আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:৪১ পিএম
আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০১:০৮ পিএম
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:৪১ পিএম
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০১:০৮ পিএম
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) এক ঘোষণায় জানিয়েছেন, ভারত থেকে ইউরপ হয়ে পশ্চিম এশিয়া পর্যন্ত একতি মেগা করিডোর স্থাপনে কাজ শুরু করা হবে। এ করিডরটির মধ্যদিয়ে রেল সংযোগ ও সমুদ্রপথে ইউরেশিয়ান অঞ্চলের মধ্যে একটি বিস্তৃত যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন হতে যাচ্ছে। এছাড়াও এ করিডর অন্তর্ভূক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যিক সুবিধা ছাড়াও গ্রীন হাইড্রোজেনের মত জ্বালানি পণ্য পরিবহন এবং তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক ডিজিটাল সংযোগের ক্ষেত্রেও অভূতপূর্ব সফলতা আসবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের ধারনা চীনের বিকল্প এই করিডর বদলে দেবে বিশ্বকে। জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে শনিবার এমন ঘোষণা দিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি।
চীনের শত দশকের পুরাতন বেল্ট অ্যান্ড রোড তৈরির প্রচেষ্টা এই অঞ্চলে দেশটির সংযোগ প্রকল্পগুলো নিয়ে দীর্ঘ উদ্বেগের জন্ম দিয়েছিল। এমনকি জমি ব্যবহারের অনুমতি দিতে পাকিস্তানের অস্বীকৃতি, ইরান হয়ে ইউরেশীয় স্থলভাগে বিশ্বাসযোগ্য সংযোগ গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও হতাশ ছিল ভারত। এবারে আরব এবং ইউরোপ অবশেষে এমন একটি সংযোগের সহজ সূত্র খুঁজে পেল।
মূলত ভারত ও আরব উপদ্বীপের মধ্যে জাহাজ এবং রেল সংযোগের ধারণাটি উঠে আসে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের চলতি বছরের মে মাসে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভানের সঙ্গে বৈঠকের পর। এরপর থেকেই বিষয়টির দ্রুত অগ্রগতি ঘটেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-সহ জি২০ সম্মেলনের জন্য নয়াদিল্লিতে প্রথমসারির প্রায় সমস্ত নেতাদের উপস্থিতিতে এমন রূপরেখা সম্বলিত প্রকল্পটি অনুসরণের আনুষ্ঠানিক কাঠামো শুরুর এক সুযোগ এনে দেয়।
প্রস্তাবিত প্রকল্পের ফলে সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সৌদি আরবের মধ্য দিয়ে আরব উপদ্বীপজুড়ে একটি রেললাইন নির্মাণ করা হবে। একইসঙ্গে করিডরের উভয়প্রান্তে ভারত ও ইউরোপের সাথে জাহাজ সংযোগের বিষয়টিও জড়িত রয়েছে।
অন্যদিকে অপটিক্যাল ফাইবার লিংকের মাধ্যমে পাইপলাইন এবং ডেটার মাধ্যমে শক্তি পরিবহণের জন্য করিডোরটি আরও উন্নত করা হতে পারে বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদ এবং ইসরায়েলের তেল আবিব এ অঞ্চলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকের উদ্যোগ নিয়েছে। আর তারই ধারাবাহিকতায় এই প্রকল্পে ইসরায়েলের মত অন্যান্য দেশগুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
তবে এ প্রকল্পের ফলে বেশ কয়েকটি নতুন ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তনও ঘটতে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
কয়েক বছর আগেও দিল্লিতে প্রচলিত ধারণা ছিল যে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে একসঙ্গে কাজ করতে পারে কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে তাদের মিল নেই। আর এবারে সেই মিথ ভেঙে ভারত- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে কয়েকটি যৌথ অর্থনৈতিক প্রকল্পের বিকাশের জন্য ১২ইউ২ মঞ্চ স্থাপনের কাজে হাত লাগিয়েছে। ফলে ভারত-আরব-ইউরোপ করিডোরটির সম্ভাবনাও বেশ উজ্জ্বল হতে চলেছে।
দ্বিতীয়ত এটি পশ্চিমের সঙ্গে ভারতের স্থলপথে সংযোগের প্রস্তাব আনার পর পাকিস্তানের ভেটো ভেঙে গেল। ১৯৯০-এর দশক থেকে, দিল্লি পাকিস্তানের সাথে বিভিন্ন আঞ্চলিক সংযোগ প্রকল্প গড়তে চাইলেও ইসলামাবাদ কিন্তু ভারতকে স্থলবেষ্টিত আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ায় প্রবেশাধিকার দিতে তাদের সিদ্ধান্তে অনড় ছিল।
তৃতীয়ত তেহরান ভারতের জন্য আরও উন্মুক্ত পথ দিতে রাজি হলেও পশ্চিমের সঙ্গে এর দ্বন্দ্ব ইরান জুড়ে বাণিজ্যিক করিডরের উপযোগিতার ওপর ইউরেশিয়াতে প্রভাব ফেলে।
চতুর্থত করিডরটি আরব উপদ্বীপের সঙ্গে ভারতের কৌশলগত সম্পর্ককে গভীর করার একটি পথ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর আগে মোদি সরকার, গত কয়েক বছরে সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সৌদি আরবের সঙ্গে দ্রুত রাজনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্ক গড়ে তুলে। এখন ভারত ও আরবের মধ্যে স্থায়ী সংযোগ গড়ে তোলার সুযোগ তাদের কাছে রয়েছে।
পঞ্চমত মেগা কানেক্টিভিটি প্রজেক্তের ফলে মার্কিন কর্তাদের আশ্বস্ততায় আন্তঃ-আঞ্চলিক সংযোগের প্রচারের মাধ্যমে আরব উপদ্বীপে বিদ্যমান রাজনৈতিক উত্তেজনা প্রশমনে সহায়ক বলেও মত প্রকাশ করা যায়।
ষষ্ঠত এটা কোনও গোপন বিষয় নয় যে নতুন করিডরটি চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) বিকল্প হিসেবে আনা হচ্ছে। আর এ প্রকল্প দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশ এরইমধ্যে গ্রহণ করেছে। নতুন করিডর যে গতিতে বাস্তবায়িত হবে, সেই পরিস্থিতিতে বিআরআই-এর সঙ্গে যুক্ত আর্থিক এবং পরিবেশগত সমস্যা, স্থায়িত্বের সমস্যা এড়ানোর পাশপাশি সমস্যা নিরসনেও একটা বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সপ্তমত করিডরটি এই অঞ্চলের পরিকাঠামো উন্নয়নে ইউরোপের গতিশীলতাকেও তুলে ধরবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০২১-২২ সালে বিশ্বব্যাপী পরিকাঠামো গড়ে তোলার লক্ষ্যে ব্যয় বরাদ্দ করেছিল ৩০ কোটি ইউরো।
অবশেষে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন অ্যাঙ্গোলা, গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গো এবং জাম্বিয়াকে সংযুক্ত করায় একটি ট্রান্স-আফ্রিকান করিডর নির্মাণেরও পরিকল্পনা রয়েছে। ভারত আফ্রিকা ও ভারত মহাসাগরের উপকূলের দেশগুলোর সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠতাও বাড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আফ্রিকাতেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের দলে থাকতে চাইবে ভারত।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি করিডর প্রসঙ্গে বলেন, ‘আজ আমরা সবাই একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং ঐতিহাসিক অংশীদারিত্বে পৌঁছেছি। আগামী সময়গুলোতে এটি ভারত, পশ্চিম এশিয়া এবং ইউরোপের মধ্যে অর্থনৈতিক একত্রিকরণের একটি প্রধান মাধ্যম হতে হবে।’ এই উদ্যোগে ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জড়িত।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : ইউরোশিয়া ভারত মধ্যপ্রাচ্য ইউরোপ করিডোর
© 2023 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh