দেশ ছাড়লেন আদর পুনাওয়ালা

করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন পেতে ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা ক্রমাগত চাপ দেয়ায় দেশ ছাড়ার দাবি করেছেন সেরাম ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আদর পুনাওয়ালা। ২৩ এপ্রিল ভারতীয় নাগরিকদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারির আগেই আদর পুনাওয়ালা ব্রিটেনে পৌঁছান। তার বরাতে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমস জানিয়েছে, দেশে থাকা অবস্থায় ভারতের সবচেয়ে ক্ষমতাশীল ব্যক্তিরা টিকে পেতে তাকে চাপ দিচ্ছিলেন। ‘ওয়াই’ ক্যাটাগরির নিরাপত্তায় ৪/৫ জন কমান্ডো থাকা সত্ত্বেও এখনই দেশে ফিরতে চান না পুনাওয়ালা।

বিশ্বের বৃহত্তম ভ্যাকসিন উৎপাদক প্রতিষ্ঠান ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট ৬০টি দেশে টিকা সরবরাহের চুক্তিতে রয়েছে। বাংলাদেশও প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন কেনার চুক্তি করেছে, যদিও চুক্তি অনুযায়ী টিকা সরবরাহ করতে পারেনি সেরাম ইনস্টিটিউট।

দ্য টাইমস জানিয়েছে, কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের জন্য ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাসহ অন্যান্য ক্ষমতাধররা প্রতিদিন ফোন করতেন আদর পুনাওয়ালার কাছে। আদর পুনাওয়ালা টাইমসকে বলেন, ‘এসব ফোন কলকে হুমকি বললে কম বলা হয়। ভ্যাকসিন পেতে মানুষের আসা ও মারমুখী আচরণ নজিরবিহীন। কেন অন্যদেরও তাদের আগে ভ্যাকসিন পাওয়া উচিত, তারা এটা বুঝতেই চাইছে না।’

দ্য টাইমসকে আদর পুনাওয়ালা বলেন, ‘ওরা বলছে, আমাদের যদি ভ্যাকসিন না দাও তাহলে ফল ভালো হবে না। এটা যদিও খারাপ ভাষা নয়, তবে বলার ভঙ্গি খারাপ। ওদের কথা না শুনলে তারা কী করতে পারে এটা বুঝাতে চায় তারা। তাদের দাবি না মানলে কোনো কাজই করা যাচ্ছে না।’

পুনাওয়ালা জানিয়েছেন, তিনি ব্রিটেনে কিছু দিন কাটাবেন। তিনি বলেছেন, ‘আমি ওই পরিস্থিতিতে আর ফিরতে চাই না।’

‘দ্য টাইমস’ দাবি করছে, ব্যবসায়িক স্বার্থে ব্রিটেনে অবস্থান করছেন পুনাওয়ালা। তাদের ভাষ্য, আদর পুনাওয়ালার ব্রিটেন সফরের সঙ্গে আংশিকভাবে জড়িয়ে রয়েছে বিদেশে করোনার টিকা উৎপাদনের ইচ্ছা। শিগগিরই তিনি এ নিয়ে ঘোষণা দেবেন।

কোভিশিল্ড টিকার দাম বাড়িয়ে বেশি মুনাফা করার অভিযোগের বিষয়টি সম্পূর্ণ ‘ভুল’ দাবি করে তিনি বলেন, দাম বাড়ানোর পরও এটি বিশ্বের সবচেয়ে সহজলভ্য টিকা হবে।

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকদের উদ্ভাবিত যে টিকা ব্রিটিশ-সুইডিশ কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকা বাজারজাত করছে, সেটাই তৈরি করছে সেরাম। জুলাইয়ের মধ্যে তারা টিকা উৎপাদন মাসে ১০ কোটি ডোজে উন্নীত করতে পারবে বলে গত সপ্তাহেই জানিয়েছিলেন পুনাওয়ালা।

এর আগে উৎপাদন বাড়াতে মে মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত একটি সময়সীমা জানানো হয়েছিল। ছয় মাসের মধ্যেই প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক টিকা উৎপাদন সক্ষমতা ২৫০ কোটি থেকে ৩০০ কোটি পর্যন্ত বাড়ানো যাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি ডোজ করোনাভাইরাসের টিকা কিনতে গত বছরের নভেম্বরে চুক্তি করে বাংলাদেশ। ওই টিকা সরবরাহের দায়িত্বে আছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস।

চুক্তি অনুযায়ী, প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে ছয় মাসে তিন কোটি ডোজ টিকা পাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশের। জানুয়ারিতে ৫০ লাখ ডোজ দেশে এলেও বিপুল চাহিদা আর বিশ্বজুড়ে টিকার সংকটে ফেব্রুয়ারির চালানে বাংলাদেশ ২০ লাখ ডোজ হাতে পায়। এরপর আর টিকা আসেনি। ভারত সরকার টিকা রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় বাংলাদেশকে টিকা দিচ্ছে না সেরাম ইনস্টিটিউট।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //