জামিন পেলেন পশ্চিমবঙ্গের সেই ৪ মন্ত্রী

নারদ মামলায় গ্রেফতার হওয়া পশ্চিমবঙ্গের সাবেক ও বর্তমান ৪ মন্ত্রীকে জামিন দিয়েছে ভারতের কলকাতা নগর দায়রা আদালতের বিশেষ আদালত। আদালত সূত্রের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে হিন্দুস্তান টাইমস। 

খবরে বলা হয়, সোমবার সকালে তাদের গ্রেফতারের পর দুপুরে চারজনকে আদালতে পেশ করেন তদন্তকারীরা। এরপর গ্রেফতারকৃতদের জেল হেফাজতে পাঠানোর আবেদন জানান। তখনই আদালত সিবিআইকে কঠিন প্রশ্নের মুখোমুখি করে। আদালতের প্রশ্ন- তদন্ত শেষ হয়ে গেলে কেন অভিযুক্তদের জেল হেফাজতে পাঠানোর দরকার?

এর সদুত্তর দিতে পারেনি সিবিআই। যার ফলে বিকালে বর্তমান দুই মন্ত্রী ও সাবেক দুই মন্ত্রীর জামিন মঞ্জুর করে আদালত। 

খবরে বলা হয়, প্রাথমিকভাবে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের আইনজীবী জানিয়েছেন, সম্ভবত ৫০ হাজার টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে জামিন পেয়েছেন চারজন। পুরো রায়ের কপি পুরো বিষয়টা বলা যাবে।

এদিকে নারদ মামলায় পশ্চিমবঙ্গের সাবেক ও বর্তমান ৪ মন্ত্রীর গ্রেফতার নিয়ে আদালতের প্রশ্নের মুখে পড়ে সিবিআই। সোমবার সকালে তাদের গ্রেফতারের পর দুপুরে চারজনকে আদালতে পেশ করেন তদন্তকারীরা। এর পর গ্রেফতারকৃতদের জেল হেফাজতে পাঠানোর আবেদন জানান তারা। তখনই আদালত থেকে প্রশ্ন করা হয়, তদন্ত শেষ হয়ে গেলে কেন জেল হেফাজতে পাঠানোর দরকার অভিযুক্তদের। 

এ মামলায় তৎকালীন চার মন্ত্রীর বিরুদ্ধে রবিবার (৯ মে) আইনি ব্যবস্থা নেয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়।

এরপরই নারদা মামলায় সোমবার (১৭ মে) সকালে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হন ফিরহাদ হাকিম, মদন মিত্র, শোভন চ্যাটার্জি ও সুব্রত মুখার্জি। ইতোমধ্যে সিবিআই দপ্তরে পৌঁছে গেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এদিন সকালে ফিরহাদ হাকিমের বাড়িতে পৌঁছায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিশাল দল। বাড়ির বাইরে দেখা যায় কলকাতা পুলিশকেও। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে বাড়ি থেকে বের করে গাড়িতে তুলে কলকাতার সিবিআই দপ্তর নিজাম প্যালেসে নিয়ে যায় সিবিআই কর্তারা। তারপরই একে একে বাকি তিনজনকে গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় গোয়ন্দা সংস্থা।

বর্তমানের রাজ্যের পরিবহন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং গ্রামন্নোনয় মন্ত্রী সুব্রত মুখার্জি। এবারেও তৃণমূলের টিকিটে বিধায়ক মদন মিত্র। অপরদিকে, ২০১৯ সালে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যান কলকাতার সাবেক মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। তবে তাকে এবারের ভোটের লড়ার টিকিট দেয়নি বিজেপি। কিন্তু দল খারাপ রেজাল্ট করায় দলের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন তিনি।

এ বিষয়ে রাজ্যের বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আইন অনুযায়ী রাজ্যের কোনো বিধায়ক এবং মন্ত্রীকে গ্রেফতার করতে হলে অধ্যক্ষের কাছে চিঠি দিয়ে অনুমতি নিতে হয়ে। তা নেয়া হয়নি। শুধু রাজ্যপালের অনুমোদনে গ্রেফতার করা হয়েছে। এটা আইনের সঠিক কাজ নয়। তবে সংবিধান অনুযায়ী রাজ্যের রাজ্যপাল শেষ কথা বলতেই পারেন।

সিবিআই প্রধান সতীন্দ্র সিং এর আগে জানিয়ে ছিলো ১৬৩ ও ১৬৪ অনুচ্ছেদ মেনে সিবিআই, রাজ্যপালের কাছে অনুমতি চেয়েছিলেন, বেশ কয়েক বছর আগের এই ঘুষকাণ্ডের তদন্ত করছে সিবিআই। চারজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতিদমন আইনে। সেই আবেদনে সায় দিয়েছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। এদিন সকালেই নিজাম প্যালেসে এনে অ্যারেস্ট মেমোয় সই করানো হয়। আজই চার্জশিট পেশ করবে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। এরপর বেলা ১টার দিকে তোলা হবে ব্যাঙ্কশাল কোর্টে। যা নিয়ে গোটা রাজ্যে চাঞ্চল্য শুরু হয়েছে।

তবে রাজ্যপাল ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মদন মিত্র ও শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার অনুমোদন দিলেও এই তালিকায় নাম নেই নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীর। তালিকায় কেন শুভেন্দু অধিকারীর নামে নেই, সেই প্রসঙ্গে সিবিআইয়ের ব্যাখ্যা শুভেন্দু অধিকারী নারদাকাণ্ডের সময় সংসদ সদস্য ছিলেন। তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করতে গেলে দিল্লির সংসদ ভবনের অধ্যক্ষের অনুমতি প্রয়োজন। তাই নাম নেই শুভেন্দুর।

২০১৬ সালে মমতার সরকারের ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মদন মিত্র, শোভন চট্টোপাধ্যায়, সৌগত রায়, মুকুল রায় এবং শুভেন্দু অধিকারীকে গোপন ক্যামেরার সামনে ঘুষ নিতে দেখা গিয়েছিল। যা নিয়ে ভারত জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। এরপরই ২০১৭ সালে নারদাকাণ্ডে তদন্তভার যায় সিবিআইয়ের ওপর। তারপর থেকেই মামলা চলছে। এদিন গ্রেফতার পর আরো একবার নারদা ঘুষকাণ্ড নিয়ে রাজ্যজড়ে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //