সুপারির খোলে সম্ভাবনার হাতছানি

সুপারি গাছের খোল (বাকল) দিয়ে গৃহস্থালির নিত্য ব্যবহারের জন্য নান্দনিক পণ্য তৈরি করছেন লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার মোহাম্মদ মামুনুর রশিদ।

বাসনকোসন, থালা-বাটি, নাস্তার ট্রে, বাচ্চাদের নানা সামগ্রী, ঘড়ি, ফটোফ্রেম, ওয়ালমেট, জুতাসহ অন্তত ৯ ধরনের পণ্য তিনি তৈরি করছেন। এরপর উৎপাদিত এসব পণ্য চলে যাচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহসহ দেশের বিখ্যাত শপিংমলগুলোতে। পরে সেখান থেকে কিনে নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানসহ বাসাবাড়িতে ব্যবহার করা হচ্ছে এ সকল পণ্য। এদিকে এ শিল্পকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়েছে কর্মসংস্থানের নতুন সম্ভাবনা।

সরেজমিনে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার কেরোয়া গ্রামে অবস্থিত ভিন্নধারার শিল্প ব্রাদার্স ইকো ক্রাফটের কারখানায় গিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে। এ ধরনের কারখানা লক্ষ্মীপুরে এটাই প্রথম।

সুপারির খোলে পণ্য তৈরির উদ্যোক্তা ও ব্রাদার্স ইকো ক্রাফটের মালিক মোহাম্মদ মামুনুর রশিদ জানান, সুপারি গাছ থেকে ঝরে যাওয়া খোল দিয়ে তার কারখানায় তৈরি হচ্ছে অন্তত ৯টি নিত্য ব্যবহার্য পণ্য। তিনি প্রথমে ২০১৯ সালে সুপারি গাছের খোল দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্য তৈরির কাজ শুরু করেন। প্রথমে তেমন সাড়া না মিললেও এখন তার উৎপাদিত এসব পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ইতিমধ্যে তার কারখানায় উৎপাদিত পণ্য দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি শুরু হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী পণ্যগুলো বিদেশেও রফতানির পরিকল্পনা রয়েছে তার।

উৎপাদিত পণ্যগুলোর মধ্যে বাসনকোসন, থালা-বাটি ও নাস্তার ট্রে স্বাস্থ্য ঝুঁকিপূর্ণ ‘ওয়ান টাইম’ প্লাস্টিক বিভিন্ন পণ্যের পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে। শতভাগ রাসায়নিক দ্রব্যমুক্ত এ পণ্যগুলো খাবার পরিবেশনের কাজে ব্যবহার করা হয়। অন্যান্য কিছু পণ্য ঘর সাজানোর কাজে সৌখিন পণ্য হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

তিনি জানান, তার কারখানায় উৎপাদিত পরিবেশবান্ধাব ও স্বাস্থ্য সম্মত এ পণ্যগুলোর চাহিদা দিন দিন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।


ব্রাদার্স ইকো ক্রাফট কারখানায় বর্তমানে সপ্তাহে ১৫ হাজার পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে। অন্যদিকে সুপারির খোলে তৈরি জুতার চাহিদাও ব্যাপক। তার ২টি কারখানায় বর্তমানে ১২জন নারী-পুরুষ শ্রমিক কাজ করছেন। সুপারি গাছের খোলকে কেন্দ্র করে এখন গ্রামীণ মানুষের আয়ের এক নতুন সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে বলে জানান উত্তর কেরোয়া গ্রামের নারী শেফালী বেগম।

স্থানীয়ভাবে জানা যায়, লক্ষ্মীপুরে প্রচুর পরিমাণে সুপারি গাছ রয়েছে। যে কারণে এ অঞ্চলে সুপারি গাছের খোল সহজলভ্য। সুপারি চাষিরা এত দিন বেশির ভাগ খোল কুড়িয়ে নিয়ে জ্বালানির কাজে ব্যবহার করতো। বর্তমানে সুপারির খোল পণ্য তৈরির কাজে ব্যবহৃত হওয়ার কারণে এর বাণিজ্যিক ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে।

খোল তৈরির শ্রমিক কামাল জানান, সারা বছরই সুপারি গাছ থেকে খোল পাওয়া যায়। তবে বর্ষাকালে খোলের পরিমাণ বেশি থাকে। তখন সারাবছর ব্যবহারের জন্য খোল সংগ্রহ করে ভবিষ্যৎ ব্যবহারের জন্য তা সংরক্ষণ করা যায়।

রায়পুর মহিলা কলেজ ছাত্রী সাদিয়া জানায়, সুপারি গাছের খোল দিয়ে তৈরি পণ্য সামগ্রী স্বাস্থ্যসম্মত হওয়ায় ও দেখতে সুন্দর হওয়ায় ইতিমধ্যে প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে তিনি এ পণ্য ব্যবহার শুরু করেছেন।

এদিকে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) লক্ষ্মীপুর জেলা কার্যালয়ের সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শাহরিয়ার খান বলেন, সাধারণ কিছু দিয়ে অসাধারণ কিছু তৈরির উদ্যোগ সুপারির খোলে পণ্য তৈরি। এ শিল্পটিকে ভবিষ্যতে আরো সম্প্রসারণে উদ্যোগ নেয়ার কথাও জানান তিনি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //