চার্লস পিয়ের দ্য কুবেরত্যাঁ। আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির প্রতিষ্ঠাতা। আধুনিক অলিম্পিক গেমসের জনক। ১৮৯৬ সালে তার উদ্যোগেই প্রাচীন গ্রিসের ক্রীড়া উৎসব ‘অলিম্পিক’ ফিরে আসে সর্বজনীন রূপ নিয়ে। কালের বিবর্তনে যা এখন ‘গ্রেটেস্ট শো অন দ্য আর্থ’ নামে বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত।
কুবেরত্যাঁর অলিম্পিক আয়োজনের মুলমন্ত্র ছিল, ‘জয়লাভ নয়। অংশগ্রহণই বড় কথা।’ বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদরা কুবেরত্যাঁর বাণীতে বড় বেশি অনুপ্রাণিত। ১৯৮৪ সাল থেকে অলিম্পিকে বাংলাদেশের নিয়মিত অংশগ্রহণ। প্রথম বাংলাদেশি অলিম্পিয়ান হিসেবে লস অ্যাঞ্জেলেসের ক্রীড়াযজ্ঞে অংশ নেন সাইদুর রহমান ডন। ১০০ আর ২০০ মিটার স্প্রিন্টের হিটে বাদ পড়ে শেষ হয় তার অলিম্পিক।
লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকের পর পেরিয়ে গেছে চার দশক। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ক্রীড়াযজ্ঞে অংশ নিয়েছেন ৪৯ জন ক্রীড়াবিদ। কিন্তু কোনো পদক দূরে থাক, যে কোনো ইভেন্টের হিটে বাদ পড়াই যেন বাংলাদেশের ভবিতব্য। শুধু তাই না, অলিম্পিকে বাংলাদেশের সিংহভাগ অংশগ্রহণ ‘ওয়াইল্ড কার্ড’ নামে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির বদান্যতায় পাওয়া বিশেষ কোটায়! ব্যতিক্রম হিসেবে আর্চার রোমান সানা আর গলফার সিদ্দিকুর রহমানের রয়েছে স্বীয় যোগ্যতায় অলিম্পিকে অংশ নেওয়ার কৃতিত্ব।
২০২৪ সালের ২৬ জুলাই থেকে প্যারিসে বসছে ৩৩তম গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক আসর। বাংলাদেশ থেকে পাঁচ ক্রীড়াবিদ অংশ নেবে আসন্ন অলিম্পিকে। আর্চার সাগর ইসলাম সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। বাকিরাÑমানে সাঁতারু সামিউল ইসলাম রাফি ও সোনিয়া খাতুন, স্প্রিন্টার ইমরানুর রহমান ও শুটার রবিউল ইসলাম যাচ্ছেন ‘ওয়াইল্ড কার্ড’ সুবিধায়।
বাংলাদেশের লক্ষ্য কী
বাংলাদেশের আর্চারি কোচ মার্টিন ফ্রেডেরিক। তার অধীনে টঙ্গীর শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামে সারা বছর চলে আর্চারদের আবাসিক ক্যাম্প। তার কোচিংয়ে সাগর সরাসরি অলিম্পিকে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে, এটা গর্বের বিষয়। কিন্তু পদক জয় নিয়ে নিজেই আশাবাদী নন জার্মান কোচ। জানালেন, ‘অলিম্পিক অনেক বড় মঞ্চ। বাংলাদেশের আপাতত কোনো পদক জয়ের সম্ভাবনা নেই, এটা মেনে নিতে হবে।’
ফ্রেডেরিক ছয় বছর ধরে বাংলাদেশের আর্চার-গুরু। ২০২১ সালে হওয়া টোকিও অলিম্পিকে গিয়েছিলেন রোমান সানা, দিয়া সিদ্দিকীদের নিয়ে। এবার সাগরের পালা। ফ্রেডেরিক টানা পঞ্চম অলিম্পিকে যাচ্ছেন কোচ হিসেবে। সর্বশেষ এসএ গেমসে বাংলাদেশ ১০টি পদক জিতেছিল আর্চারি থেকে। কিন্তু অলিম্পিক যে বড্ড কঠিন পাল্লা। ফ্রেডেরিকের ভাষায়, ‘বাংলাদেশ আর্চারিতে অনেক উন্নতি করেছে। কিন্তু অলিম্পিক বা এশিয়ান লেভেলে পদক জয়ের অবস্থানে নেই। এই দেশে প্রতিভাবান আর্চার রয়েছে। কিন্তু তাদের বিশ্বতারকা হিসেবে গড়ে তুলতে প্রয়োজন প্রচুর বিনিয়োগ।’ তিনি মনে করেন, আর্চারদের প্রস্তুতি আর সুযোগ-সুবিধাও বিশ্বমানের তুলনায় অপ্রতুল।
সাগর তুরস্কের আনতালিয়ায় অলিম্পিক কোটা প্লেস টুর্নামেন্টে রৌপ্য জেতেন। কিন্তু বাদ পড়েন বিশ্বকাপ আর্চারি স্টেজ-৩ টুর্নামেন্টে এলিমিনেশন রাউন্ডের প্রথম ধাপে। অলিম্পিকে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তিনি। প্যারিস অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাগরই বহন করছেন বাংলাদেশের পতাকা।
দ্রুততম মানব ইমরানুর রহমানও জানিয়েছেন, ‘হঠাৎ অলিম্পিকে গিয়ে বিরাট কিছু করে দেখানো সম্ভব নয়।’ ইমরানুর অলিম্পিকে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে অংশ নেবেন। ১০০ মিটারে ইমরানুরের সেরা টাইমিং ১০.০১ সেকেন্ড। কিন্তু বর্তমানে তা নেমে এসেছে ১০.৪৯ সেকেন্ড। তা সত্ত্বেও জাতীয় অ্যাথলেটিকসে ‘দ্রুততম মানব’ তিনি। এশিয়ান ইনডোর অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপে স্বর্ণ জিতেছেন ৬০ মিটার স্প্রিন্টে। পরবর্তী সময়ে নেই বড় কোনো সাফল্য। ইমরানুর লড়বেন ১০০ মিটার স্প্রিন্টে।
বিশ্বকাপ শুটিংয়ে ভালো খেলায় শুটার রবিউল ইসলাম ও বিশ্ব সাঁতারের টাইমিংয়ে উন্নতি করায় ‘ওয়াইল্ড কার্ড’ পেয়েছেন দুই সাঁতারু সামিউল ইসলাম রাফি ও সোনিয়া খাতুন। তাদের থেকেও পদকের কোনো আশা নেই।
স্বাধীনতার ৫০ বছরের পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশ অলিম্পিকের জন্য পদকজয়ী একজন ক্রীড়াবিদ তৈরি করতে পারেনি। ২০২৪ সালেও প্যারিস অলিম্পিক বাংলাদেশের জন্য হতে চলেছে শুধুই অভিজ্ঞতা অর্জনের মঞ্চ।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh