বাংলাদেশের ব্যর্থতাকে কাঠগড়ায় তুললেন ইমরানুর

প্যারিস অলিম্পিকে বাংলাদেশ ‘পদক’ জিতবে, এমনটা কেউ আশা করেনি। ১৯৮৪ সালের লস অ্যাঞ্জেলস অলিম্পিকে বাংলাদেশ প্রথম অংশ নেয়। ২০২৪ সালে প্যারিসে পূর্ণ হয়েছে বাংলাদেশের অলিম্পিক অংশগ্রহণের চার দশক। কিন্তু দৃশ্যপট বদলায়নি। অলিম্পিকে পদক জয় তো দূর কি বাত, বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রীড়াযজ্ঞে বাংলাদেশকে অংশ নিতে তাকিয়ে থাকতে হয় ‘ওয়াইল্ড কার্ড’ কিংবা কোটার দিকে।

৩৩তম গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে বাংলাদেশ থেকে অংশ নিয়েছিল পাঁচ ক্রীড়াবিদ। একমাত্র আর্চার সাগর ইসলাম প্যারিসে পা রেখেছিলেন যোগ্যতার মাপকাঠিতে। কিন্তু প্যারিসে তিনি পাত্তাই পাননি মারিও নেসপোলির কাছে। প্রথম রাউন্ডের লড়াইয়ে ৬-০ পয়েন্টে হেরেছেন সাগর। পুরুষদের ব্যক্তিগত রিকার্ভ ইভেন্টের র‌্যাংকিং রাউন্ডে ৬৪ প্রতিযোগীর মধ্যে ৪৫তম হয়ে প্রথম রাউন্ডে এসেছিলেন সাগর।

সাগর ছাড়া ওয়ার্ল্ড অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের দেওয়া ‘কোটা’ বদান্যতায় প্যারিস যাওয়া বাংলাদেশের চার অলিম্পিয়ানের ফলাফলও হতাশার। ছেলেদের সাঁতারে ১০০ মিটার ফ্রিস্টাইলের হিট থেকে বিদায় নেন সামিউল ইসলাম রাফি। ৭৯ প্রতিযোগীর মধ্যে ৬৯তম স্থান পেয়েও সন্তুষ্ট তিনি! হিটে ৫৩.১০ সেকেন্ড সময় নিয়ে আট জনের মধ্যে পঞ্চম হয়েছেন রাফি। আর যা-ই হোক, হিটেও তো সবার পেছনে থাকতে হয়নি। এমনকি তার আগের সেরা টাইমিং ৫৩.১২ সেকেন্ডকে ছাপিয়ে গেছেন প্যারিসে। মেয়েদের ৫০ মিটার ফ্রিস্টাইলে সোনিয়া খাতুন হিট থেকে বিদায় নিয়েছেন ৩০.৫২ সেকেন্ড সময় নিয়ে। আর শুটার রবিউল ইসলাম ১০ মিটার এয়ার রাইফেলের বাছাইপর্ব থেকে বিদায় নেন ৪৯ জনের মধ্যে ৪৩তম হয়ে।  

প্যারিস অলিম্পিকে বাংলাদেশের জন্য ‘আশার বেলুন’ ফুলিয়েছিলেন ইমরানুর রহমান। লন্ডন প্রবাসী অ্যাথলেট অংশ নেন ১০০ মিটার স্প্রিন্টে। ইমরানুর বাংলাদেশের ‘দ্রুততম মানব’। ২০২৩ সালে যুক্তরাজ্যে বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স অনুমোদিত এক প্রতিযোগিতায় ১০০ মিটারে ১০.১১ সেকেন্ড দৌড়ে গড়েন নয়া জাতীয় রেকর্ড। একই বছর ফেব্রুয়ারিতে এশিয়ান ইনডোর অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতার ৬০ মিটার স্প্রিন্টে স্বর্ণ জিতে হৈচৈ ফেলে দেন। যদিও ১০০ মিটার দৌড়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তার কোনো সাফল্য নেই। প্যারিসেও বাদ পড়লেন প্রিলিমিনারি রাউন্ড থেকে। হিটে তিনি আটজনের মধ্যে ষষ্ঠ হয়েছেন। সময় নিয়েছেন ১০.৭৩ সেকেন্ড। যা তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে টাইমিং। 

অ্যাথলেটিক্স ভেন্যু স্তাদে ডি ফ্রান্সের ট্র্যাকে নামার পূর্বে ইমরানুর বলেছিলেন, ‘আমার প্রথম লক্ষ্য রাউন্ড বাই রাউন্ড। প্রথমে প্রিমিলিনারি বাধা পেরুতে চাই। আমার প্রস্তুতি ভালো হয়েছে।’ ইমরানুর যুক্তরাজ্য থেকে প্যারিস গিয়েছিলেন কোচ এবং ফিজিওকে সঙ্গী করে। ফ্রান্সের রাজধানীতে প্রায় এক সপ্তাহ নিজেকে ঝালিয়েছেন। কিন্তু মূল প্রতিযোগিতার হিটে ব্যর্থ হয়েই সুর পাল্টেছেন। জানান, ‘অলিম্পিকে তিনি এসেছেন প্রায় কোনো প্রস্তুতি ছাড়া। গত মার্চে তলপেটের পেশি ছিঁড়ে যাওয়ার পর থেকে কোনো প্রতিযোগিতায় অংশ নেননি। প্যারিসে এসেছেন মাত্র ১৫ দিনের প্রস্তুতি নিয়ে!’ 

বাংলাদেশ অলিম্পিক ফেডারেশনকে নিজের অপর্যাপ্ত প্রস্তুতি আর শারীরিক অবস্থা জানিয়েছিলেন ইমরানুর। এমনকি তার বদলে অন্য কাউকে পাঠানোর কথাও বলেছিলেন! কিন্তু ফেডারেশন কর্তারা শোনেননি। উল্টো কর্তাদের শিখিয়ে দেওয়া বক্তব্য দিয়েছিলেন শুরুতে। অভিযোগটা গুরুতর। ফেডারেশন একজন ‘আনফিট’ প্রতিযোগীকে কেন পাঠানো হলো অলিম্পিকের মতো বিশ্ব প্রতিযোগিতায়? প্যারিসে বাংলাদেশ দলের ‘সেভ দ্য মিশন’ ইন্তেখাবুল হামিদ এবং অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রকিব পুরো বিষয় অস্বীকার করেছেন। তারা দোষ চাপিয়েছেন ইমরানুরের ঘাড়ে। অর্থাৎ ইমরানুর সমস্যা লুকিয়ে সবার অজান্তে অলিম্পিকে অংশ নিয়েছেন, দাবি তাদের। এমনকি কর্তারা প্রথমে দাবি করেন, ইমরানুর প্রিমিলিনারি রাউন্ড পেরিয়ে পরবর্তী ধাপে উঠেছেন! তারা শুরুতে জানতেন না, ৪৫ জনের মধ্যে ২৫তম হওয়া ইমরানুর হিটে বাদ পড়েছেন! কী ন্যূনতম জ্ঞানহীন কর্তাদের কাছে রয়েছে বাংলাদেশের খেলাধুলার রাশ! 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //