ভারতের শেয়ারবাজারে পতন চলছেই

কিছুতেই থামছে না ভারতের শেয়ারবাজারে পতন। ২৪ ফেব্রুয়ারির আগের ১৩ কার্যদিবসের লেনদেনে বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের (বিএসই) সেনসেক্স নেমেছে মোট ২৯৬০ পয়েন্ট। তবে শেয়ারবাজারে পতন শুরু হয় গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর সূচক সর্বোচ্চ ৮৫,৮৩৬ হওয়ার পর দিন থেকেই। গত পাঁচ মাসে ১০,৫২৫ কমে ৭৫,৩১১ পয়েন্টে নেমে এসেছে সেনসেক্স।  আর ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের (এনএসই) নিফটি সূচক ২৬,২১৬ থেকে ১৩.০৫ শতাংশ কমে নেমে এসেছে ২২,৭৯৬ পয়েন্টে। এই সময়ে বেশির ভাগ বিনিয়োগকারীই লোকসান গুনছেন।

পতন আটকাতে পারেনি ভারতের বাজেটে কেন্দ্র সরকারের বিপুল করছাড় এবং পাঁচ বছরে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ব্যাংকের ঋণে সুদ কমানোতেও। আশা ছিল, দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হয়তো যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে সেখানকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভারতীয় পণ্যে চড়া আমদানি শুল্ক না বসানোর ব্যাপারে রাজি করাতে পারবেন। কিন্তু তা হয়নি। এর বিপরীতে ট্রাম্প কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, ইলন মাস্কের বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলা ভারতে কারখানা গড়তে পারে জেনে।

ভারতের অর্থনীতি যতদিন মজবুত ছিল, ততদিন শক্তিশালী ছিল শেয়ারবাজার। ভোক্তা পর্যায়ে চাহিদা কমে আশায় স্পষ্ট ইঙ্গিত মেলে, অর্থনীতি যে ঝিমিয়ে পড়ছে। তারপরই ভারতে শেয়ার বেচতে শুরু করে বিদেশি বিনিয়োগকারী কোম্পানিগুলো। দেশীয় বিনিয়োগকারী কোম্পানিগুলো পুঁজি বিনিয়োগ করলেও পতন আটকানো যাচ্ছে না।

শেয়ারবাজারে ক্রমাগত পড়ছে টাটা মোটরস, ওয়ার্লপুল ইন্ডিয়া, টাটা কমিউনিকেশন, ভিআইপি ইন্ডাস্ট্রিজ, মাহিন্দ্রা সিআইই অটোমোটিভের শেয়ারের দাম। মার্কিন আদালতে তদন্ত চলবে, এ খবরে কমেছে আদানির শেয়ারের দাম। ইউএস সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন যুক্তরাষ্ট্রের এক জেলা আদালতকে জানিয়েছে, আদানির বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্তের কাজ জারি রয়েছে এবং এ নিয়ে ভারতের আইন মন্ত্রণালয়ের সাহায্য চাওয়া হয়েছে। এ খবর সামনে আসার পর ১৯ ফেব্রুয়ারি বাজার খোলার পর আদানি এন্টারপ্রাইজ ও আদানি গ্রিন এনার্জির শেয়ারের দাম কমেছে সবচেয়ে বেশি। দুই স্টকের দাম ৪.৩ শতাংশের মতো কমে যায়। আদানি পোর্টস, আদানি পাওয়ার, আদানি এনার্জি সলিউশন, আদানি টোটাল গ্যাস ও আদানি উইলমারের শেয়ারদর আড়াই শতাংশের মতো কমে যায়। আম্বুজা সিমেন্ট ও এসিসি সিমেন্টের শেয়ারের দাম কমে ২ শতাংশের মতো। শেয়ারদরের এই পতনের জেরে আদানির বিভিন্ন কোম্পানির বাজার মূলধন কমেছে।

ভারতীয় ইকুইটি বাজার একসময় বিশ্বের সেরা পারফর্মিং বাজারগুলোর মধ্যে ছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে ২০২৫ সালের শুরুর দিকে সবচেয়ে দুর্বল পারফরম্যান্স করেছে। দেশের শীর্ষ ৫০ কোম্পানির পারফরম্যান্স পর্যবেক্ষণকারী নিফটি-৫০ পপসূচক এ বছর এখন পর্যন্ত মার্কিন ডলার হিসেবে ৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। দরপতনের দিক থেকে উদীয়মান বাজারগুলোর মধ্যে ভারতের অবস্থান তৃতীয়; শুধু থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইনের বাজারে এর চেয়ে বেশি পতন হয়েছে। থাই শেয়ারবাজার ১০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে, ফিলিপাইনের পিএসইআই সূচক ৬.৭ শতাংশ কমেছে এবং ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা কম্পোজিট সূচক ৫.৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।

ব্যাংক অব আমেরিকার সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা অনুযায়ী, ভারতীয় বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কমছে। বোফা সিকিউরিটিজের রিপোর্ট অনুসারে, ১২ মাসের দৃষ্টিকোণ থেকে ১৯ শতাংশ ফান্ড ম্যানেজার ভারতীয় ইকুইটিতে বিনিয়োগ কমিয়েছেন, যা জানুয়ারি মাসে ছিল ১০ শতাংশ। এশিয়ার অন্যান্য বাজারগুলোর তুলনায় হংকংয়ের হ্যাং সেন সূচক ও দক্ষিণ কোরিয়ার কসপি সূচক এই বছর সবচেয়ে ভালো। হ্যাং সেন সূচক ১৬.৪ শতাংশ এবং কসপি সূচক ১৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

এদিকে বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগকারীরা (এফপিআই) গত বছরের অক্টোবর থেকে ভারতীয় শেয়ার বিক্রি করে আসছেন। ২১ ফেব্রুয়ারি আরো ৪০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের শেয়ার বিক্রি হয়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরের শেষ দিক থেকে এখন পর্যন্ত এফপিআইরা মোট ২৪ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ভারতীয় শেয়ার বিক্রি করেছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, উচ্চ মূল্যায়ন এবং ধীর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির আশঙ্কা থেকেই বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ভারতীয় বাজার ছাড়ছেন। এ ছাড়া মার্কিন ট্রেজারি ইল্ড ৪.৪ শতাংশের কাছাকাছি থাকার ফলে এবং গত ছয় মাসে ভারতীয় রুপি ৩.২ শতাংশ অবমূল্যায়িত হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ আরো বেড়েছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh