জ্বালানি তেলে বন্ধ হচ্ছে ভর্তুকি

জ্বালানি তেলে সরকারের দেওয়া ভর্তুকি শিগগিরই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-কে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে জ্বালানি বিভাগ। ফলে আমদানি করা দামেই বিক্রি হবে জ্বালানি তেল। 

আজ রবিবার (৩০ এপ্রিল) সফররত আইএমএফ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে এক বৈঠকে এমন তথ্যই জানিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। 

বৈঠকে অংশ নেওয়া এক কর্মকর্তা জানান, আইএমএফ প্রতিনিধি দলের অন্যতম আগ্রহের বিষয় ছিল জ্বালানি তেলে ভর্তুকির বিষয়টি। আমাদের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ভর্তুকি তুলে নেওয়ার হবে।

আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সংযুক্ত করে দেওয়া হবে দর। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে গেলে দাম বাড়বে, আবার কমে গেলে, কমে আসবে। এ জন্য একটি ফর্মুলা নিয়ে কাজ চলমান রয়েছে। সেপ্টেম্বর থেকে আন্তর্জাতিক বাজার দর কার্যকর হবে এটি চূড়ান্ত, তবে কতদিন পর উঠানামা করবে সে বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত হয়নি।

গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের এক বেঠকে এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই বৈঠকে দর চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে এলপি গ্যাসের দর পদ্ধতিকে মডেল চিন্তা করা হয়। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) প্রতিমাসে এলপিজির দর নির্ধারণ করে আসছে।

গণশুনানির মাধ্যমে আমদানিকারকদের খরচ ও কমিশন চূড়ান্ত করা হয়েছে। এখন প্রতিমাসে শুধু গ্যাসের দর অংশ ওঠানামা করে। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে গেলে পণ্যমূল্য বেড়ে যায়, কমে গেলে সেই অংশটুকু কমে যায়।

ডিজেল পেট্রোলের ক্ষেত্রেও এমন পদ্ধতি অনুসরণের কথা বলা হয়েছিল তখন। জাহাজ ভাড়াসহ পরিচালন খরচ এবং আমদানি ব্যয় আলাদা করা হবে। পরিচালন খরচ অপরিবর্তিত থাকবে আর, ৩ মাস পর আন্তর্জাতিক বাজারের দরের সঙ্গে কমবেশি হবে দেশের জ্বালানি তেলের বাজারদর। তখন বিষয়টি বিইআরসির মাধ্যমে করার বিষয়েও আলোচনা হয়েছিল। বিইআরসি যাতে আইনি কাঠামোর মধ্যে থেকে কাজটি করতে পারে, সে জন্য ঝুলে থাকা বিইআরসি প্রবিধানমালার সংশোধনের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। বিইআরসি আইনের আলোকে ২০১২ সালে প্রবিধানমালার খসড়া করে মন্ত্রণালয়ে জমা দিলেও ঝুলে ছিল। ঝুলে থাকা প্রবিধানমালায় প্রয়োজনে পরিমার্জন করার জন্য বিইআরসিতে ফেরত পাঠানো হয়।

বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা জ্বালানি তেলের বাজার উন্মুক্ত করার কথা চিন্তা করছি। এখানে সরকারি কোম্পানির পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও থাকতে পারে। একটি পদ্ধতি বের করার চেষ্টা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে দেশেও বাড়বে, আর কমে গেলে দেশেও কমে যাবে। সরকার জ্বালানি তেলে আর ভর্তুকি দিতে চায় না।

যদিও সরকারের ভর্তুকির হিসাব নিয়ে অনেকের দ্বিমত রয়েছে। তারা মনে করে উচ্চহারে ট্যাক্স আদায় করা হচ্ছে, অন্যদিকে বলা হচ্ছে ভর্তুকির কথা। এটা এক ধরনের ছলচাতুরির মতোই। কিছু পণ্যের ওপর ৩৪ শতাংশ পর্যন্ত ট্যাক্স-ভ্যাট আদায় করা হচ্ছে। অর্থাৎ ১০০ টাকার মধ্যে ৩৪ টাকাই ডিউটি নেওয়া হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে গেলে ট্যাক্সও বেড়ে যাচ্ছে। দামের পরিবর্তে পণ্যের পরিমাপের ওপর ট্যাক্স-ভ্যাট নির্ধারণ করার দাবি জানিয়ে আসছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। তাদের প্রস্তাব হচ্ছে তেলের একটি কাঠামো থাকবে, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে গেলেও ভ্যাট-ট্যাক্স অপরিবর্তিত থাকবে।

বর্তমানে নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে জ্বালানি তেলের দর নির্ধারণ করা হয়। একক পাইকারি বিক্রেতা হচ্ছে বিপিসি। তারা নিজেরা আমদানি করছে পাশাপাশি দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলোর উপজাত (কনডেনসেট) থেকে পাওয়া পেট্রোল, অকটেন রাষ্ট্রীয় কোম্পানি পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার মাধ্যমে বাজারজাত করে আসছে। বিপিসির তথ্য অনুযায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা ছিল ৬২ লাখ ৯৯ হাজার ৭৩০ মেট্টিক টন। খাত ভিত্তিক সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়েছে পরিবহন খাতে, ওই অর্থ বছরে ৬২.৯২ শতাংশ সমান ৩৯ লাখ ৬৩ হাজার ৭২৫ মেট্টিক টন ব্যবহৃত হয়েছে।

বৈঠক সূত্র জানায়, আইএমএফ প্রতিনিধিদল গ্যাসের দরের বিষয়েও জানতে আগ্রহ দেখায়। জবাবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গ্যাসের নতুন মূল্য কাঠামোর পরে কখনও মুনাফা করছে, আবার কখন কিছুটা লোকসান দিচ্ছে। সব মিলিয়ে এই মুহূর্তে লোকসান নেই বলা চলে। জ্বালানি তেলের মতো গ্যাসের দর নির্ধারণের কোন ইচ্ছা সরকারের রয়েছে কিনা। এ বিষয়ে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সংযুক্ত করার প্রতিক্রিয়া দেখার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এনবিআর’র বকেয়া পাওনার বিষয়েও বৈঠকে স্থান পেয়েছিল।

সকালের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ থেকে দুপুরে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে প্রতিনিধিদল।

এর আগে গত ২৭ এপ্রিল বিদ্যুৎ বিভাগের সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন প্রতিনিধিদল। মূলত আইএমএফ ঋণ প্রদানের শর্ত হিসেবে ভর্তুকি প্রত্যাহারসহ বেশকিছু সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছে। সেগুলো কিভাবে প্রতিপালন হচ্ছে তারই ফলোআপ করতে এসেছে প্রতিনিধিদলটি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //