মাছ উৎপাদনে দেশে দ্বিতীয়, খুলনা বিভাগে প্রথম যশোর

খুলনা বিভাগে মাছ উৎপাদনে প্রথম স্থানে রয়েছে যশোর। বছরে জেলা থেকে মাছ উৎপাদন হচ্ছে ২ লাখ ৩০ হাজার ৪৮ টন। আর পিছিয়ে রয়েছে মেহেরপুর জেলা। সেখানে মাছ উৎপাদন করা হচ্ছে ৮ হাজার ৮৭৫ টন। বিভাগের ১০ জেলায় বছরে মাছ উৎপাদন হয়ে থাকে ৭ লাখ ১৮ হাজার ৪০৫ টন। এর মধ্যে চিংড়ি মাছ রয়েছে এক লাখ ১১ হাজার ২১৮ টন।

মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বাগেরহাট জেলায় বছরে মাছ উৎপাদন হচ্ছে এক লাখ ২১ হাজার ৩৭৩ টন, চুয়াডাঙ্গায় ১৬ হাজার ৯৫৪ টন, ঝিনাইদহে ৩৮ হাজার ৮৭৬ টন, খুলনায় এক লাখ ১০ হাজার ৯৫ টন, কুষ্টিয়ায় ৩২ হাজার ২০২ টন, মাগুরায় ১৩ হাজার ৮৪৫ টন, নড়াইলে ১৪ হাজার ২৬৬ টন এবং সাতক্ষীরায় মাছ উৎপাদন হচ্ছে এক লাখ ৩১ হাজার ৮৭১ টন। মাছ উৎপাদনে যশোর জেলা স্বয়ংসম্পূর্ণ। প্রতি বছর জেলাটিতে মাছ উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে মাছ উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ২৩ হাজার ৭৯২ দশমিক ৮৫ টন। যশোর জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮-২৯ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ২২ হাজার ১৬৮ টন এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ১৮ হাজার ৬১০ টন। 

যশোর জেলায় ২২ প্রজাতির মাছ চাষ হয়ে থাকে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রুই মাছ উৎপাদন হয়ে থাকে। গত বছর উৎপাদন হয় ৪৯ হাজার ৮৭০ দশমিক ৮৭ টন। কাতল মাছ ১৪ হাজার ৩৯৮ টন, মৃগেল ২৫ হাজার ৯৯৯ টন, সিলভারকার্প ৪১ হাজার ৫৫২ টন, পাঙ্গাস মাছ ১১ হাজার ৭৮১ টন, তেলাপিয়া ২০ হাজার ৭৯৩ টন, অন্যান্য ছোট মাছ ৫ হাজার ৯৯০ টন।

আফিল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও যশোর ১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন জানান, ২০০৮ সালে আমি প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবার পর শার্শা উপজেলার মান্দারতলা এলাকায় জলবদ্ধতা নিয়ে ভাবতে শুরু করি। এরপর মৎস্য বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিজেই গড়ে তুলি অ্যাকোয়া ফিশ ফার্ম। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে আফিল অ্যাকোয়া ফিশে নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে বিলুপ্ত প্রায় দেশীয় বিপুল মাছ উৎপাদন করা হচ্ছে। যেখানে মাছের গুণগত মান সঠিক রাখা হয়েছে। 

ঝিকরগাছা উপজেলার রঘুনাথনগর গ্রামের মৎস্য চাষি এসএস আহমেদ ফারুক জানান, তিনি ৩২ বছর ধরে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ উৎপাদন করে আসছেন। ৫২ বিঘা জমির ওপর তার মৎস্য ঘের রয়েছে। যেখানে বছরে মাছ উৎপাদন হচ্ছে কোটি টাকার। এর মধ্যে পাবদা মাছ বছরে রফতানি করি ৪০ টন। বর্তমানে আমার ঘেরে পাবদা, টেংরা, রুই ও ভেটকি মাছ আবাদ হচ্ছে। 

বেনাপোলের ফিশারিজ কোয়ারেন্টাইন অফিসার মাহবুবুর রহমান জানান, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ভারতে মাছ রফতানি হয়েছে ৩২ লাখ ৬৭ হাজার ৪৪ কেজি, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩৪ লাখ ৮৩ হাজার ৬৩০ কেজি এবং গেল ২০১৯-২০ অর্থবছরে রফতানি হয়েছে ৫২ লাখ ৪৫ হাজার ৮ কেজি। যার রফতানি মূল্য এক কোটি ৩১ লাখ ১২ হাজার ৫২০ ডলার। চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে মাছ রফতানি হয়েছে প্রায় ৩০ লাখ টন। 

যশোরের শার্শা উপজেলার সততা ফিশের স্বত্বাধিকারী আবদুল কুদ্দুস জানান, তারা পাবদা, টেংরাসহ অন্যান্য মাছ আবাদ করে থাকেন। বছরে কমপক্ষে ৫০ হাজার টন মাছ উৎপাদন হচ্ছে। 

এ ব্যাপারে যশোর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অনিচ্ছুর রহমান জানান, এখানে ৭০ হাজার ২৯২ হেক্টর জমিতে মাছের উৎপাদন হচ্ছে। জেলাটি মাছ উৎপাদনে দেশের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান দখল করে রেখেছে। প্রথম স্থানে রয়েছে ময়মনসিংহ জেলা। বছরে ৫শ’ কোটি টাকার মাছ উৎপাদন হচ্ছে যশোরে। 

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন বায়োসায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম জানান, যশোর মৎস্য চাষে অনেক আগ থেকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। এখানকার মাটি ও পানি মাছ চাষের জন্য উপযুক্ত। যে কারণে ভালোমানের মাছ উৎপাদন হয়ে থাকে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //