জিমন্যাস্টিকসের নেই নিজস্ব ট্রেনিং সেন্টার

১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ জিমন্যাস্টিক ফেডারেশন। ১৯৭৪ সাল থেকে মাঠে গড়ায় জাতীয় প্রতিযোগিতা। ইতোমধ্যে দেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে সেন্ট্রাল সাউথ এশিয়ান আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিকস চ্যাম্পিয়নশিপের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা। এ ছাড়া ২০২১ সালে স্বাগতিক বাংলাদেশসহ নেপাল, শ্রীলংকা, ভারত, উজবেকিস্তান ও পাকিস্তানকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট। অথচ বাংলাদেশের জিমন্যাস্টদের জন্য নেই কোনো নিজস্ব ট্রেনিং সেন্টার!

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের জিমনেশিয়ামে অনুশীলন চলে। যেখানে তায়াকান্দো, কারাতেসহ অন্য ডিসিপ্লিনের সঙ্গে ফ্লোর ভাগাভাগি করতে হয়। জিমন্যাস্টিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান জামিল জানালেন, ‘আমরা জিমন্যাস্টিকসে খুব বেশি এগোতে পারিনি। অথচ আমাদের দেশে প্রতিভার অভাব নেই। বর্তমানে আমাদের ক্যাম্পে প্রায় ১৫০ জিমন্যাস্ট রয়েছে। বছর খানেক হয়েছে আমরা সেফটি-পিট পেয়েছি। আমাদের ১০টা অ্যাপারেটাস দরকার, ছয়টা আছে। বাকিগুলো বসাবার জায়গা নেই। আমাদের নানা প্রতিকূলতার মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে।’

সাবেক জিমন্যাস্ট হাবিবুর রহমান জানালেন, ‘জিমন্যাস্টিক ব্যয়বহুল খেলা। একেকটা ম্যাটের দাম ৫০-৬০ লাখ টাকা। জিমন্যাস্টিক প্রচণ্ড ঝুঁকিরও খেলা। বার থেকে লাফিয়ে একজন প্রতিযোগীকে অনেকটা সময় শূন্যে অবস্থান করতে হয়। সেই সময় তাদের রোটেশন আর টুইস্ট রপ্ত করতে হয়। মানসিক মনোযোগ আর সাহস থাকার পরও এই রোটেশনকালীন শুধু ল্যান্ডিং সেন্স গ্রো করতেই লম্বা সময় লাগে। বর্তমানে সেফটি পিট আসায় খেলোয়াড়দের উপকার হয়েছে। তারা অনেকটা ঝুঁকিমুক্ত অনুশীলন করতে পারছেন।’ 

বাংলাদেশের জিমন্যাস্টিকসে সাইক সিজার উজ্জ্বলতম নাম। তার জন্ম আর বেড়ে ওঠা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। তিনি ২০১২ সালে লন্ডন অলিম্পিকে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। ২০১১ সালে সাউথ সেন্ট্রাল এশিয়ায় বাংলাদেশের হয়ে স্বর্ণ জিতেছিলেন। ২০২৪ সালের প্যারিস অলিম্পিকে সাইক যুক্তরাষ্ট্রের পুরুষ জিমন্যাস্টিক দলের সহকারী কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন। সাইকের শিষ্যরা দলগত ইভেন্টে ব্রোঞ্জ পদক জিতেছে। এ ছাড়া রাজীব চাকমা ২০২১ সালে সেন্ট্রাল সাউথ এশিয়ান আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিকস চ্যাম্পিয়নশিপে একাধিক পদক জিতেছেন।

হাবিবুর জানালেন, ‘সাইকের কথাই বলি। সে ছোটবেলা থেকে আমেরিকায় উন্নত ট্রেনিং পেয়েছে। কিংবা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রাশিয়ান মার্গারিটা মামুন ২০১৬ রিও অলিম্পিক গেমসের রিদমিক অলঅ্যারাউন্ড ইভেন্টে স্বর্ণপদক জিতেছিলেন। তার বাবা বাংলাদেশি। নিজেকে বাংলাদেশি হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করেন মার্গারিটা নিজেও। আমি বলতে চাচ্ছি, বাংলাদেশিদের পক্ষেও বিশ্বমানের জিমন্যাস্ট হওয়া সম্ভব। বর্তমানে চারজন দেশীয় কোচের অধীনে অনুশীলন করছে আমাদের খেলোয়াড়রা। তবে আমাদের প্রয়োজন বিশ্বমানের একাধিক কোচ। কিন্তু জিমন্যাস্টিকসে তো ফুটবল ক্রিকেটের মতো বাজেট নেই, স্পন্সর নেই। চলতি বছরেই অর্থাভাবে কোরিয়ান কোচকে বিদায় দিতে হয়েছে। বিকেএসপিতে দুই রোমানিয়ান কোচকেও ধরে রাখা যায়নি।’ 

২০২৪ সালের মে মাসে বাংলাদেশের জিমন্যাস্ট দল উজবেকিস্তানে এশিয়ান জিমন্যাস্টিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। সেখানে বাংলাদেশের একজন খেলোয়াড় ১২তম হয়েছিল। ২০২২ সালে কমনওয়েলথ গেমস আর ইসলামি সলিডারিটি গেমসে বাংলাদেশের হয়ে অংশ নেন নিউজিল্যান্ড প্রবাসী আলী কাদের হক আর আবু সাইদ রাফি। ইসলামিক সলিডারিটির জিমন্যাস্টিকসে ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //