নওয়াজ শরীফ কী আবারও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন

সামরিক বাহিনীর প্রভাববলয়ে থাকা দক্ষিণ এশিয়ার দেশ পাকিস্তানে রাজনৈতিক নাটকীয়তা নতুন নয়। দুর্নীতির দায়ে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান দণ্ডিত হয়ে কারাগারে। আগামী জানুয়ারিতে হবে নির্বাচন। এমন পরিস্থিতিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ দেশে ফেরায় তিনি আবারও প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন বলে গুঞ্জন উঠেছে। 

চার বছরের স্বেচ্ছানির্বাসন কাটিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই থেকে আজ শনিবার (২১ অক্টোবর) পাকিস্তান ফিরেছেন নওয়াজ। তার এমন নাটকীয় ফেরার ব্যাপারে খুব কম লোকই ধারণা করেছিলেন।

নওয়াজ তার দীর্ঘ রাজনৈতিক পরিক্রমায় প্রায় পুরোটা সময় পাকিস্তানের শক্তিশালী সেনাবাহিনীর পথের কাঁটা হয়ে ছিলেন। এর আগে শেষবার তিনি যখন পাকিস্তানে ছিলেন তখন দুর্নীতির দায়ে সাজা খাটছিলেন।  কিন্তু স্বাস্থ্যগত কারণে ২০১৯ সালের নভেম্বরে জেল থেকে বাইরে আসার সুযোগ পান তিনি।

বর্তমান অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, সেনাবাহিনী একদিন যাকে ক্যু এর মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিয়েছিল, তাকেই আবারও স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে- এমনকি তিনি আবারও প্রধানমন্ত্রীও হয়ে যেতে পারেন।

নওয়াজ কী গ্রেপ্তার হবেন

তিনবারের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী জামিন পাবার পর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে মূলত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান এবং গত চার বছর ধরে তিনি সেখানেই ছিলেন।

২০২২ সালে ইমরান খান সংসদের অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হলে নওয়াজ আবারও রাজনীতিতে সরব হতে থাকেন।

নওয়াজের দল পিএমএল-এন পার্টি সেই সময় পাকিস্তানের অর্ন্তবর্তীকালীন দায়িত্ব নেয়, যার প্রধান হলেন নওয়াজ শরীফের ছোট ভাই শাহবাজ শরীফ।

যদিও এখনও আদালতে মামলা চলমান, তবে এই মুহূর্তে তার গ্রেপ্তার হওয়ার ভয় নেই, কারণ তিনি আগামী সপ্তাহের পরবর্তী শুনানির আগ পর্যন্ত জামিনে আছেন।

প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা কতটা

নওয়াজ শরীফের দল পরিষ্কার করে বলেছে যে চলতি বছর যে নির্বানের অনুষ্ঠানের কথা ছিল, যেটি পিছিয়ে আগামী বছরে গিয়েছে, সেখানে তাদের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী তিনিই হবেন।

কিন্তু ৭৩ বছর বয়সী নওয়াজের সামনে বেশকিছু ইস্যু আছে- আর সেটা শুধুমাত্র চলমান অর্থনৈতিক সঙ্কটই নয়। এই সংকটের জন্য তার দলকে বেশি দায়ী করা হয়। আরেকটা বড় ইস্যু হচ্ছে- তার প্রধান প্রতিপক্ষ ইমরান খান জেলে থাকায় নির্বাচন সুষ্ঠ হবেনা বলেও মনে করেন অনেকে।

এছাড়া সেনাবাহিনীর ব্যাপার তো আছেই। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান কীভাবে চলবে তার অনেকটাই তাদের উপর নির্ভরশীল।

দেশের বাইরে থাকার সময় এই সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রায়শই সামরিক শক্তির সমালোচনা করেছেন। বিশেষ করে পাকিস্তানের রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য তিনি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর এক সাবেক প্রধান ও সাবেক এক আর্মি চিফ অফ স্টাফকেই দায়ী করেছেন। এসব অভিযোগ তারা অস্বীকারও করেছেন।

নওয়াজ দাবি করেন, তিনি ‘মিথ্যা মামলার’ শিকার এবং একই সাথে দেশের বিচারকরাও যোগসাজশে কাজ করেন বলে অভিযোগ আনেন। যার জন্য পাকিস্তানের গণতন্ত্র পঙ্গু হয়ে পড়েছে এবং তিনি মনে করেন এসব কারণেই পাকিস্তানের কোনও প্রধানমন্ত্রী তার মেয়াদ শেষ করতে পারেন না।

নওয়াজের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা মনে করে সেনাবাহিনীর সঙ্গে তার একটা বোঝাপড়া হয়েছে যেন তিনি দেশে ফিরতে পারেন। কিন্তু এ-ও বলছেন যে এতে নিশ্চিত নয় নওয়াজ শরিফই নির্বাচনে জয়লাভ করবেন।

পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) জুলফি বুখারী বিবিসিকে বলেন, আমি তো তার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কোন রাস্তা দেখিনা, কারণ তার বিরুদ্ধে মামলা চলছে এবং আদালতের আদেশেই তিনি রাজনীতিতে আজীবনের জন্য অযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন।

নির্বাচন কী সুষ্ঠু হবে

ইমরান খান একদিকে কারাগারে, অন্যদিকে তার গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে হওয়া ব্যাপক বিক্ষোভের পর ধরপাকড়ে তার দল অনেকটাই দুর্বল অবস্থানে। এমন অবস্থায় বেশিরভাগ মানুষেরই ধারণা নির্বাচন সুষ্ঠু হবেনা।

ইমরান খান গ্রেপ্তার হওয়ার আগ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে পিটিআই এগিয়ে ছিল। কিন্তু জুলফি বুখারী বলছেন, এখন আর নির্বাচনের মাঠে সবাইকে সমান সুযোগ দেয়া হচ্ছে না- একই মত অন্যান্য দলেরও।

বুখারী বলেন, আপনি যদি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করেন, তাহলে দেখবেন ইমরান খানের ভোট ব্যাংক কত শক্তিশালী।

নওয়াজ শরিফের দলও অনেকটা একই কথা বলেছিল যখন ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে তিনি কারাগারে যান।

তাই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হচ্ছে শুধু এবার পিটিআইয়ের জায়গায় সুবিধা পাচ্ছে পিএমএল-এন।

সূত্র- বিবিসি

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //