লাগামছাড়া চিনির দাম, রোজায় শরবত না-ও জুটতে পারে

রমজান শুরু হতে আর মাত্র ১৫ দিন বাকি। সারাদিন রোজা রেখে ইফতারে শরবত পানেই বাংলাদেশি মুসল্লিদের বেশি ঝোঁক থাকে। রমজানকে সামনে রেখে সরকার চিনি আমদানিতে শুল্কহার পাঁচ শতাংশ কমিয়েছেও। তবে একশ্রেণির ব্যবসায়ী যেন মানুষের চাহিদাকে পুঁজি করে অতিরিক্ত মুনাফা লোটার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। রমজান আসার আগেই চিনির দাম আরেক দফা বাড়ানো হয়েছে। এই মূল্যবৃদ্ধির কারণে সবকিছু ছাপিয়ে এখন গ্রাহকের নাগালের বাইরেই চলে গেছে চিনি।

আজ সোমবার (৬ মার্চ) রাজধানীর খিলগাঁও রেলগেট পাইকারি বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা গোলাম মোস্তফা এভাবেই আক্ষেপের সুরে এই প্রতিবেদকের কাছে রাজধানীবাসীর অসহায়ত্বের কথা জানালেন।

তিনি আরও বলেন, এখনই ১৬০ টাকার নিচে চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। যেভাবে চিনির দাম বাড়ছে সামনে কেজিপ্রতি ২০০ টাকা পেরিয়ে যেতে পারে। এভাবে দফায় দফায় দাম বাড়তে থাকলে রোজায় চিনি ছাড়াই শরবত বানাতে হবে। তখন তো আর সেটি শরবত থাকবে না। লবণ পানি হয়ে যাবে। একের পর এক খাদ্যপণ্যের দাম যে হারে বাড়ছে সেই হারে তো আয় বাড়ছে না।

বাজার পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সাত দিনের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে কেজিপ্রতি চিনির দাম বেড়েছে দেড় থেকে দুই টাকা। বর্তমানে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১০৮-১০৯ টাকা দরে। 

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় দাম বাড়ছে। তবে চিনি উৎপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য একেবারেই ভিন্ন। তাদের দাবি বাজারে বর্তমানে কোনো সরবরাহ ঘাটতি নেই। মিল থেকে প্রতিদিনই চাহিদা অনুযায়ী চিনি সরবরাহ করা হচ্ছে। তাদের দাবি পাইকারি বাজারে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছে করেই চিনির কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে এবং ভোক্তাদের কাছ থেকে বেশি মুনাফা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। এছাড়া মিল থেকে চিনির দাম বাড়ানো হয়নি।

নারায়ণগঞ্জের পাইকারি বাজার নিতাইগঞ্জ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ১০৮ থেকে ১০৯ টাকা দরে প্রতিকেজি চিনি বেচাকেনা হচ্ছে। যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১০৬ থেকে ১০৭ টাকা। পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বাজারে সেই চিনি বেচাকেনা হচ্ছে ১২০ থেকে ১২২ টাকা কেজি।

নিতাইগঞ্জে মাইশা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী দীপক সরকার জানান, রোজাকে সামনে রেখে বাজারে চিনির চাহিদা বেড়ে গেছে। কিন্তু সে তুলনায় মিল থেকে চিনি সরবরাহ অনেক কম। ফলে দামও বাড়ছে। এছাড়া ডলার সংকটে বিদেশ থেকে চিনির কাঁচামাল আমদানিতেও বেশি খরচ হচ্ছে। সম্প্রতি চিনি নিয়ে আসা দুটি মাদার শিপ জটিলতার কারণে পণ্য খালাস না করেই ফিরে গেছে। এটিও মূল্যবৃদ্ধিতে প্রভাব বিস্তার করেছে।

আরেক ব্যবসায়ী সাহেল আহমেদ জানান, ডিও কেটেও সঠিক সময়ে চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। চিনির মিল থেকে এক ট্রাক চিনি পেতে হলে চার থেকে পাঁচদিন বা কোনো সময় সপ্তাহও পেরিয়ে যাচ্ছে। রোজার সময় এমনিতেই চিনির চাহিদা বেড়ে যায়। ফলে শুল্ক কমানো হলেও চিনির দামে তেমন কোনো পরিবর্তন আসছে না।

আরেক ব্যবসায়ী তুষার বিশ্বাস জানান, মিল থেকে চিনি ডিও কাটা হলেও সে চিনির সরবরাহ নেই। কিন্তু আবার মিল থেকে বিশেষভাবে অর্থাৎ বেশি দামে যে ডিও কাটা হচ্ছে, সে চিনির ট্রাক কিন্তু আগে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী সাফায়েত শাকিল জানান, এক বস্তা চিনি তাদের কিনতে হচ্ছে ১১২ থেকে ১১৪ টাকা কেজি দরে। ট্রাক থেকে দোকানে বস্তা নামাতে আলাদা আরও ৫০ টাকা ব্যয় বহন করতে হচ্ছে। সবমিলিয়ে বাড়তি খরচের কারণে চিনির দাম গ্রাহকদের প্রত্যাশা অনুযায়ী কমছে না।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //