রোজা‍র প্রয়োজনীয় ৫টি পণ্যের দাম লাগামছাড়া

রমজান মাস আসতে এখনও মাসখানেক বাকি। কিন্তু এরই মধ্যে বাজারে বেশির ভাগ পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমূখী।

টিসিবির হিসেবে, রোজার ৫ পণ্যের মধ্যে চিনির দামই এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৫০ শতাংশ। এছাড়া বাড়াতি দাম বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন তেল, ছোলা, খেজুর ও ডাল।

অসাধু ব্যবসায়ীদের কৃত্রিম সংকটে চাপে পড়ছেন ক্রেতারা। তবে ভোক্তা অধিদপ্তরের হুঁশিয়ারি, প্রমাণ পেলে নেওয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা।

সাধারণত রমজান এলেই বাড়তে থাকে নিত্যপণ্যের দাম। কিন্তু রোজা শুরু হতে এখনো এক মাসের বেশি সময় বাকি। এরই মধ্যে রোজায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত পণ্য খেজুর, ছোলার ডাল, চিনি, সয়াবিন তেল ও ডালের দাম বেড়ে গেছে।

এক বছর আগেও সাধারণ মানের খেজুর ১৫০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এখন সেই খেজুরের দাম ২০ শতাংশ বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ টাকায়।

চিনির দাম কেজি প্রতি ১১২ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। ডলারের চড়া দাম, এলসি সংকট আর সিন্ডিকেটসহ নানা কারণে একই চিত্র রমজানের অন্যান্য পণ্যের দামেও।

এছাড়াও ডিমের দাম বেড়েছে ডজনে ১০ টাকা। ফার্মের মুরগির বাদামি ডিম গত দুই সপ্তাহ আগেও প্রতি ডজন ১২৫ টাকায় কেনা যেত, তা এখন কিনতে হচ্ছে ১৩৫ টাকা দরে। এ দর বড় বাজারের ডিমের দোকানের। তবে পাড়া–মহল্লার মুদিদোকানে গেলে দাম আরও বেশি দিতে হয়।

নাগালছাড়া দামের কারণে দেশি মুরগি ও গরুর মাংস কেনার সামর্থ্য যাঁদের নেই, তাঁদের জন্য বড় ভরসা ফার্মের ব্রয়লার ও সোনালি মুরগি। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে মুরগির দাম অনেকটা বেশি থাকছে। গতকাল মালিবাগ, নিউমার্কেট ও কাঁঠালবাগান বাজার ঘুরে দেখা যায়, ব্রয়লার মুরগি ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতা জানান, দাম কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে। সোনালি মুরগি ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। গত সপ্তাহে যা ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা ছিল।

মাছের বাজারেও স্বস্তি নেই। যেসব চাষের মাছের দাম বছরজুড়ে স্থিতিশীল থাকে, সেগুলোর দরও বেড়েছে। যেমন তেলাপিয়া মাছ সাধারণত ১৫০ থেকে ১৮০ টাকার মধ্যে পাওয়া যেত। এখন তা ২০০ থেকে ২২০ টাকা দরে বিক্রি হয়। টিসিবি রুই মাছের দামের হিসাব রাখে। তাদের তালিকায় দেখা যায়, গত বছর একই সময়ে যে রুই মাছের কেজি ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা ছিল, সেটা এখন ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়।

দেশের মানুষের প্রধান খাদ্য চালের দাম উচ্চ মূল্যে স্থিতিশীল রয়েছে। আমদানি ও আমনে ভালো ফলনও দাম কমাতে পারেনি। টিসিবির তালিকায় মোটা চালের দাম ৪৬ থেকে ৫০ টাকা লেখা রয়েছে। তবে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ভালো মানের মোটা চাল কিনতে দর পড়ছে কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। মাঝারি চালের দর ৬০ থেকে ৬২ টাকা। আর সরু মিনিকেট চাল কিনতে লাগছে ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা।

মসলার মধ্যে পেঁয়াজের মৌসুম চলছে। দাম নাগালে আছে। কেজিপ্রতি ৩০ থেকে ৪০ টাকা। দেশি রসুনের কেজি ১২০ থেকে ১৪০ টাকা। চীনা রসুন ১৮০ থেকে ২০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। বিক্রেতারা বলছেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ট্রাকভাড়া, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও সারের দাম বাড়ার কারণে পণ্যের উৎপাদন ও আমদানি ব্যয় বেড়েছে। ফলে মৌসুমের সময় দাম ততটা কমছে না, যতটা আগে কমত।

ভোক্তাদের দাবি, সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণই নেই বাজারে। অসাধু ব্যবসায়ীদের যোগসাজশে অস্থিতিশীল পণ্যের দাম। অন্যদিকে দোকানিরা বলছেন, প্রয়োজনের তুলনায় পণ্যের সরবরাহ কম।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেবে, এবছর খেজুর, ছোলা ও ডালের আমদানি কমলেও বেড়েছে চিনি ও ভোজ্যতেলের আমদানি।

ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান বলছেন, পণ্যের হাত বদলের সময় মজুত করে রাখায় তৈরি হচ্ছে কৃত্রিম সংকট। তবে, এর প্রমাণ পেলেই পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //