স্বর্ণা চৌধুরী
প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:০৬ পিএম
আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:১৪ পিএম
প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:০৬ পিএম
স্বর্ণা চৌধুরী
আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:১৪ পিএম
ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার গড়তে পারলে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের উল্টো করে ঝুলিয়ে সোজা করা হবে বলে হুমকি দিয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এটি বিজেপির পুরনো কৌশল। যখনই কোনো রাজ্যে নির্বাচনের সময় সামনে আসে, তখনই কথিত অবৈধ বাংলাদেশিদের কথা সামনে এনে বাংলাদেশবিরোধী বক্তব্য দিয়ে রাজনীতির মাঠ গরম বরাবরই বিজেপি করে আসছে।
প্রসঙ্গত, ভারতের শাসক দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) একটি হিন্দু মিলিশিয়া সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) রাজনৈতিক শাখা। আরএসএস ১৯২৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি এমন এক জাতীয়তাবাদী জঙ্গি সংগঠন, যা ভারতকে একটি ‘হিন্দু দেশ’ হিসেবে ব্যাখ্যা করে। শুধু হিন্দুরাই এই সংগঠনের সদস্য হতে পারেন। আরএসএস ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগের দশকের ফ্যাসিস্ট আধা সামরিক সংগঠনগুলোর মধ্যে অনেক মিল পাওয়া যায়। যেমন ইউনিফর্ম পরা, বিশেষ ভঙ্গিমায় স্যালুট দেওয়া, নারী-বিদ্বেষী পুরুষ আধিপত্যকে স্থান দেওয়া এবং হিন্দুরা আক্রান্ত- এমন স্থায়ী উদ্বেগ ধরে রাখা।
গত এক দশকে ভারতে সংখ্যালঘু ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর ওপর, বিশেষ করে মুসলমানদের প্রতি বিদ্বেষ ও সহিংসতা ছিল বিজেপির রাজনীতির মূল দিক। গরু সম্পর্কিত গণপিটুনি, দাঙ্গা, মুসলমানদের বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দেওয়া, হিন্দু নারীর সঙ্গে মুসলমান পুরুষের প্রেমকে ‘লাভ জিহাদ’ আখ্যা দিয়ে অপরাধ হিসেবে সাব্যস্ত করা ইত্যাদি নরেন্দ্র মোদির প্রধানমন্ত্রিত্বকালীন বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এর সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশবিরোধী বক্তব্য, বিশেষ করে কথিত অবৈধ বাংলাদেশিদের নামে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি মুসলিমদের ওপর আক্রমণ বিজেপির রাজনীতির আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক। আর এ প্রচারণা সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোর নির্বাচনের সময় ভিন্ন মাত্রা অর্জন করে; যখন কেন্দ্রীয় নেতারা মুসলিম-বিদ্বেষী বক্তব্যের সঙ্গে বাংলাদেশবিরোধী অবস্থান নিয়ে নির্বাচনী সমাবেশ গরম করেন।
ঝাড়খন্ড রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে গত ২০ সেপ্টেম্বর রাজ্যটির সাহেবগঞ্জ জেলায় ‘পরিবর্তন যাত্রা’ শীর্ষক নির্বাচনী প্রচারণার উদ্বোধন উপলক্ষে দেওয়া ভাষণে অমিত শাহ বলেন, ‘আমি আপনাদের সবাইকে ঝাড়খন্ডে বিজেপি সরকার গঠনের জন্য আবেদন জানাতে চাই। এবং আমরা প্রত্যেক বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীকে উল্টো করে ঝুলিয়ে সোজা করব।’ কয়েক মাস আগে হওয়া লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি নেতারা অভিযোগ করে বলেছিলেন, সাঁওতাল পরগনায় আদিবাসী জনসংখ্যা কমছে। আর ক্রমেই বাড়ছে ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’র সংখ্যা। এই অভিযোগের পুনরাবৃত্তি করে অমিত শাহ বলেন, ‘এই জমি আদিবাসীদের। কিন্তু এখানে অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যা বাড়ছে। আদিবাসীর সংখ্যা ৪৪ শতাংশ থেকে ২৮ শতাংশে নেমে এসেছে। যেহেতু অনুপ্রবেশকারীরা জেএমএম, কংগ্রেস ও আরজেডির ভোটব্যাংক, তাই এখানকার সরকার জনকল্যাণের পরিবর্তে অনুপ্রবেশকারীদের কল্যাণে নিযুক্ত রয়েছে।’
এই ‘পরিবর্তন যাত্রা’ আগামী ২ অক্টোবর পর্যন্ত রাজ্যের প্রতিটি গ্রামে গিয়ে পরিবর্তনের বার্তা দেবে বলে জানান অমিত শাহ। ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও দাবি করেন, রাজ্যের পাকুড় জেলায় নাকি ‘হিন্দুরা ঝাড়খন্ড ছাড়ো’ স্লোগান দেওয়া হচ্ছে। ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চার (জেএমএম) হেমন্ত সরেনের নেতৃত্বাধীন জোট সরকারকে দেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত রাজ্য সরকার হিসেবে অভিহিত করে অমিত শাহ বলেন, ‘কিসের জন্য পরিবর্তন? ঝাড়খন্ডে মুখ্যমন্ত্রী বদলানো নয়, এমনকি বিজেপিকে ক্ষমতায় আনাও নয়। এই দুর্নীতিবাজ সরকারকে সরিয়ে দুর্নীতি দমন করতে পারে, এমন একটি সরকার আনার জন্য পরিবর্তন করতে হবে।’
বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশের বিষয়টি তদন্তের জন্য ঝাড়খন্ড হাইকোর্ট একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়ায় অমিত শাহ আদালতকে ধন্যবাদ জানান। এই তদন্তের জন্য কেন্দ্র সরকার শিগগির ঝাড়খন্ড সরকারের সহায়তায় একটি কমিটি গঠন করবে বলেও তিনি জানান। ভারতের সর্বশেষ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি জয়ী হলেও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। আর তাই যেসব রাজ্যে বিজেপির সরকার নেই, সেসব রাজ্যে মুসলিম-বিদ্বেষ ও বাংলাদেশবিরোধী বক্তব্যে ভোট বাড়াতে চাইছে বিজেপি। তবে এ ভোট ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, অচিরেই ভারতে পূর্ণাঙ্গ ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটছে না।
তবে ভারতীয় ইতিহাসবিদ, ঔপন্যাসিক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক মুকুল কেশবনের মতে, ধীর গতির হলেও সংখ্যাগুরুবাদী বিজেপি সমর্থকদের নাৎসিবাদের প্রতি আকর্ষণ আছে। কারণ দুটো দলই সংখ্যালঘুদের প্রতি এক ধরনের ঘৃণা সামনে রেখে উগ্র জাতীয় ঐক্য গঠন করেছে। যা ফ্যাসিবাদের মূল ভিত্তি।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh