স্বর্ণা চৌধুরী
প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:১২ পিএম
আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:২২ পিএম
প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:১২ পিএম
স্বর্ণা চৌধুরী
আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:২২ পিএম
আবগারি দুর্নীতি মামলায় জামিন পেয়ে কারামুক্তি ঘটেছে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের। কারাগার থেকে ছাড়া পাওয়ার পর ১৫ সেপ্টেম্বর প্রথম জনসভা ছিল আম আদমি পার্টি (আপ) প্রধানের। সেখান থেকেই নিজের পদত্যাগের ঘোষণা দেন তিনি।
বড়সড় সিদ্ধান্ত নিয়ে কেজরিওয়াল জানান, ‘দুদিন পরেই আমি মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সরে দাঁড়াব। আইন আদালতের রায়ে আমি ছাড়া পেয়েছি। এবার মানুষের রায় দেওয়ার সময়। মানুষ আমার পক্ষে রায় দিলে আমি আবার ফিরে আসব।’
কেজরিওয়ালের এই সিদ্ধান্ত নাটকীয় মোড় নিয়েছে দিল্লি রাজনীতিতে। তাকে রাজনীতি থেকে দূরে সরাতে, তথা জনগণের সামনে তার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার মদ বিক্রির লাইসেন্স নিয়ে দুর্নীতির মামলায় কেজরিওয়ালকে ফাঁসিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি লোকসভা নির্বাচনে তিনি দল ও জোটের পক্ষে প্রচারকালে তেমন সুযোগও পাননি। ভোটের সপ্তাহখানেক আগে কেজরিওয়ালকে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেওয়া হয়। এবার তিনি বিতর্কিত মামলাগুলোতে জামিন পেয়ে রাজনীতির মাঠ নতুন করে গরম করে দিয়ে জনগণের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আপনারাই নির্বাচন করবেন কেজরিওয়াল দোষী নাকি নির্দোষ।’ একই সঙ্গে দিল্লিবাসীর উদ্দেশেও কেজরিওয়ালের অনুরোধ, যদি মানুষ তাকে নির্দোষ বলে মনে করেন, যদি মানুষ ভাবেন তিনি দিল্লির জন্য কাজ করেছেন, তবে তাকে যেন পুনরায় ভোট দেওয়া হয়।’
দিল্লির আবগারি দুর্নীতি মামলায় প্রায় ৬ মাস কারাবন্দি ছিলেন কেজরিওয়াল। কারাগারে বসেই আপ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে সরকার চালাচ্ছিলেন তিনি। পদ থেকে ইস্তফা দেননি। কিছুদিন আগে ইডির মামলায় জামিন পেলেও সিবিআইয়ের মামলায় জামিন পান ১৩ সেপ্টেম্বর। শীর্ষ আদালতের নির্দেশে সেদিনই তিহার কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন কেজরিওয়াল।
কেজরিওয়ালের মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার ঘোষণাকে ‘অগ্নিপরীক্ষা’ হিসেবেই ব্যাখ্যা করছেন আম আদমি পার্টির রাজ্যসভার এমপি রাঘব চড্ডা। তিনি বলেন, ‘আজ তিনি (কেজরিওয়াল) অগ্নিপরীক্ষা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দিল্লিবাসী আম আদমি পার্টিকে ভোট দিয়ে প্রমাণ করে দেবে যে তিনি সৎ।’ সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে, মাস পাঁচেক পরেই দিল্লিতে বিধানসভার ভোট হওয়ার কথা। নির্বাচন হতে পারে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে। তবে ওই নির্বাচন যাতে এগিয়ে আনা হয়, সেই দাবিও জানিয়েছেন আপ প্রধান। কেজরিওয়ালের দাবি, নভেম্বরে মহারাষ্ট্রে বিধানসভা ভোটের সঙ্গেই দিল্লিতেও ভোট হোক।
উল্লেখ্য, গত ২১ মার্চ দিল্লিতে আবগারি দুর্নীতি মামলায় কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিল ইডি এবং সিবিআই। এ দুটি সংস্থা বরাবরই ভারতের বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা পরিচালনা করে থাকে। তবে ওই নেতারা বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর সেসব অভিযোগ চাপা পড়ে যায়। আর তাই এসব প্রতিষ্ঠানের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন রয়েছে। এর আগে দিল্লির সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈন, দিল্লির সাবেক উপ-মুখ্যমন্ত্রী মনীশ সিসোদিয়া এবং রাজ্যসভার এমপি সঞ্জয় সিংয়ের মতো আম আদমি পার্টির বিশিষ্ট নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়। মূলত নির্বাচনকে সামনে রেখে আম আদমি পার্টিকে প্রচারণা থেকে দূরে রাখতে এই গ্রেপ্তার অভিযান চালানো হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
তীব্র চাপ থাকার পরও তখন কেজরিওয়াল পদত্যাগ করেননি। এবার বিভিন্নভাবে চাপে রাখা হচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়সহ বিরোধী মুখ্যমন্ত্রীদের। মমতাসহ অন্যদের প্রতি কেজরিওয়াল বলেছেন, গ্রেপ্তার হলেও যেন কেউ পদত্যাগ না করেন। কারাগারে গেলে যেন সেখান থেকেই সরকার চালান। তিনি বলেন, ‘বিধায়ক ভাঙানো, ইডি, সিবিআই দিয়ে ভয় দেখানো, ভুয়া মামলা করে জেলে ভরে দেওয়া, সরকার ফেলে দেওয়াই বিজেপির ফর্মুলা। ভেবেছিল, কেজরিওয়ালকে কারাগারে ভরলে আম আদমি পার্টি ভেঙে যাবে। বিধায়ক ভাঙিয়ে দিল্লিতে সরকার গড়ে ফেলবে বিজেপি। পাঞ্জাবেও বিধায়ক ভাঙিয়ে সরকার গঠন করা সম্ভব হবে। আমাদের দল ভাঙেনি, বিধায়ক-কার্যকর্তাদের ভাঙাতে পারেনি। তাদের এসব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়ার ক্ষমতা আছে আমাদের। ভেবেছিল মনোবল ভেঙে দেবে। কারাগারে এই ১৫০-২০০ দিনে আমার মনোবল ১০০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। তখন ইস্তফা দিইনি। কারণ দেশের গণতন্ত্রকে বাঁচাতে চেয়েছিলাম। এটা বিজেপির নয়া ফর্মুলা। যেখানে যেখানে হেরেছে, সেখানকার মুখ্যমন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ভুয়া মামলা করে, গ্রেপ্তার করে, ইডি-সিবিআই পাঠিয়ে সরকার ফেলা দেওয়ার চেষ্টা।’
তিনি আরও বলেন, ‘হেমন্ত সোরেন, সিদ্দারামাইয়া, পিনারাই বিজয়নের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। মমতার বিরুদ্ধেও একই জিনিস চলছে। বিরোধী শিবিরের একজন মুখ্যমন্ত্রীকেও ছাড়ে না এরা। ভুয়া মামলা করে, কারাগারে ঢোকায়। ১০ দিন আগে সুপ্রিম কোর্টের এক বেঞ্চ কেন্দ্রের কাছে জানতে চান, কারাগার থেকে সরকার চলতে পারবে না কেন? অর্থাৎ কারাগারের ভেতর থেকে সরকার চলতে পারে। তাই দেশের সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের হাতজোড় করে বলব, প্রধানমন্ত্রী যদি কারাগারে ঢোকানোর সাহস দেখান, ইস্তফা দেবেন না। কারাগার থেকে সরকার চালান।’
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh