মহারাষ্ট্রে চাপের মুখে ‘ইন্ডিয়া’ জোট

ভারতের মহারাষ্ট্র বিধানসভার ভোট ২০ নভেম্বর। এই নির্বাচন যতটা না বিভক্ত দুই দল শিবসেনা ও ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টির (এনসিপি) জন্য গুরুত্বপূর্ণ; তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ কংগ্রেসের কাছে। কারণ গত লোকসভা ভোটে দলটি বেশ ভালো প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন নরেন্দ্র মোদির বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোটের বিরুদ্ধে। প্রায় ১৪০ বছর পুরোনো এ দলটি রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে কতটা শক্তিশালী হবে, তার জন্যও এ নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। 

লোকসভায় যে ১৫টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে কংগ্রেস জোট না বেঁধে একা লড়েছিল, সেখান থেকে মাত্র ৪৩টি আসনে জিততে পেরেছেন কংগ্রেসে প্রার্থীরা। ৯৯টি আসনের মধ্যে বাকি ৫৬টি আসন কংগ্রেস জিতেছে বিভিন্ন জোটের শক্তিতে। হরিয়ানায় পরাজয় হয়; জম্মু-কাশ্মীরে দুর্বল ফল করে। এবার তাই মহারাষ্ট্র কংগ্রেসের জন্য অগ্নিপরীক্ষাই বলা যায়। 

মহারাষ্ট্রে কংগ্রেসের নেতৃত্বে মহা বিকাশ আঘাড়ি (এমভিএ) জোট ভোটে জিততে না পারলে আগামী বছরের শুরুতে বিহারের ভোটে বিজেপির এনডিএ জোট প্রথম থেকেই অনেকটা এগিয়ে থাকবে। বিশ্লেষকদের মতে, মহারাষ্ট্রে এবারের ভোটে কোনো আদর্শিক রাজনীতি তুলে ধরতে পারেনি কংগ্রেস-শিবসেনা-শরদ জোট এমভিএ বা বিজেপির নেতৃত্বে ‘মহাযুতি’ বা মহাজোট। দুই পক্ষই প্রধানত সামাজিক অস্থিরতা এবং নানা ধরনের আর্থিক প্রতিশ্রুতি দিয়ে জয় পেতে চাইছে। বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি যেমন এখানে প্রধান হয়ে উঠতে পারেনি; তেমনি কংগ্রেসের ‘সংবিধান বাঁচাও’ নীতিও বেশ পেছনের সারিতে রয়েছে। মাঝেমধ্যে বিজেপি মুসলিম-বিদ্বেষী স্লোগান যেমন দিচ্ছে; তেমনি মাদ্রাসা-স্কুলের শিক্ষকদের বেতন বাড়িয়েছে বিজেপির নেতৃত্বে একনাথ শিন্ডে সরকার। কারণ ভোটে মুসলিমদের একটা বড় অংশগ্রহণ রয়েছে।

এবার বিজেপি জোট ভোটে জিতলে মুখ্যমন্ত্রী হবেন দেবেন্দ্র ফড়নবিশ। ২০১৯ সালে ভোট ঘোষণা হওয়ার আগেই নাসিকের একটি জনসভায় তা ঘোষণা করেছিলেন মোদি। যদিও পাঁচ বছর আগে ২৮৮টির মধ্যে ১২২টি আসন জিতে বিজেপির সেই আশা পূর্ণ হয়নি। তৈরি হয়েছিল কংগ্রেস, এনসিপির সমর্থনে উদ্ধব ঠাকরের মুখ্যমন্ত্রিত্বে এমভিএ সরকার। আড়াই বছরের মাথায় শিবসেনায় আড়াআড়ি ফাটল ধরিয়ে ৩৯ জন বিধায়ককে নিয়ে শিন্ডে বেরিয়ে এসে বিজেপির সমর্থনে নতুন সরকার তৈরি করেন। পরে ভাঙন ধরানো হয় শরদ পাওয়ারের এনসিপিতেও। তবে এত কিছু করেও মোদির ঘোষণা অনুযায়ী, ফড়নবিশ মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেনি। তাকে শিন্ডে সরকারের উপমুখ্যমন্ত্রী হয়েই থাকতে হয়েছে। এবার অবশ্য সাবধানি বিজেপি। তারা আগাম কোনো মুখ্যমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করেনি। তার মানে এই নয় যে, তারা সে দাবি ছেড়ে দিয়েছে বা দেবে।

গত ৩০ বছরে মহারাষ্ট্রে কোনো একক দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না। জোটের বিভিন্ন শরিকদের মুখ্যমন্ত্রিত্বসহ একাধিক বিষয় নিয়ে দর-কষাকষি করার এমন অনেক ঘটনা ঘটতে পারে, যা আগাম আন্দাজ করা কঠিন। শিন্ডের জনপ্রিয়তাও আগের চেয়ে বেড়েছে অনেকটা। তবে এখনো মহারাষ্ট্রে ভোটারদের চোখে উদ্ধব ঠাকরেই প্রথম পছন্দ। এ দৌড়ে অনেক পিছিয়ে আছেন ফড়নবিশ। 

যে পক্ষই সরকারে আসুক, তাকেই এখন বহু সমস্যার মুখে পড়তে হবে। এর মধ্যে প্রধান হলো, প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সামাজিক গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে কোটার দাবি উঠছে। এর আওতায় থাকা জনগোষ্ঠীকে অসন্তুষ্ট না করে কোটা বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে অসন্তোষ বাড়ছে। এই ক্ষোভ বিরোধীদের পক্ষে যেতে পারে। এসব জটিল সমীকরণ সামলাতে হচ্ছে বিজেপির জোট সরকারকে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh