বাঘে-মহিষে লড়াই

নষ্ট হচ্ছে ক্রীড়াঙ্গনের ভাবমূর্তি

দেশের খেলাধুলার জগতে সবচেয়ে জনপ্রিয় দুই নাম ফুটবল আর ক্রিকেট। স্বাধীনতার পর থেকে ফুটবল দীর্ঘ সময় জনপ্রিয়তার ভিত্তিতে ছিল অপ্রতিদ্বন্দ্বী। কিন্তু আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ক্রমাগত ব্যর্থতায় দেশের ফুটবল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে মানুষ। অন্যদিকে নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে ক্রিকেটের উত্থান। আইসিসি বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ, টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়া-সব মিলিয়ে ক্রিকেট ছাড়িয়ে যায় ফুটবলের জনপ্রিয়তাকে।

একটা সময় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ছিল দেশের ধনী ক্রীড়া সংগঠন। কিন্তু সেই বাফুফে এখন অর্থের অভাবে বাংলাদেশের জাতীয় নারী ফুটবল দলকে পাঠাতে পারে না অলিম্পিক বাছাইয়ে খেলতে! ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে সাফ শিরোপাজয়ী মেয়েরা মিয়ানমারের বাছাই পর্বে খেলতে না পেরে দারুণ হতাশ। 

দলের এক সদস্য জানিয়েছেন, ‘এটা একটা আফসোসের বিষয়, এমন একটা টুর্নামেন্টে খেলার জন্য আমরা এত বছর ধরে পরিশ্রম করছি।’ বাফুফে সভাপতি কাজী মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন নিজেদের পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে বলেছেন, ‘মেয়েরা সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর অনেকেই আর্থিক পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছিল। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা ছিল। কিন্তু সেটার কোনো খবর নেই!’

বাফুফে সভাপতির কথায় মনে হয়েছে, বাংলাদেশের ফুটবল চলছে অনুদানে। তিনি বিসিবির পুরস্কারের অর্থ প্রদান না করার বিষয়টি শুধু সামনে আনেননি, তিনি কটাক্ষ করেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনকেও। পাপনের খেলোয়াড় হিসেবে ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকা এবং বিভিন্ন প্রসঙ্গে মিডিয়ার সামনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনালাপের প্রসঙ্গ তুলে আনার সমালোচনা করেন সালাহউদ্দিন। 

যা ভালোভাবে নেননি পাপন। তিনিও পাল্টা আক্রমণ করেন বাফুফে সভাপতিকে । বলেছেন, ‘বাফুফে মাত্র ২০ লাখ টাকার (বাকি ফান্ড বাফুফের ছিল) জন্য নারী ফুটবল দলকে অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠাতে পারেনি। বাফুফের পরিচালকদের টাকার অভাব নেই। তাদের অনেকের জন্য ২০ লাখ টাকা একা দিয়ে দেওয়াও কোনো ব্যাপার না। এমনকি বাফুফে সভাপতি সাহায্য চাইলে আমাদের ক্রিকেটাররাই এই টাকা দিয়ে দিত।’

এটা সত্যি, নারী দলকে টাকার অভাবে মিয়ানমার না পাঠানোয় সৃষ্টি হয়েছে একটি বাজে উদাহরণ। বাংলাদেশকে এখন সবাই উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে জানে । সেখানে টাকার অভাবে নারী দলকে বিদেশে পাঠাতে না পারার মতো লজ্জার বিষয় আর নেই। এছাড়া দেশের দুই প্রধান খেলার নিয়ন্ত্রণকারী বোর্ডের মধ্যকার দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে বেরিয়ে আসাও কম লজ্জার না।

বাংলাদেশের ফুটবলের মান ক্রমশ তলানিতে। ২০০৮ সাল থেকে বাফুফে সভাপতির পদে আসীন সালাহউদ্দিন। একটা সময় তো স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, বাংলাদেশ খেলবে ২০২২ সালের বিশ্বকাপে। যা এখন শুধু হাস্যরস আর দীর্ঘশ্বাসের বিষয়। পুরুষ ফুটবল দল পেছাতে পেছাতে ফিফা র‍্যাংকিংয়ের ১৯২তম স্থানে। সেখানে জাতীয় দলসহ বয়সভত্তিক সাফে শিরোপা জিতে মুখরক্ষা করছে মেয়েরা। 

অথচ সেই মেয়েরা সুযোগ পাচ্ছে না মাঠে খেলার, বিদেশে টুর্নামেন্টে যাওয়ার। নারী ফুটবলাররা বেতন বৃদ্ধি, বুট এবং অন্যান্য সরঞ্জামের মান বাড়ানো, বোনাস ও ম্যাচ ফি এবং ক্যাম্পের খাবারের মান বাড়ানোর জন্য অনুশীলন বন্ধ রাখার মতো আন্দোলনে যাচ্ছেন। এসব ব্যর্থতা ঘাড়ে নিয়েই চলছে দেশের ফুটবল। সঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে ক্রিকেটের সঙ্গে দ্বন্দ্ব।

আন্তর্জাতিক সাফল্যের কারণে ক্রিকেট এখন রমরমা। বিসিবি সভাপতিও সমালোচিত হন, কিন্তু তিনি সফল তার কাজে। অন্যদিকে সালাহউদ্দিন বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফুটবলার হিসেবে সম্মানিত। সংগঠক হিসেবে পারেননি নিজেদের মেধার পরিচয় দিতে। ফুটবল উন্নয়নে বাফুফের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা কখনোই আশ্বস্ত করতে পারেনি ক্রীড়ামোদীদের।

বাফুফের আর্থিক লেনদেন নিয়ে আছে নানা অভিযোগ। খোদ ফিফা থেকে বিভিন্ন সময় অভিযোগ করা হয়েছে। এখন আবার নতুন করে ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে বাফুফে নিজেদের দেউলিয়াপনা প্রকাশ করেছে বলেই অনেকে মনে করেন। এতে উন্নয়নের বদলে ফুটবলের ভাবমূর্তিতে কালিই পড়ছে শুধু।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //