করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রায় দেড় কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এর মধ্যে ভারতেই ৪৭ লাখ মানুষ মারা গেছে। তবে এই দাবি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকার খারিজ করে দিয়েছে।
কোভিড ১৯’এ আক্রান্ত হয়ে কতজন মারা গেছেন তা নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্টের অপেক্ষায় ছিল গোটা বিশ্ব। সেই রিপোর্ট অবশেষে পাওয়া গেছে। তবে গত বৃহস্পতিবার (৫ মে) রিপোর্ট প্রকাশের পরই তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। কারণ, বিভিন্ন দেশ করোনায় মৃত্যুর যে তথ্য দিয়েছে, তার তুলনায় ওই রিপোর্টে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি।
২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মৃত্যুর হিসাব দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। যে বিজ্ঞানীরা এই কাজের দায়িত্বে ছিলেন তারা শুধু করোনার কারণেই মৃত্যুর সংখ্যা ধরেননি, করোনা হওয়ার পর তার প্রভাবে আক্রান্তদের শরীরে অন্য রোগের কারণে মৃত্যুর সংখ্যাও ধরেছেন। সেজন্যই সরকারি হিসাবের সাথে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে বিপুল ফারাক দেখা যাচ্ছে।
সংস্থার তরফ থেকে জানানো হয়েছে, দেশগুলো যে তথ্য দিয়েছিল, তার সাথে স্ট্যাটিসটিক্যাল মডেলিং যোগ করে এই সংখ্যা পাওয়া গেছে। বাড়তি মৃত্যুর ৮৪ শতাংশ এসেছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে। আর ৬৮ শতাংশ বাড়তি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ১০টি দেশে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বলেছেন, এই তথ্য শুধু যে করোনার প্রভাবে বিশ্বে কী হয়েছে তা দেখিয়ে দিচ্ছে তাই নয়, সেইসাথে বুঝিয়ে দিচ্ছে যে, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য ব্যবস্থাও জোরদার হওয়া দরকার।
ডব্লিউএইচও’র প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ভারতে করোনায় ৪৭ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এই সংখ্যা ভারত সরকারের দেওয়া মৃত্যুর হিসাবের চেয়ে প্রায় ১০ গুণ বেশি। বিশ্বে করোনায় যত মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তার প্রায় এক-তৃতীয়াংশই হয়েছে ভারতে।
কিন্তু ভারত সরকারের তথ্য বলছে, ওই সময় করোনায় মৃত্যু হয়েছে চার লাখ ৮০ হাজার মানুষের। ফলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট ও ভারতের সরকারি অবস্থানের মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যায় বিশাল ফারাক দেখা যাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সরকার যা বলছে, তার থেকে করোনায় মৃত্যু হয়েছে প্রায় ১০ গুণ বেশি।
কেন্দ্রীয় সরকার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই রিপোর্ট খারিজ করে দিয়ে বলেছে, এর সাথে বাস্তব অবস্থার কোনো সম্পর্ক নেই। এই রিপোর্ট সংখ্যাতত্ত্বের দিক থেকে একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং বৈজ্ঞানিক দিক থেকেও তা প্রশ্নের মুখে পড়তে বাধ্য।
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যে মেথডলজি নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই রিপোর্ট তৈরি করেছে, তা ভুল। তারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মেথড বা পদ্ধতির কথা উল্লেখ করে করোনায় মৃত্যুর নানা ধরনের তথ্য দিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে এই বিষয়ে পুরো তথ্য দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই তথ্য উপেক্ষা করা হয়েছে। তারা যে সব সূত্র থেকে তথ্য নিয়েছে, যে পদ্ধতিতে মৃতের সংখ্যা গণনা করেছে এবং তাদের গণনার ফল নিয়ে ভারত প্রশ্ন তুলেছে।
রিপোর্টে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, করোনার সময় ওই রোগের কারণে যে মৃত্যু হয়েছে, তার সাথে প্যানডেমিক না হলে যে মৃত্যু ঘটতো না, সেই হিসাবও জোড়া হয়েছে। আগের কয়েকবছরের তথ্যও এজন্য বিচার করা হয়েছে।
কিন্তু দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি, ভারতে জন্ম ও মৃত্যু নথিভুক্ত করার নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে। ফলে ভারতে সরকারি হিসাব নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে না।
করোনার সময়ই মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে ভারতে ব্যাপক বিতর্ক হয়েছিল। তখন বিভিন্ন রাজ্য সরকারের যুক্তি ছিল, কো-মর্বিটিডি বা করোনা হলেও অন্য গুরুতর রোগের কারণে যে মৃত্যু হয়েছে, তার হিসাব করোনায় মৃতদের মধ্যে ফেলা যাবে না। -ডয়চে ভেলে
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh